ড. আশরাফ উদ্দিন আহমেদ | বৃহস্পতিবার, ১৮ নভেম্বর ২০২১
একটি সুপ্রাচীন জনগোষ্ঠী প্রায় বিলীন হয়ে যাচ্ছে এমন আশংকা আধুনিক সভ্য , মানবতার বাণী যারা হরদম আওরায় এমন সব দেশের । প্রেসিডেন্ট ট্র্যাম্প চীনের প্রতি খুবই বিদ্বেষ ভাবাপন্ন ছিলেন। দেশটির উইঘুরদের অবদমন, এদের প্রতি যে মানবতাবিরোধী রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস মূলক নীতিমালা নিন্দায় উচ্চকণ্ঠ ছিলেন ঠিকই কিন্তু একটি উইঘরকে ও রিফুউজি হিসেবে গ্রহণ করেন নি। উদার গণতন্ত্রে বিশ্বাসী , মানবতার জয়গানে সদা উচ্চকিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন একইভাবে উইঘরদের যুক্তরাষ্ট্রে স্থান দিচ্ছেন না। উল্লেখ্য করা যেতে পারে যে তিনি চীনের সাথে সম্পর্ক উন্নত করার জন্য সচেষ্ট এরকম ধরণা অনেকেরই । গ্লাসগোতে জলবায়ু সম্মেলনে চীনের নরম সুরে তিনি বেশ প্রীত বলেই মনে হয়। মুখে যদিও বলা হচ্ছে সাংঘাতিক কড়াকড়ি ব্যবস্থা বলবৎ বিধায় উইঘরদের জন্য রিফুজি রিসেটেলমেন্ট প্রোগ্রামে অন্তর্ভুক্তিকরণ এখন অসম্ভব হয়ে পরেছে। পালিয়ে পার্শ্ববর্তী যাওয়া ও একই ভাবে দুরূহ । অন্তরাধীন ক্যাম্পে মিলিয়নের ও বেশী ধুঁকে ধুঁকে মরছে বা অসুস্থ হয়ে মৃত্যুর প্রহর গুনছে ।
এঁদের কোথাও যাওয়ার যায়গা নেই। শক্তিশালী দেশ, সামরিক দিক থেকে অতিশয় বলবান দেশটিকে শকলী সমীহ করে চলে, ভীত সন্ত্রস্ত থাকে ভারতের মত বৃহৎ আকারের পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্র ও । দালাই লামা ও তার মিত্ররা চীনের হাৎ থেকে তিব্বত বাঁচাতে পারেনি। স্বায়ত্ত শাসিত অঞ্চলের মর্যাদা দিয়েছে বললে ও সকল অর্থেই চীনের অধিকৃত পরাধীন অঞ্চল। ১২.৮ মিলিয়ন উইঘরদের জিঞ্জিয়াং অঞ্চলকে ও সরকারি ভাবে চীন জিঞ্জিয়াং উইঘর স্বায়ত্ত শাসিত অঞ্চল বললে ও সুবৃহৎ মরু সদৃশ তূলা উৎপাদনকারী অঞ্চলটি (বিশ্বের এক পঞ্চমাংশ তূলা চাহিটা এখান থেকে পূরণ হয় ; খনিজ সম্পদ, বিশেষত তেল ও গ্যাস উৎপাদনে সমৃদ্ধশালী অঞ্চলটি) কড়াকড়ি ভাবে রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত ।
রি-এডুকেশনের নামে ক্যাম্পে এদের আটকে রাখা হয়েছে এমনটিই পত্র-পত্রিকাসহ বিভিন্ন কমুনিকেশন চ্যানেল বলছে। অকথ্য অত্যাচের মধ্যে জোর করে শ্রম আদায়, নারী অধিকার লুণ্ঠন, ধর্ষণ, জন্মহার কমানো এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধি রোধ কল্পে মহিলাদের জোর করে বন্ধ্যত্বকরন এ সব কর্মকাণ্ড হরদম করা হচ্ছে। চীনের সবচেয়ে বৃহৎ সংখ্যালঘু এ সম্প্রদায়কে যে করেই হোক বশ মানানো, মুসলিম অনুশাসনে জীবন যাত্রা নির্বাহ, এমনকি প্রয়োজনে নিশ্চহ্ন করে দেয়া যাকে জেনোসাইড বলা হয় এ লক্ষ্যেই চীনের উইঘর নীতিমালা পরিচালিত। এ ব্যাপারে কোন ছাড় দিতে চীন রাজী নয়। চীনের মনোভাব পুরো আপোষহীন। চীন উইঘরদের প্রতি যে ব্যবহার করছে তা জেনোসাইডের নামান্তর বলছে আ কোথা বলছে যুক্তরাষ্ট্র; অ্যামনেস্টি এবং হিউম্যান রাইটস ওয়াচ অভিহিত করেছে মানবতা বিরোধী অপরাধ বলে তবে, কার্যত কোন প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিতে কেউই পারছে না। এ বিষয়টি নিয়ে আরও আলোচনার পূর্বে উইঘর জাতিসত্তার উন্মেষ এবং প্রায় অবলুপ্তির ইতিহাস নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা প্রাসঙ্গিক হবে বলে মনে হয় ।
আলতাই পর্বতে বসবাসকারী এ ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীটির অস্তিত্ব খ্রিস্টপূর্ব ৩০০ সালে ও ছিল বলে ইতিহাস বলে । এরা তুর্কিদের প্রায় সগোত্রীয় । মঙ্গোল খাগান চেঙ্গিস খানের (১২০৬-১২২৭) কাছে এরা আত্মসমর্পণ করলে পরবর্তীতে এদের সেনাবাহিনী ও সিভিল সার্ভিসে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এদের নিজস্ব ভাষা আছে যা তুর্কি ভাষার কাছাকাছি। মঙ্গোল ও মুঘল আমলে ( ১২০৯-১৬০০) এরা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে । উইঘুররা সেন্ট্রাল এশিয়ার রাষ্ট্র ও জনপদে বসবাসকারী জন্সাধারকে অনেকটা স্বজাতি মনে করে । বর্তমানে চীনের উত্তর- পশ্চিমের জিঞ্জিয়াং প্রভিন্সে প্রায় ১২.৮ মিলিয়ন উইঘুর বাস করছে ।
বিংশ শতাব্দীর শুরুতে এক সময় এরা স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলে ও ১৯৪৯ সালে কম্যুনিস্ট পার্টি ক্ষমতায় আসলে বলপ্রয়োগ করে উইঘুরদের নতি স্বীকার করতে বাধ্য করা হয় । চীনে ১২.৮ মিলিয়ন ছাড়া ও কাজাখস্থানে ২২৩,১০০, তুরস্কে ৬০,০০০, যুক্তরাষ্ট্র ১৫,০০০, অস্ট্রেলিয়ায় প্রায় ১০,০০০ আফঘানিস্তানে ২০০০, কানাডায় ১,৫৫৫ জন উইঘর বসবাস করছে । চীন মনে করে মুসলমান হওয়ার কারনে এরা সহিংসতার আশ্রয় নিয়ে টেররিজম এ যুক্ত হয়ে যাবে এবং বিচ্ছিন্নতা আন্দোলনে লিপ্ত হবে। এদের সংস্কৃতিকে দমিয়ে চীনের মূল কৃষ্টি ও আচার কানুন, মূল্যবোধে দীক্ষিত করার ডিফিউসন ও ইন্টিগ্রেশন প্রক্রিয়ায় আনয়নের জন্য হ্যা সম্প্রদায়ের লোকজনদের উইঘর অধ্যুষিত এলাকায় আবাসন দেয়া হয়েছে । রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে নিরন্তর প্রশিক্ষণ ও চলছে উইঘর কৃষ্টি, সংস্কৃতি তথা জাতিসত্তার লেশমাত্র থাকলে তা অবলুপ্ত করার নিমিত্তে। (চলবে)
Posted ১:৫৪ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৮ নভেম্বর ২০২১
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh