ড. আশরাফ উদ্দিন আহমেদ | বৃহস্পতিবার, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২১
জো বাইডেন – কামালা হ্যারিস তাদের নির্বাচনী প্রচারণায় ঘোষণা দিয়েছিলেন যে নির্বাচিত হয়েই প্যারিস জলবায়ু পরিবর্তন চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের ফিরে যাওয়ার সকল ব্যবস্থা সম্পন্ন করবেন। নির্বাচিত হওয়ার প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন পরিবেশ সংরক্ষণ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে দু’টো গুরুত্বপূর্ণ নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেন। একটি হল প্যারিস চুক্তিতে ফিরে যাওয়া সংক্রান্ত যা সারা বিশ্বের পরিবেশবাদীদের কাছে অত্যন্ত সুখবর হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। আর একটি হল কানাডার আলবার্টা প্রদেশ থেকে জ্বালানি তেল উত্তোলন, পরিশোধনের নিমিত্তে ২,১৪৭ মাইল লম্বা পাইপ লাইন মেক্সিকো উপসাগর হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্য পর্যন্ত নিয়ে আসা। বারাক ওবামা কিস্টোন/টিসি এনারজি প্রতিষ্ঠান দুটোর পাইপ লাইন নির্মাণ কাজের আদেশ পরিবেশবাদী ও স্থানীয় আদিবাসী, পশুচারক এবং কৃষিজীবীদের সোচ্চার প্রতিবাদের মুখে নিষেধাজ্ঞা জারি করতে বাধ্য হন । ট্র্যাম্প প্রেসিডেন্ট হয়েই এ নির্দেশ তুলে নেন এবং পাইপ লাইন প্রস্তুতকারক শিল্প প্রতিষ্ঠান টি সি এনারজি’কে নির্মাণ কাজ অবিলম্বে শুরু কোর্টে নির্দেশ দেন। করোনা মহামারী সৃষ্ট আতঙ্ক ও বিধিনিষেধের সুযোগ নিয়ে তিরিশ হাজার প্রতিবাদী স্বেচ্ছাসেবকদের নিষ্ক্রিয় করে নির্মাণ কাজ পুরোদমে শুরু হয়। জো বাইডেন প্রকল্পটির কাজের লাইসেন্স বাতিল করলে পরিবেশের জন্য দারুণ ক্ষতিকারক এ কাজটি বন্ধ হয়ে যায় ।
২০২০ সাল জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে অত্যন্ত খারাপ সময় ছিল। আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়া ও কলেরেডো সহ আশেপাশের রাজ্যসমূহে বিস্তীর্ণ এলাকার বনজঙ্গল অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ছারখার হয়ে যায়। সাইবেরিয়ায় তাপমাত্রা অতিমাত্রায়, যেমনটি স্মরণকালের মধ্যে ঘটেনি , বরফ গলে বিরাট এলাকা পানিতে সয়লাব হয়ে যায়। আর্টি সার্কেলের ইউরেসিয়ান এলাকায় ২০২০ সালে উষ্ণতা এত বেশী পরিমানে ছিল যে অক্টোবর মাসের শেষ দিকে পূর্বে প্যানই বরফে রূপান্তরিত হয়নি। এর পূর্বে কখনো আমটি হোয় নি।
প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ট্র্যাম্প প্যারিস চুক্তি থেকে সরে আসার ঘটনায় পরিবেশ আন্দোলনের কার্যক্রম তহবিলের অপ্রতুলতার কারণে মুখথুবড়ে পরার সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনার দ্বারপ্রান্তে নিপতিত হয়।
উল্লখ করা যায় যে ২০২০ সালের শেষে বিশ্বে তাপমাত্রা শিল্প বিপ্লবের পরবর্তীতে ১.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে যায়। এ হার বেড়ে ২.০ সেলসিয়াসে উপনীত হলে পৃথিবী নামক উপগ্রহটির আবহাওয়া, সে যে ডাইমেন্সন থেকেই দেখা যাক না কেন , বলতে গেলে রাতারাতি পরিবর্তিত হবে। বিশেষজ্ঞদের মোটে , ২০৩০ সালের মধ্যে তাপমাত্রা বর্তমান সময়ের অর্ধেক না আনতে পারলে মানব জাতি সহ তাবৎ সৃষ্টি বিলীন হয়ে যাওয়ার মুখোমুখি পরবে। ২০২১ সালে আমরা জলবায়ু পরিবর্তন রোধে যে কর্মসূচী হাতে নেব তাঁর উপর নির্ভর করবে আমাদের অস্তিত্ব। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্টোনিও গুতাররেস ২০২০ এর ষ্টেট অফ দি প্ল্যানেট স্পিচে কোন রকমের রাখঢাক না রেখেই বলেছেন যে করোনা মহামারী এবং জলবায়ু সমস্যা Ñ এ দু চ্যালেঞ্জ কার্যকরী ভাবে মোকাবেলা না করতে পারলে বিশ্বে ধ্বংসলীলা চলতেই থাকবে এবং হোমোসেপিয়েন সহ নানান প্রজাতির জীবজন্তু , গাছপালা ইত্যাদি বিলুপ্ত হয়ে যাবে।
পৃথিবীতে বন জঙ্গলের আচ্ছাদন মারাত্মক ভাবে কমে যাচ্ছে। ১৯৯০ সাল থেকে বিশ্ব ১৭৮ মিলিয়ন হেক্টর বা ৬৯০,০০০ মাইল পরিমাণ ভূমির বনজঙ্গল সাবাড় হয়ে গেছে। ব্রাজিল , ইন্দোনেশিয়া এবং কঙ্গো এই তিনটি দেশে ফরেস্ট উদ্ধেগজনক হারে কমে যাচ্ছে। ২০২০ সালে আমাজন চিরসবুজ বনভূমি এমন ভাবে বিলীন হয়ে গেছে যা বিগত একযুগের সমষঠির চেয়ে ও বেশী । ফলে, মাটির উর্বরা শক্তি কমে যাওয়ার সাথে সাথে ভূমণ্ডলের উপরিভাগে ও বাতাসে কার্বনের পরিমাণ মাত্রারিক্ত ভাবে বেড়ে যায়। এ বছর ওয়ার্ল্ড ইকনমিক ফোরামের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১ ট্রিলিয়ন গাছ লাগাতে পারলে কার্বন ধরে রাখা এবং চুষে নেয়া সহজতর হবে। তবে , সাথে সাথে যে সমস্ত বন জঙ্গল এখনো টিকে আছে সেগুলো বাঁচিয়ে রাখা ও অত্যন্ত জরুরি। কঙ্গো ও আমাজান বেসিনে চিরহরিৎ বৃক্ষরাজি জা অবশিষ্ট আছে সেগুলো বাঁচিয়ে রাখার বিকল্প নেই। এ দুটো বনরাজিতে আরও বৃক্ষ রোপণ করা প্রয়োজন। আশা করা যায় ২০২১ সাল হবে পরিবেশ সংরক্ষণ ও জলবায়ু বিষয়ে আশা জাগানিয়া বছর।
Posted ৮:৫৮ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২১
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh