আনোয়ার হোসেইন মঞ্জু: | বৃহস্পতিবার, ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
২৩ ফেব্রুয়ারি কবি কাজী জহিরের দ্বিতীয় রিং পরানো হবে তা জানা ছিল। আগের দিনই কথা বলেছি তার সাথে। রিং পরিয়ে বাড়ি ফিরলে সন্ধ্যায় কথা বলবো ভেবেছিলাম। সারাদিন আমি বাইরে ছিলাম, সন্ধ্যার বেশ পর ফিরেছি। এসময় কাজী ফৌজিয়া ফোন করলেন, রিং পরানোর পর জহিরের বুকে ব্যথা হচ্ছিল, ইন্টারনাল হেমোরেজ এর কারণে তাকে আবার অপারেশন থিয়েটারে নেয়া হয়েছে। এমন ঘটনা সচরাচর ঘটে না। মন খারাপ হলো। একমাস আগে প্রথম রিং পরিয়ে এসেছেন, সেদিনই ফোনে তার সঙ্গে কথা হয়েছে। তেমন ব্যথাও অনুভূত হয়নি বলেছিলেন। আমার স্ত্রীকে নিয়ে ম্যানহাটানে মাউন্ট সিনাই হাসপাতালে পৌছতে পোনে দশটা বাজলো। তখনো তাকে অপারেশন থিয়েটার থেকে আনা হয়নি। মুক্তি একা ছিল। অ্যাটেনডেন্ট এসে জানালেন, হার্ট সার্জন ডা. শর্মা আমাদেরকে রোগীর অবস্থা জানাবেন।
খানিক সময় অপেক্ষার পর স্ট্রেচারে জহিরকে বের আনা হলো। তার কপালে হাত রেখে মুক্তি ও আমি জানতে চাইলাম কেমন ফিল করছেন। বুকে ব্যথার কথা বললেন। তাকে আইসিইউতে নেয়া হলো। আরো কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর ছোটোখাটো গড়নের ডা. শর্মা এসে ব্রিফ করলেন। আমরা তার বুকে ব্যথার অভিযোগের কথা বললাম। তিনি বললেন, অনেকের একটু বেশি ব্যথা হয়। ভেতরে রক্ত ঝরার কারণ হিসেবে বললেন, যে আর্টারিতে রিং পরানো হয়েছে, সেটির আশপাশের দু’একটি ছোটো শিরা ছিঁড়ে রক্তক্ষরণ হয়েছে। ভেতরের রক্ত পরিস্কার করা হয়েছে। তিনি বিপদমুক্ত। আমরা আইসিইউতে গেলাম জহিরের পাশে। কপালে হাত রেখে কথা বললাম। তার রক্তচাপ, পালস, অক্সিজেন সেচুরেশন দেখছিলাম । মাঝে মাঝেই পাশে গিয়ে অবস্থা জানতে চাইছিলাম। নার্সরা এসে পেইন কিলার দিলেন। রাত সাড়ে ১২টায় আমরা চলে এলাম।
একজন চঞ্চল, কর্মঠ ও সৃজনশীল ঘনিষ্টজনকে রোগশয্যায় দেখা বেদনাদায়ক। গভীর রাতে বাড়ি ফিরে আমার অস্বস্থিবোধ বাড়লো। প্রেসার চেক করলাম, স্বাভাবিকের চেয়ে বেশ কম। একবার প্রেসার নেমে যাওয়ায় আমাকে কুইন্স হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছিল। আমি আমার নিজের অসুস্থতা, এমনকি মৃত্যু প্রসঙ্গ নিয়ে হরহামেশাই রসিকতা করি। কিন্তু হাসপাতালের বেডে কবি জহিরের শুয়ে থাকা আমার কাজে স্বাভাবিক মনে হয়নি। সৃজনশীল মানুষদের রোগমুক্ত দেখতে ও ভাবতে ভালো লাগে। ২৪ ফেব্রুয়ারি সকালে কাজী ফৌজিয়া ফোন করলেন, জহিরকে রাত তিনটায় ভেন্টিলেশনে নেয়া হয়েছে, অচেতন করে রাখা হয়েছে। মন ভেঙ্গে গেল। হাসপাতাল ছেড়ে আসার সময় তো মনে হয়েছে, তার অবস্থা ইমপ্রুভ করছে। হে খোদা, তুমি রক্ষা করো!
অবশেষে ৩০ ঘন্টা অচেতন থাকার পর ২৬ ফেব্রুয়ারি তার জ্ঞান ফিরেছে। তাকে আবার আইসিইউতে আনা হয়েছে। শিগগিরই তাকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হবে। বাড়ি ফিরে আরোগ্য লাবৈর পাশাপাশি আবার তিনি ফিরে যাবেন তার সহজাত সৃজনশীলতায়। হাসিমুখে মুক্তিসহ কবি জহিরের ছবি দেখে স্বস্তিবোধ করেছি। জ্ঞান ফেরার পর তিনি প্রথম কবিতাটি তার ভক্ত ও শুভানুধ্যায়ীদের উদ্দেশ্যে লিখেছেন তা এখানে তুলে দিচ্ছি:
অনুভূতি
কাজী জহিরুল ইসলাম
একটি পত্র মুছে দিল নাম
সহস্র পাতা এখনও সাক্ষরিত
একটি পুষ্প ঝরে গেল আজ
কত শত ফুল এখনও প্রস্ফুটিত।
একটি সাগর গহীন বালুতে
কত সমুদ্র এখনও আবেগে ঘোলা
একটি গ্রন্থ বন্ধ হয়েছে
সহস্র বই এখনও রয়েছে খোলা।
মাউন্ট সিনাই হাসপাতাল। নিউইয়র্ক।
২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪।
Posted ১১:১৮ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh