শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Weekly Bangladesh নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত
নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত

ইউক্রেন নিয়ে সরগরম বিশ্ব রাজনীতি

আশরাফ উদ্দিন আহমেদ   |   বৃহস্পতিবার, ০৩ মার্চ ২০২২

ইউক্রেন নিয়ে সরগরম বিশ্ব রাজনীতি

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট -এককালে যিনি বিশ্বের ভয়ঙ্কর গোয়েন্দা সংস্থা কেজিবির প্রধান ছিলেন সেই স্পাই মাস্টার বিশ্বের শক্তিধর দেশের প্রতিপত্তিশালী সব নেতাদের নাকানি চুবানি খাইয়ে দিচ্ছেন । পারমানবিক মারণাস্ত্র মজুতে বিশ্বে দ্বিতীয় স্থান অধিকারী দেশ রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন বিশ্ব জনমত অবলীলাক্রমে উপেক্ষা করে ২০১৪ সালে ক্রিমিয়া দখল করে নিয়েছেন । পূর্বেকার সীমানা অনুযায়ী রাশিয়ার মানচিত্র পুনস্থাপনে তার অভিলাষ চরিতার্থ করতে পুতিন উঠেপড়ে লেগেছেন । বড় বাঁধা যুক্তরাষ্ট্র এবং ন্যাটো জোট । চীন এবং উত্তর কোরিয়া ছাড়া তেমন কোন মিত্র নেই রাশিয়ার । ইরান সহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সিরিয়া কৌশলগত কারণে পুতিনকে সমর্থন করলে তা তেমন জোরালো নয়; আদর্শিক বন্ধন ও নেই তাদের মধ্যে । পুতিন ভাল করেই জানেন, আমেরিকা রাশিয়ার সাথে সরাসরি যুদ্ধে জড়াতে চাইবে না । রাশিয়ার মারণাস্ত্র ছাড়া ও মহাকাশে থেকে ইলেক্ট্রনিক ওয়ারফেয়ার পরিচালনা করার ক্ষমতাকে খাটো করে উপায় নেই । মিসাইল যুদ্ধের বাপ্যারে ও একই কথা খাটে । সাইভার টেকনোলজি ও গুপ্তভাবে ব্যবহারে ও রাশিয়ার পারঙ্গমতা পরীক্ষিত ।

যুক্তরাষ্ট্রের ২০১৬ ও ২০২০ সালের প্রেসিডেন্সিয়াল ইলেকশনে ও পন্থাটির অপপ্রয়োগ করা হয়েছে যথেচ্ছ ভাবে । তাছাড়া, রাশিয়া তেল উৎপাদনে ও বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে অবস্থান করছে, আমেরিকার ঠিক পরেই । আমেরিকা বিশ্বের সর্ব বৃহৎ সামরিক শক্তি নিঃসন্দেহে । ন্যাটো ও ইউরোপের অপরাপর মিত্রদেশগুলো ও ইউক্রেনের ব্যাপারে আমেরিকার সাথে আছে এমন কথাই প্রেসিডেন্ট বাইডেন নিয়তই বলছেন । শান্তির স্বপক্ষে, যুদ্ধের বিপক্ষে বাইডেনের সকল উদ্দ্যোগ নস্যাৎ করে পুতিন ইতোমধ্যেই ইউক্রেনের ডনবাস এবং লোগান্সক (Donbas and Lugansk) ইউক্রেন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া অঞ্চল ঘোষণা দিয়ে এলাকা দু’টোকে স্বায়ত্তশাসিত ইউনিট হিসেবে একতরফা ভাবে স্বীকৃতি দিয়ে সেখানে শান্তি রক্ষার অজুহাতে রাশিয়ার সেনাবাহিনী পাঠিয়ে দিয়েছেন । একই কায়দায় ইউক্রেনের আর ও অঞ্চল দখলের নীলনকশা চুড়ান্তপ্রায় । দেড় লক্ষ সুসজ্জিত সৈন্য পুতিনের ইশারার অপেক্ষায় । প্রেসিডেন্ট বাইডেন ইউক্রেন এবং ন্যাটো ও মিত্রদের সতর্ক করে দিয়েছেন এই বলে যে যে কোন সময় রাশিয়ার আক্রমণ শুরু হবে । এদিকে ইউক্রেন সরকার সারা দেশে জরুরী অবস্থা ঘোষণা করেছে । রাশিয়ার সাথে ইউক্রেনের সীমান্ত এলাকার কারকিব শহরটি থেকে লোকজনদের সরে যেতে বলেছে । এলাকাটি রাশিয়ান সৈন্যরা বিধ্বস্ত করে দেয়ার সমূহ সম্ভাবনা আছে ।


প্রেসিডেন্ট জেলেনেস্কি এবং তাঁর পররাষ্ট্র মন্ত্রী কূটনৈতিক উপায়ে সমাধানের পথ উন্মুক্ত থাকবে বললে ও আক্রান্ত হলে প্রতি ইঞ্চি ইউক্রেনিয়ান ভূমির জন্য লড়াই করবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন । জেলেনস্কি সিভিল ডিফেন্স ইউনিটগুলোকে গেরিলা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করে রাখছে। রিজার্ভ সেনাদের ও প্রস্তুত করে রেখেছেন যাতে প্রয়োজনে তাদেরকে হাসপাতাল, বিভিন্ন সংবেদনশীল স্থাপনা রক্ষনাবেক্ষন ইত্যাদি কাজে নিয়োজিত করা যায়। ইউক্রেনের প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত সেনাবাহিনী রয়েছে গুণগত বিচারে ও সংখ্যার দিক থেকে বিশ্বে ২২ তম । দীর্ঘ মেয়াদী যুদ্ধ না হলে ইউক্রেনিয় বাহিনী রাশিয়ানদের প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি করতে সমর্থ হওয়ার কথা। আফগানিস্তানের অভিজ্ঞতা তাই বলে। রাশিয়ান সৈন্যদের প্রাণহানি ও হবে প্রচুর। ট্যাাঙ্ক বিধ্বংসী মিসাইল প্রাণহানি যা কাঁধে করে ও ব্যবহার করা যায় তা রাশিয়ান ট্যাঙ্ক ও সাঁজোয়া গাড়ী বহরকে ব্যতিব্যাস্ত করে রাখবে; প্রাণহানি হবে প্রচুর। ২০১৪ সালে ক্রিমিয়া যুদ্ধের সময়ের ইউক্রেন বাহিনী এর আজকের বাহিনী এক নয় । যুদ্ধ প্রস্তুতি, রণ কৌশল এবং ফায়ার পাওয়ারে অনেক বেশী আগুয়ান । রাশিয়ান সৈন্যদের মৃতদেহ দেহের কফিন যখন রাশিয়ায় পৌঁছবে তখন এ অপ্রয়জোনীয় যুদ্ধে সন্তানদের প্রাণহানি পিতামাতা, আত্মীয়স্বজন , দেশবাসী সহজে মেনে নেবে না। তবে রাজধানী কিয়েভে যে ধ্বংসলীলা চলছে তা আর কয়েকদিন চললে ইউক্রেনের অগণিত সামরিক ও সাধারণ মানুষের প্রাণহানি হবে এ কথা নিশ্চিত ।

যুদ্ধে ইউক্রেনকে সরাসরি সামরিক সহায়তা করতে এখনো কেউ এগিয়ে আসেনি । প্রথম বা দ্বিতীয় মহজুদ্ধের সময় যেমনটি হয়েছিল তেমন হলে তৃতীয় বিশ্ব যুদ্ধ লেগে যেতে পারে । এমনটি হলে বিশ্বের জন্য পরিণীতই হবে ভয়াবহ। আসা করা যায় এমন পর্যায়ে যাওয়ার পূর্বে মধ্যস্থাতা হবে এবং সম্মানজনক সমঝোতার মাধ্যমে যুদ্ধ শেষ হবে। পুতিনের অভিলাষ যদি হয় রাশিয়ার বিভক্তি যে উপায়েই হোক পূর্ব অবস্থান ফিরিয়ে আনা তাহলে তিনি আরো আগ্রাসন চালাবেন একথা নিশ্চিত । রাশিয়ার আশেপাশের প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোকে নিষ্ক্রিয় করে নিজের বলয়ে আনার উদ্দেশ্য থাকলে ইউক্রেন পরিবর্তীতে পোল্যান্ড সহ আর কিছু প্রতিবেশী দেশের প্রতি পুতিনের শ্যেনদৃষ্টি পতিত হবে যা ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি করবে । ন্যাটো চুক্তি অনুযায়ী সদস্য একটি দেশ ও যদি আক্রান্ত হয় তা ন্যাটোর অন্যান্য দেশ আক্রমণের সমতুল্য হবে এবং সবাই তা ব্যাহত করার প্রচেষ্টায় যোগদান করতে বাধ্য। এমনটি হলে বিশ্ব ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছবে অতি দ্রুত। এমনিতেই ভ্লাদিমির পুতিন দেশবাসীর কাছে তেমন প্রিয় নন। অতি ধনী ও অভিজাত একটি বিশেষ শ্রেণী বেষ্টিত পুতিন সাধারণ মানুষের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচিত প্রতিনিধি নন; প্রিয়পাত্র ও নন।


বিরোধী দলে নেতা অ্যালেক্সি নাভালনিকে কারারুদ্ধ করে রাখলে ও তাঁর বিরুদ্ধে জনমত দুরন্ত গতিতে গড়ে উঠছে; সমাবেশ মিছিল হচ্ছে ইদানীং প্রতিদিনই। ইতিহাসের শিক্ষা হলো অত্যাচারী, স্বৈরাচারী, আধিপত্যবাদী, ক্ষমতা লিপ্সু শাসকের পতন শুধু মাত্র সময়ের ব্যাপার। ইতোমধ্যেই ইউক্রেনে আগ্রাসী ও একতরফা যুদ্ধের বিরুদ্ধে খোদ মস্কোতে জনতার বিক্ষোভ এবং শ্লোগান শুরু হয়েছে। ছয় হাজার রাশিয়ান নাগরিকে আটক করা হহেছে যুদ্ধ বিরোধী মিছিলে অংশগ্রহণ করার অভিযোগে। জার্মানি দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পর এই প্রথম কোন রাষ্ট্রকে সামরিক সাহায্য বাবদ যুদ্ধ সঞ্জামাদি ক্রয় করতে টাকা বরাদ্দ দেয়ার ঘোষণার পাশাপাশি ট্যাঙ্ক অ ট্যাঙ্ক বিধ্বংসী মিসাইল সরবরাহের প্রস্তাব দিয়েছে। ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ও যুদ্ধের সহায়তায় তহবিল বরাদ্ধের ঘোষণা দিয়েছে। ইউরোপের ১৭ তি দেশ ও এ উদাহরণ অনুসরণ করবে বলে ঘোষণা দিয়েছে। এদিকে আমেরিকার ঘোষণা আনুযায়ী অর্থনৈতিক অবরোধের নেতিবাচক প্রভাব রাশিয়ার উপর শুরু হয়েছে। পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া অবশ্য সারা বিশ্বেই অনুভূত হবে।

পুতিনের বেছে নেওয়া এ যুদ্ধের ফলাফল রাশিয়ার জন্য শুভ কিছু বয়ে নিয়ে আসবে না। নানা ধরণের প্রোপাগান্ডা যুদ্ধ, মিথ্যে ও বিভ্রান্ত সংবাদ-এ সবের ধূম্রছায়ায় আড়ালে যে সত্যটি দিবালোকের মত সত্য তা হলো- যুদ্ধ একদিন শেষ হবে, প্রচুর মানুষ মরবে দু’পক্ষেরই, অশান্ত বিশ্ব সময় নিয়ে শান্ত হবে কিন্তু যুদ্ধের যে ক্ষত তা শুকোতে অনেক দিন লাগবে। কয়েক প্রজন্ম ধরে চলতে থাকবে এ যুদ্ধের ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে নিতে, স্বজন হারানোর বিয়োগ ব্যাথা ভুলতে এবং নেতিবাচক সামাজিক, রাজনৈতিক মেরুকরণের প্রভাব কাটিয়ে উঠতে। আশার কথা, সিএনএন এর ফেব্রুয়ারী ২৭,২০২২ তারিখের সকালের খবর অনুযায়ী ইউক্রেন ডেলিগেশন বেলারুজ সীমান্তে রাশিয়ান ডেলিগেশনের সাথে আলোচনায় সম্মত হয়েছে । সারা বিশ্বের শান্তিপ্রিয় মানুষ তাকিয়ে আছে এ আলোচনার ফলাফল কি হয় তা জানার জন্য । (চলবে)


advertisement

Posted ৭:১৬ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৩ মার্চ ২০২২

Weekly Bangladesh |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

গল্প : দুই বোন
গল্প : দুই বোন

(6250 বার পঠিত)

স্মরণে যাতনা
স্মরণে যাতনা

(1303 বার পঠিত)

মানব পাচার কেন
মানব পাচার কেন

(1149 বার পঠিত)

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০  
Dr. Mohammed Wazed A Khan, President & Editor
Anwar Hossain Manju, Advisor, Editorial Board
Corporate Office

85-59 168 Street, Jamaica, NY 11432

Tel: 718-523-6299 Fax: 718-206-2579

E-mail: [email protected]

Web: weeklybangladeshusa.com

Facebook: fb/weeklybangladeshusa.com

Mohammed Dinaj Khan,
Vice President
Florida Office

1610 NW 3rd Street
Deerfield Beach, FL 33442

Jackson Heights Office

37-55, 72 Street, Jackson Heights, NY 11372, Tel: 718-255-1158

Published by News Bangladesh Inc.