ড. আশরাফ উদ্দিন আহমেদ | বৃহস্পতিবার, ০৫ নভেম্বর ২০২০
করোনা ভাইরাস পান্ডেমিক সারা বিশ্বে শুধু মৃত্যু ছোবল হানছে তা নয় ; অর্থনৈতিক বিন্যাসকে ভেঙে তছনছ করে দিচ্ছে। ধনী, গরিব সব দেশের আর্থিক অবকাঠামো ও বুনিয়াদ প্রায় ধ্বংসের পথে । জীবনহানির অনুষঙ্গ হিসেবে আর্থিক ও সামাজিক জীবনধারায় যে পরিবর্তন সূচিত হয়ে দীর্ঘ মেয়াদের দিকে ধাবমান তা মানবজাতির জন্য অকল্যাণকর নিশ্চিতভাবে । এ অবস্থা থেকে থেকে উত্তরণের চিন্তাভাবনা ও পরিকল্পনা নিয়ে প্রতিটি দেশের রাষ্ট্রনায়ক এবং নীতিমালা বা পলিসি প্রণেতারাই কাজ করে যাচ্ছেন । সমিস্টক ভাবে ও জাতিসঙ্গ সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠন যেমন আইএমএফ ( আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল ), সংস্থা, যেমন, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, ইত্যাদি কাজ করে যাচ্ছে পৃথিবীকে দুর্ভিক্ষ অবস্থা থেকে রক্ষা করা যায়। সাথে সাথে জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব থেকে বিশ্বের তাবৎ সৃষ্টি রক্ষা করার সুকঠিন ব্রত নিয়ে ও চিন্তাশীল মানুষ নানাধরনের বাধাবিপত্তি মোকাবেলা করে ও কাজ করে যাচ্ছেন । করোনা ভাইরাস জনিত প্যান্ডেমিক হয়তো শিগগীরই নিয়ন্ত্রণে আসবে।
বিজ্ঞানীরা, ঔষধ কোম্পানিগুলো যে ভাবে দিনরাত কাজ করে যাচ্ছে তাতে ভ্যাকসিন আবিষ্কার শুধুমাত্র সময়ের ব্যাপ্যার মাত্র ; নিরাময় করার ঔষধ ও বাজারে আসবে কিন্তু জলবায়ু পরিবতনের কুফলে অপরিশুদ্ধ বায়ু, পানি, মাটি ইত্যাদি যা মানুষ , জীবজন্তু , পশুপাখি , গাছ-পালা ইত্যাদি যাবতীয় প্রাণ বিনষ্ট হবে । জীবন-মরণ প্রশ্নের সাথে জড়িত এ সমস্যাটি সমাধানে অগ্রগতি তখনি আসবে যখন সবাই আন্তরিকতার সাথে সম্পদ ও প্রচণ্ড ইচ্ছে একসাথে করে পরিবেশ রক্ষা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক দিকগুলো প্রতিহত করতে পরিকল্পিত ভাবে কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ি । কালক্ষেপণ না করে বিশ্বকে কার্বন দূষণ থেকে মুক্ত করা অতি জরুরী । ফসিল উৎস থেকে জ্বালানির সকল প্রকার ব্যবহার বন্ধ না করতে পারলে জলবায়ু পরিবতন সমস্যার সমাধান হবেনা । কয়লা ব্যবহারের মাধ্যমে পাওয়ার প্লান্ট, শিল্পকারখানা ও অন্যান্য যাবতীয় স্থাপনা , ইঞ্জিন ইত্যাদি বন্ধ না করলে কার্বন-বিহীন বায়ুমণ্ডল ও পরিশুদ্ধ পরিবেশ ও প্রতিবেশ কল্পনায়ই থেকে যাবে , জলবায়ু পরিবর্তনের ফলশ্রুতিতে যে সীমাহীন ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে তা প্রতিরোধ করা যাবেনা ।
ইতিহাসের শিক্ষা হলো মানব সমাজ, সভ্যতা যখন দুঃসময়ে নিপতিত হয় তা প্রাণহানি ও ধ্বংসই শুধু দেখে আনে না, সংস্কারের, আমূল পরিবর্তনের সূচনা ও করে , পরিবর্তনের বীজ ও বপন করে। ক্রুসেড , দুইটি বিশ্বযুদ্ধের ধ্বংসযজ্ঞ পরবর্তী সময়েই পৃথিবীতে যুগান্তকারী সব পরিবর্তন এসেছে । নতুন নতুন আইডিয়া, আবিষ্কার, সামাজিক ও রাজনৈতিক বিপ্লব, অর্থনীতির ক্ষেত্রে ধনতন্ত্র, মিশ্র, যৌথ ব্যবস্থাপনায় উৎপাদন ও বণ্টনের বিভিন্ন কাঠামো ইত্যাদি চালু হয়েছে, পররতিত হয়েছে , বিলীন ও হয়েছে । বিজ্ঞান ও ধারনার জগতে মানুষের অগ্রযাত্রা থামেনি যদিও মুনাফার লোভে , অফুরান সম্পদের মালিকানার জন্য ব্যক্তি পর্যায়ে, কর্পোরেট পর্যায়ে, রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় অসম প্রতিযোগিতা সাধারণ মানুষকে দরিদ্র থেকে প্রায়ই নিঃস্ব করেছে । কিছু মানুষ বরাবরই এগিয়ে এসেছে সৃষ্ট জগতে অপরাপর প্রাণী ও প্রকৃতির সাথে মিলেমিশে বেঁচে থাকার জন্য মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে । সকল সমাজেই অবিবেচক, লোভী ও দুষ্ট প্রকৃতির মানুষ সবসময়েই ছিল এবং আছে , থাকবে ও যারা বৃহত্তর মানব কল্যাণের তোয়াক্ষা না করে স্বীয় ক্ষুদ্র স্বার্থ হাসিলের জন্য বিভিন্ন ধরণের হীন কাজ করে যায় । যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রেসিডেন্ট এমন চরিত্রেরই একজন হীনমন্য ব্যাক্তি ।
তিনি ক্ষমতায় থাকলে জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে কোন অগ্রযাত্রা আশা করা আকাশকুসুম কল্পনার নামান্তর । তাঁর সাথে সাথে জিওপি কর্ণধারগণ ও একসুরে সবুজায়ন বা গ্রিন ধারনা সম্বলিত আইন প্রস্তাব কয়েক বার নাকচ করেছে । কোভিড ১৯ পান্ডেমিক প্রায় আড়াই লক্ষ লোক ম্যারা যাওয়ার পর ও তাঁর এবং দলের বোধোদয় হয়নি । কার্বন উদ্গিরন হ্রাস করার চিন্তাভাবনা এদের মোটেও নেই । জলবায়ু পরিবর্তন সমস্যা সংক্রান্ত কোন ধারনা তারা বুঝতে ও চাননা ; গ্রহণ ও বাস্তবায়ন তো দূরের কথা । ২০২০ নির্বাচনের পর বোঝা যাবে যুক্তরাষ্ট্রে জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক নীতিমালা বা আইন প্রণীত ও বাস্তবায়িত হবে কিনা , দেশটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাথে একাত্ম হয়ে জলবায়ু দূষণ কমিয়ে আনতে বয়া রোধে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করবে কিনা ।
Posted ১০:৫১ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৫ নভেম্বর ২০২০
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh