আশরাফ উদ্দিন আহমেদ | বৃহস্পতিবার, ০১ জুন ২০২৩
(শেষাংশ) : যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তণ প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মামলা-মোকদ্দমা ইত্যাকার সমস্যাবলী যেমন তাঁর প্রার্থিতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে তেমনি তাঁর স্বপক্ষে কাজ করবে এমন এমন বেশকিছু জোরালো বিষয় ও বিদ্যমান। তাঁর খুবই শক্ত ভিত হলো কট্টরপন্থী ডানের শ্লোগান গধশব অসবৎরপধ এৎবধঃ অমধরহ এবং ছঅহড়হ নামে পরিচিত রাজনৈতিক গোষ্ঠি। তাছাড়া, ২০০৯ সাল থেকেই টুইটার ব্যবহারে অভ্যস্ত ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে অনেক ফায়দা লুঠেছেন। প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন সময়ে হোয়াইট হাউজ তাঁর টুইট বার্তা অফিসিয়াল হিসেবে গণ্য করার ঘোষণা দিয়েছিল। মেয়াদ উত্তীর্ন হওয়ার শেষদিকে, জানুয়ারী ২০২১ এ তার জন্য টুইটার ব্যবহার নিষিদ্ধ ঘোষণা করার পর @ৎবধষউড়হধষফঞৎঁসঢ় এ ৮৮.৯ মিলিয়ন অনুসারী ছিলো ।
২০২২ সালে ১৯ নভেম্বর টুইটারের নতুন মালিক এলেন মাক্স টুইটার ব্যবহার পুনর্বহাল করার পরও ট্রাম্প তাঁর নিজস্ব সামাজিক মাধ্যম ঞৎঁঃয ঝড়পরধষ ব্যবহার করতে থাকেন যা এখনো অব্যাহত আছে। তাঁর মত পারজ্ঞমতা সাথে আর কোন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী নিয়মিত ভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করছেন বলে শোনা যায়নি। তাছাড়া, প্রাক্তণ প্রেসিডেন্ট সর্বদাই কন্সপিরেসি থিওরিষ্ট পরিবেষ্টিত আছেন, যারা নিত্য তাকে সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। প্রচুর বাঁধাবিপত্তি সত্বেও ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০২৪ নির্বাচনের দিকে তরতরিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। প্রাইমারীতে রিপাবলিকান দল থেকে তাঁর মনোনয়ন নিশ্চিত বলেই মনে হয়। ফ্লোরিডার গভর্ণর রন ড্যসন্টিস ভালো অবস্থানে তবে ট্রাম্পের চেয়ে পিছিয়ে আছেন। মামলা-মোকদ্দমার কারণে চরম বিপত্তির সম্মুখীণ হতে হলেও ডোনাল্ড ট্রাম্পই মনোনয়ন পাবেন মনে হচ্ছে। প্রশ্ন হলো, ডেমোক্রেটিক দল থেকে জো বাইডেন প্রার্থী হলে প্রাক্তণ প্রেসিডেন্ট কি প্রতিদ্বন্দ্বিতায় টিকতে পারবেন নাকি ২০০০ সালের নির্বাচনের মত অবস্থা হবে !
জো বাইডেন প্রার্থীতা প্রাক্তণ প্রেসিডেন্ট এর জন্য সত্যিকার অর্থেই ২০০০ সালের মত দুর্বিপাকের কারণ হতে পারে। জো বাইডেন এর সাথে প্রায় সর্বস্তরের জনতা আছে বললে তেমন ভুল বলা হবে। ঝানু রাজনীতিবিদ প্রেসিডেন্ট বাইডেন পরীক্ষিত নেতা। পূর্ববর্তী প্রশাসন থেকে তিনি একটি প্রায় বিধ্বস্ত অর্থনীতি পেয়েছেন যা কোভিডের কারণে স্হবির অবস্হায় উপনীত হয়েছিল। ভ্যাকসিনের সুষ্ঠু ও পরিকল্পিত ব্যবহার, নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠিকে উদার আর্থিক সহায়তা, প্রশংসনীয় বাজার নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি কারণে অর্থনীতিতে চরম ধস নামেনি এ কথা স্বীকার করতেই হয়। কোভিড নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি বেশ ক’টি বড়ো আকারের পুনর্গঠন কর্মকান্ড হাতে নিয়েছেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তাঁর অর্জনের তালিকা প্রশংসনীয় ভাবে দীর্ঘ এবং জনকল্যাণমুখী। জলবায়ু পরিবর্তন সমস্যা মোকাবেলায় উদ্যোগ তাঁর মতো আর কোন আমেরিকান প্রেসিডেন্ট নেননি। ডোনাল্ড ট্রাম্প তো প্রেসিডেন্ট পদ অলংকৃত করে প্রথম যে কাজটি করেছিলেন তাহলো প্যারিস চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসার ঘোষণা এবং তা কার্যকর করা। (বাকি অংশ ৪৬ পাতায়)
জো বাইডেন বনাম ডোনাল্ড
ট্রাম্প প্রার্থিতা-২০২৪
জো বাইডেন চুক্তিটিতে যোগদান করেই ক্ষ্যান্ত হননি বরং তাবৎ বিশ্বে জলবায়ু পরিবর্তন সমস্যা মোকাবেলার আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। যুক্তরাষ্ট্র সরকার বর্তমান সময়ে পরিবেশ সংরক্ষণ ও জলবায়ু পরিবর্তন খাতে কয়েক’শ বিলিয়নের কর্মসূচী হাতে নিয়েছে। এনার্জি ব্যবহারে খনিজ তেল ও কয়লার উপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনতে বহুমুখী পদক্ষেপ হাতে নিয়েছেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তাঁর প্রশাসন মেডিকেয়ার আওতাধীন সুবিধাভোগীদের কমদামে ঔষধ কেনার সুবিধে করে দিয়েছে। সড়ক অবকাঠামো উন্নয়নে বড়ো আকারের প্রকল্প হাতে নিয়েছে। সুপ্রিম কোর্টে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কৃষ্ণাঙ্গ মহিলা বিচারপতি নিয়োগ তাঁর এক অনন্যসাধারণ কীর্তি। আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইন পাস করতে পারাটা তাকে ইতিহাসে স্থান করে দিয়েছে । আফগানিস্তান থেকে সৈন্য সরিয়ে নেয়ার মাত্র ছয় মাসের মধ্যে ইউক্রেনের সাহায্যে এগিয়ে আসা এবং দেশটির স্বপক্ষে রাশিয়ার বিরুদ্ধে সফল কুটনৈতিক তৎপরতা জো বাইডেন এর পররাষ্ট্র বিষয়ক কুশলতা সপ্রমাণ করে সন্দেহাতীত ভাবে।
সমঝোতা ভিত্তিক রাজনীতি পরিচালনায় প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সমকক্ষ বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে কেউই নেই; অতীতে ও কেউ ছিলেন বলে মনে হয় না। অনেকে বলেন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা’র সাথে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেব কাজ করার সময় তাঁকে সমযোতা এবং সহযোগিতা – এ দু’টো কৌশল হরহামেশা ব্যবহার করতে হতো । বিষয়গুলোর উপর তাঁর অতুলনীয় দক্ষতা পরিপক্ক হয়েছে এ সময়ে এবং এর পূর্বে দীর্ঘসময় সিনেটর হিসেবে কাজ করার সুবাদে। তাছাড়া, জো বাইডেনের আমেরিকার বিভিন্ন জনগোষ্ঠির সাথে একটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে। প্রাক্তণ প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এর শক্তির ভিত্তি সাধারণ জনমানুষ নয়, অন্ধভাবে শক্তিমত্তা, ষড়যন্ত্র এসবে বিশ্বাস করে এমন কট্টর ডানপন্থী গোষ্ঠির উপর। জনপ্রিয়তার নিরিখে জো বাইডেন ২০২০ নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছেন; জনবিচ্ছিন্নতা প্রাক্তণ প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সত্যিকারভাবে বন্ধুবিহীন করেছে। দু’বার ইমúিচ হওয়া ডোনাল্ড ট্রাম্প মামলা-মোকদ্দমা, দলের মধ্যেকার আন্তকলহ ইত্যাদি মোকাবেলা করে ২০২৪ নির্বাচনে জিতবেন মনে করেন না রাজনীতিমনস্ক অনেকেই ।
Posted ৬:২২ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০১ জুন ২০২৩
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh