ড. আশরাফ উদ্দিন আহমেদ | বৃহস্পতিবার, ০২ সেপ্টেম্বর ২০২১
বর্ণবাদ ও চরম অসাম্যের ভিত্তিতে স্বাস্থ্য সেবা ও স্বাস্থ্য খাতে খরচের ইতিহাস আমেরিকাতে চলে আসছে কমপক্ষে বিগত দুই শত বছর যাবত। কাঠামো ভিত্তিক বর্ণবাদ (Structural Racism) এবং সম্প্রদায়/এথনিক (ঊঃযহরপ) অসাম্য যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য সেবা ব্যবস্থায় এমন শক্ত ভাবে ভিত গেঁথেছে যে ১৯৬৪ এর সিভিল রাইটস অ্যাক্ট ও এ বৈষম্য অবস্থা নিরসন করতে পারেনি। হাসপাতালগুলোকে ১৯৬৬ সালে চালু করা মেডিকেড এবং মেডিকেয়ার প্রোগ্রাম দুটো’র ফেডারেল সহায়তার অংশ বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেয়া হলে অবস্থায় কিছুটা পরিবর্তন আসে। তবে, আমেরিকান ইন্ডিয়ান ও আলাস্কার ভূমিপুত্র বা নেটিভদের ক্ষেত্রে বিমাতাসুলভ আচরণ থেকেই যায়। স্বাতন্ত্রীকরনের (segregation) বিষদাঁত উপড়ে ফেলা এখনো সম্ভব হয়নি । কভিড-১৯ অতিমারী বা পান্ডেমিক এ সত্যকে অত্যন্ত পরিষ্কার ভাবে সামনে নিয়ে এসেছে। আক্রান্তের সংখ্যা, মৃত্যুর হার সন্দেহাতীত ভাবে শ্বেতাঙ্গ জন গোষ্ঠীর তুলনায় আমেরিকা-ইন্ডিয়ান, কৃষ্ণবর্ণ, ল্যাটিনো, হাওয়াই এবং পেসিফিক দীপপুঞ্জের আদিবাসীদের মধ্যে অনেক বেশী (দেখুন, সম্পাদকীয়, জার্নাল অব আমেরিকান মেডিক্যাল এসোসিয়েশন (Journal of the American Medical Association, August 17, 2021 p. 613)।
জনসচেনতা, প্রতিবাদ, আন্দোলন যে হয়নি তা নয়। এসবের মুখে সরকারি পর্যায়ে বেশ কিছু গবেষণা, মুল্যায়ন, রেপরত ইত্যাদি প্রণীত হয়েছে। ১৯৮৫ সরকারের স্বাস্থ্য ও হিউম্যান সার্ভিসেস বিভাগের সংখ্যালঘুদের জন্য যে অফিস সেটি থেকে সেক্রেটারির টাস্ক ফোরস ব্ল্যাক অ্যান্ড মাইনরিটি স্বাস্থ্য বিষয়ক এক যুগান্তকারী রিপোর্ট প্রণয়ন করে। হেক্লার (Heckler) রিপোর্ট নামে সমধিক পরিচিত রিপোর্ট অবহেলিত জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য সেবা উন্নত করার লক্ষ্যে একটি জাতীয় এজেন্ডা সুপারিশ করে। ২০০৩ সালে ইন্সিটিউট অব মেডিসিন Unequal Treatment শীর্ষক রিপোর্ট প্রকাশ করে। অবশেষে, বারাক ওবামা প্রেসিডেন্ট হলে সংখ্যালঘু ও স্বল্প বিত্তের লোকজনের জন্য ২০১০ সালে Affordable Care Act কে আইনে পরিণত করলে ন্যাশনাল সেন্টার অন মাইনরিটি হেলথ অ্যান্ড হেলথ ডিসপ্যারিটিস (NCMHD) রূপান্তরিত হয় ন্যাশনাল ইন্সিটিউট অব হেলথ এর আওতায় একটি ইন্সিটিউটে। স্বাস্থ্য এবং স্বাস্থ্য সেবা বিষয়ক বৈষম্য দূরীকরণের প্রধান দায়িত্ব দেয়া হয় সুনির্দিষ্ট ভাবে এ সংগঠনটিকে। তার পরে ও বৈষম্য দূরীভূত হয় নি।
বর্তমান সময়ে আমেরিকা যে চ্যালেঞ্জ, যথা কভিড-১৯, বর্ণবাদ ও সামাজিক অস্থিরতা, মানসিক ব্যাধি ক্রাইসিস, এবং অর্থনৈতিক মন্দা নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে তার পরিপ্রেক্ষিতে আশা করা গেছিল কেন্দ্রীয় সরকারের সকল উদ্যোগের ফলশ্রুতিতে অবস্থার উন্নতি হবে । আশানুরূপ তেমন কিছুই হয়নি। তবে, না থেতে পেরে লোকজন মরছেনা একথা স্বীকার করতেই হবে। বাইডেন সরকারের অত্যন্ত উদার সহায়তা প্যাকেজ এ ক্ষেত্রে দারুণ কাজ করেছে। খারাপের দিকটি হলো প্রতুল টাকা-পয়সা পেয়ে কর্মবিমুখতা নিঃসন্দেহে বেড়েছে। কভিড-১৯ এর ভয়াবহতা কিছুটা হলে ও প্রতিহত করা গেছে এ বাস্তবতা ও মেনে নিতেই হয়। তারপর ও যে তথ্যগুলো ভাবিত করে তা হলো কভিড ১৯ কিছু কিছু জনগোষ্ঠীকে মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করেছে। সাদাদের তুলনায় ল্যাটিনোদের মধ্যে মৃত্যুর হার দ্বিগুণ বেশী । তুলনামূলক ভাবে, লাটিনোরা শ্বেতাঙ্গদের তুলনায় বাঁচে কম । মৃত্যুহার প্রতি লাখে ২৮৭ বনাম ১২১।
যুক্তরাষ্ট্রে স্বাস্থ্য সেবা সম্পর্কিত ব্যাপারে এশিয়ান, হাওয়াইয়ান ও প্যাসিফিক আইলেন্ডারদের অবস্থা কিছুটা ভাল হলে ও এরা ভীষণ ভাবে এ সময়ে বর্ণ বৈষম্যের শিকার হয়েছে এবং হচ্ছে। চাইনিজ এবং দেখতে আংশিক ভাবে ও তাদের মতো দেখতে হলে তাদের পথে ঘাটে নিগৃহীত করা হচ্ছে। প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট কভিড-১৯ এর উৎপত্তি চীন থেকে হয়েছে এ বিষয়টি জোরেশোরে ঘোষণা দিলে এ হেন জঘন্য সামাজিক সমস্যার সৃষ্টি হয়। এশিয়ান-আমেরিকান, হাওয়াই , প্যাসিফিক আইল্যান্ডের আদিবাসীদের বংশধর যারা তারা বর্ণ বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন প্রতিনিয়ত। মার্চ মাস্যা আটলান্টা স্পা শুটিং এর কথা মনে আসলে ভীত-সন্ত্রস্ত না হয়ে উপায় থাকেনা। এ ঘটনায় গুলীতে নিহত ৮ জনের মধ্যে ৬ জনই ছিল এশিয়ান। বিভিন্ন প্রতিবেদনে জানা যায়, মার্চ ২০২০ থেকে মার্চ ২০২১ সময়ে ৬৬০০ সেলফ রিপোর্টেট হেট ক্রাইম ঘটনা এবং পুলিসের কাছে ফাইল করা ১৮৪৫টি ঘটনার কথা জানা যায়। (চলবে)
Posted ৭:৪৬ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০২ সেপ্টেম্বর ২০২১
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh