ড. আশরাফ উদ্দিন আহমেদ | বৃহস্পতিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২২
বর্তমান সময়ে বিশ্বে রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণ ও যুদ্ধাবস্হার মত ভয়াবহ কোন সমস্যা বিরাজমান নেই । বিষয়টি নিয়ে লেখকের বেশ ক’টি লেখা সাপ্তাহিক বাংলাদেশ সহ বিভিন্ন গ্রন্হে প্রকাশিত হয়েছে (দেখুনঃ সামাজিক স্তরবিন্যাস ও রাজনৈতিক মেরুকরণ; ভূর্জপত্র, মার্চ ২০২২, পৃষ্ঠা ৩০-৩২; ৫৬-৫৮)। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন রাশিয়ার ভয়ংকর গোয়েন্দা সংস্হা কেজিবির প্রধান থেকে উঠে এসেছেন । এই স্পাই মাষ্টার বিশ্বের শক্তিধর সব নেতাদের নাকালি চুবানি খাইয়ে সদর্পে সাম্রাজবাদের প্রথম কাতারের নেতা হিসেবে রাশিয়াকে বিভক্তি পূর্ব অবস্হানে নিয়ে যেতে বদ্ধপরিকর। সেই লক্ষ্যে ও মানসিকতায় বিশ্ব জনমত উপেক্ষা করে ২০১৪ সালে ক্রিমিয়া দখল করে নেয়। বিশ্বে তার মিত্র বলতে চীন, সিরিয়া, উত্তর কোরিয়া ও ইরান ছাড়া তেমন আর কোন দেশ নেই। প্রশ্ন আসে তাহলে কিসের জোরে পুতিন এহেন শক্তিমত্তা প্রদর্শন করছেন । পুতিন ভাল করেই আঁচ করে নিয়েছেন যে পারমাণবিক মারণাস্র, মহাকাশ থেকে ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার পরিচালনার ক্ষমতাকে খাটো করে পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিধর রাষ্ট্র আমেরিকা ও দেখবে না। মিসাইল যুদ্ধ, সাইবার টেকনোলজি গুপ্তভাবে ব্যবহারে ও রাশিয়ার পারজ্ঞমতা পরীক্ষিত। যুক্তরাষ্ট্রের ২০১৬ ও ২০২০ সালের প্রেসিডেন্সিয়াল ইলেকশনে এ পন্হাটি ব্যবহার করা হয়েছে যথেচ্ছভাবে। তাছাড়া, তেল উৎপাদনে ও রাশিয়া বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে অবস্থান করছে, আমেরিকার ঠিক পরেই।
সন্দেহাতীত ভাবে আমেরিকা বিশ্বের সর্ববৃহৎ সামরিক শক্তি । ন্যাটো ও ইউরোপের অপরাপর মিত্র দেশসমূহ ইউক্রেনে সাথে আছে এমন কথা প্রেসিডেন্ট বাইডেন নিয়তই বলছেন । তবে যুদ্ধে সামরিক সরন্জামাদি, সরাসরি অর্থ সাহায্য ইত্যাদির সিংহ ভাগ আমেরিকাই বহন করছে । ইরানের নিত্য সরবরাহ করা দ্রোনের সাহায্যে রাশিয়া প্রতিনিয়ত ইউক্রেনের রাজধানী ও আশেপাশে যে উপর্যুপরি বিভিন্ন ইউটিলিটির উপর আক্রমণ চালাচ্ছেন তাতে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা সহ পানি সরবরাহ ব্যবস্থা চরম ক্ষতির মুখ তবে ইউক্রেনের সেনাবাহিনী ও বীর জনতা দমে যায়নি। আমেরিকা ও মিত্ররা যথাসাধ্য সহায়তা করছে । তিনশত দিন অতিবাহিত হয়ে গেলে ও সংঘাত অবসানের কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না । জেলেনেস্কী সম্প্রীতি বলেছেন যে রাশিয়া ইতোমধ্যেই এক লক্ষ সৈন্য হারিয়েছে। এই প্রচন্ড শীতে ক্ষত-ক্ষতির সংখ্যা বেডে যাবে । ইউক্রেনের পূর্ব ও দক্ষিণে যে চারটি অঞ্চল রাশিয়া দখল করেছিল এবং জবরদস্তিমূলক গণভোট অনুষ্ঠিত করেছিল সেগুলোর মধ্যে খেরসন ও জেফুজিয়া থেকে ইউক্রেনের সেনাবাহিনী রাশিয়ার সেনাদের হটিয়ে দিয়েছে ।
উল্লেখ করা যেতে পারে যে ইউক্রেনের প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত সেনাবাহিনী গুণগত ও সংখ্যার দিক থেকে বিশ্বে ২২তম । রাশিয়ার ট্যান্ক ও সাজোয়া বাহিনী প্রচুর ক্ষয়ক্ষতির মধ্য দিয়ে হাঁটতে বাধ্য হয়েছে । এখন যুদ্ধ চালাচ্ছে জোরজবরদস্তি করে সংগ্রহ করে বাহিনী । তারা তেমন প্রশিক্ষিত নয় বিধায় নামকাওয়াস্তে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে । আশা করা যায় আমেরিকা অত্যাধুনিক এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম সরবরাহ পৌঁছে গেলে রাশিয়ার রাশিয়ার ইরান সরবরাহকৃত দ্রোন তেমন কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারবেনা ।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ শুরু করার দশমাস পর প্রেসিডন্ট জেলেনেস্কী প্রেসিডন্ট জো বাইডেনর আমন্ত্রণ যুক্তরাষ্ট্র সফরে এসেছেন । দুই প্রেসিডন্ট এ সময় হোয়াইট হাউজে বৈঠকে বসেছেন । রাতে কংগ্রেসের সাথে আলোচনায় বসবেন । বাইডেন সবসময় বলে আসছেন যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনের সাথে যতদিন প্রয়োজন থাকবে । ইতোমধ্যেই কংগ্রেস ইউক্রেনকে ৬৮ বিলিয়ন ডলার দিয়েছে সামরিক, অর্থনৈতিক ও মানবিক সাহায্য হিসেবে । আরও ৪৫ বিলিয়ন ডলার দেয়া হবে অস্র সরন্জামাদির জন্য ।তাছাড়া, প্রেসিডন্ট বাইডেন ঘোষণা করছেন জরুরী ভিত্তিতে ডোনেশন হিসেবে মোবাইল প্যাট্রিয়ট মিসাইল সরবরাহ করবে ।
জার্মানীতে এ মিসাইল পরিচালনার জন্য প্রশিক্ষণ দেয়া শুরু হয়েছে । এ কার্যক্রম শুরু হলে ইরানীয় দ্রোন ও অন্যান্য মিসাইল আক্রমণ ফলপ্রসূ ভাবে প্রতিহত করা সম্ভব বলে মনে করা হচ্ছে । এদিকে, ন্যাটোভুক্ত দেশগুলো ও বসে নেই । জার্মানী, পোলান্ড, নরওয়ে সহ দেশগুলো ট্যাংক, সাজোয়া যানবাহন ও পর্য্যাপ্ত গোলাবারুদ পাঠাচ্ছে বিরতিহীন ভাবে । যুদ্ধের মোড় ঘুরে যাওয়ার লক্ষণ সুস্পষ্ট ।
Posted ১:২৭ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২২
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh