আনোয়ার হোসেইন মঞ্জু | বৃহস্পতিবার, ২১ এপ্রিল ২০২২
জন হেনরি’র মতো মার্জিত, ভদ্র, অভিজাত আমেরিকান সাংবাদিক কম পাওয়া যাবে। স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিতে আমার প্রথম কোয়ার্টারে কন্ডোলিজা রাইস এর ক্লাস নিয়েছিলাম, হেনরিও নিয়েছিল। একই ক্লাসে পড়াশোনার সময়ে ওর সাথে জমে ওঠেছিল। ওর স্ত্রী প্যাটের সাথেও। আমরা একসাথে ফ্যাকাল্টি ক্লাবে লাঞ্চ করতাম। আমাদের সাথে একবার কন্ডোলিজা রাইসকেও লাঞ্চে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম, সেদিন আরও দুই সতীর্থ স্টুয়ার্ট গেনস ও এরগুন বাবাহানও ছিল। আমরা একসাথে বেসবল খেলেছি, পিকনিকে গেছি, থিয়েটার উপভোগ করেছি। হেনরি’র বাড়ি টেক্স্রাসের স্যান অ্যান্টোনিও। মিসিসিপি স্টেট ইউনিভার্সিটির গ্রাজুয়েট। মিসিসিপি’র কয়েকটি দৈনিকে কাজ করার পর নিজ স্টেটে চলে আসে এবং “অস্টিন আমেরিকান স্টেটসম্যানের স্টেট ক্যাপিট্যাল ব্যুরো চিফের দায়িত্ব পালন করে।
আমার সাথে হেনরি ও প্যাটের সঙ্গে দ্বিতীয়বার দেখা হয় ১৭ বছর পর ২০০৭ সালের জুন মাসে। তখন হেনরি অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) এর ওয়াশিংটন ডিসি ব্যুরো’র ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স সেকশনের নিউজ এডিটর। নিউইয়র্ক টাইমসে আরেক সতীর্থ বারবারা আয়ারল্যাণ্ড জানিয়েছিল হেনরি’র তখনকার অবস্থান ও টেলিফোন নাম্বার। হেনরিকে ফোন করি, সে অত্যন্ত উচ্ছসিত হয় এবং ওয়াশিংটন ডিসিতে ওর বাড়িতে আমন্ত্রণ জানায়। আমেরিকানরা পারতপক্ষে কাউকে বাড়িতে রাত্রিযাপনের জন্য আমন্ত্রণ করে না। কিন্তু জন হেনরি ও প্যাটের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের নিবিড়তা এতটাই গভীর ছিল যে স্ট্যানফোর্ডে আমরা পরিবারের মতো বাস করতাম। প্যাট আমার স্ত্রী কামরুন নাহার মনিকে খুব পছন্দ করে।
নিউইয়র্ক থেকে বাসে সোয়া চার ঘন্টায় ওয়াশিংটন ডিসি’তে পৌছি। হেনরি’র বাড়ি অভিজাত এলাকায়, তার বাড়ির কয়েক বাড়ি পর সাবেক সেক্রেটারি অফ স্টেট ম্যাডেলিন অলব্রাইটের (এ বছর ২৩ মার্চ মারা গেছেন) বাড়ি। আমাদের এক টার্কিশ রেস্টুরেন্টে ডিনার করানোর পর রাতের ওয়াশিংটন ডিসি ঘুরিয়ে দেখালো — হোয়াইট হাউজ, ভিয়েতনাম মেমোরিয়াল, ক্যাপিটল হিল। জানতে চাইলো কন্ডোলিজা রাইসের সঙ্গে দেখা করতে চাই কিনা। কণ্ডোলিজা তখন সেক্রেটারি অফ স্টেট। কে না দেখা করতে চায়! কিন্তু আরও দু’দিন অবস্থান করতে হবে। এত সময় ছিল না। সকালে নাশতার টেবিলে ডাকে প্যাট। নাশতা শেষে বাড়ির পেছনের বাগান দেখায়, আমাদের নিয়ে ফটোসেশন করে। তাঁর অফিসের সময় হয়ে আসে। আমাদের থাকার জন্য পীড়াপীড়ি করে। কিন্তু নিউইয়র্কে আমাদের আরও কিছু কাজ আছে। বিকেলের বাস ধরবো। হেনরি’র সঙ্গে আমরাও বের হই। প্যাটও সঙ্গে আসে। এপি অফিসের সামনে হেনরি নামে। আমিও নামি, হেনরিকে আলিঙ্গন করি। কে জানে আবার কবে দেখা হবে।
এই দম্পতির কোনো সন্তান নেই। কিন্তু তাদের মতো সুখী আমেরিকান দম্পতির সঙ্গে আমার পরিচয় হয়নি। আমার একাধিক আমেরিকান সতীর্থ বউ ছেড়েছে বা স্বামী পাল্টেছে। স্ট্যানফোর্ডে বারবারা থাকতো দ্বিতীয় স্বামীর সঙ্গে, সেবার নিউইয়র্কে দেখা হলো, তখন সে তৃতীয় স্বামীর ঘরে করছে। পুলিৎজার বিজয়ী জন ওয়েস্টেনডিক (২৪ মে ২০২০ সালে মারা গেছেন) এর স্ত্রী জেনিফার স্বামীকে ত্যাগ করেছিল। আমার সঙ্গে যখন জেনির কথা হলো, আমি জানতে চাইতেই সে নিজে থেকে বললো ওর কোনো দোষ ছিল না। প্যাট ওয়াশিংটনের আরও কিছু জায়গা ঘুরিয়ে দেখানোর পর আমরা অ্যারোস্পেস মিউজিয়ামের সামনে নেমে যাই। এক মিউজিয়াম দেখেই অনেক সময় কাটে। বের হয়ে পায়ে হেঁটে আমরা আশপাশের স্থাপনা ও স্মারক দর্শন করে ম্যাপ দেখতে দেখতে বাস স্টেশনে এসে নিউইয়র্কের বাসে উঠি।
Posted ৭:৩৯ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২১ এপ্রিল ২০২২
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh