ড. আশরাফ উদ্দিন আহমেদ | বৃহস্পতিবার, ২৮ জানুয়ারি ২০২১
প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ষড়যন্ত্রের রাজনীতির নতুন খেলায় নেমেছেন । তাঁকে এ সময়ে এবং প্রেক্ষাপটে দোষ দেয়া যায়না। ইম্পিচমেন্টের খড়গ যখন উত্তোলিত প্রায় তখন নিজেকে বাঁচানোর জন্য তিনি সকল প্রকার কৌশলের সন্ধান করবেন এতে অবাক হওয়ার কিছুই নেই। ২০১৬ থেকেই তিনি ষড়যন্ত্র, দুরভিসন্ধি মূলক এবং মনগড়া তথ্য ও তত্ত্ব টুইটার ও তাঁর প্রচার মাধ্যমে বিরিতিহীন ভাবে প্রচার করে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে আসছেন। হেরে যাওয়া ইলেকশনকে অস্বীকার করেছেন এই বলে যে নির্বাচনে কারচুপি হয়েছে নইলে ৭০ মিলিয়ন ভোটে পেয়ে তিনি হারতে পারেন না; ইলেকটোরাল ভোটে বেশ ক’টি ষ্টেটে তাঁকে বিভিন্ন ছলচাতুরীর আশ্রয় নিয়ে হারানো হয়েছে এমনসব মিথ্যে কথা ও হামেশাই বলে আসছেন। তাঁর এটর্নি রুডি জুলিয়ানি ও টীম ইউ এস সুপ্রিম কোর্ট সহ বিভিন্ন ষ্টেটের কোর্টে ৩০ টির বেশী মামলা করে বারংবার হেরেছে কিন্তু ষড়যন্ত্র , কু-অভিসন্ধি থেকে সরে আসেনি। ওয়াশিংটন ডিসি’র ক্যাপিটল হল অবরোধ ও নজিরবিহীন নৈরাজ্য, হত্যাকাণ্ড, গণতন্ত্রের পাদপিঠে লুটপাট ইত্যাদির পরও ট্র্যাম্প গং এর ষড়যন্ত্র থেমে থাকেনি। হোয়াইট হাউস ছেড়ে যাওয়ার অন্তিম মুহূর্তে তাঁর প্রাক্তন প্রধান কৌশলবিদ (ংঃৎধঃবমরংঃ) স্টিফেন বেননের কৃত অপরাধ মার্জনা করে দিয়েছেন। স্মরণ করা জেতে পারে যে গত অগাস্ট মাসে নিউ ইয়র্কে ফেডারাল কোর্টে জুচ্চুরি বা ‘ফ্রড’ এর জন্য স্তিভ বেনন ও তাঁর তিন জন সহযোগীর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। অভিযোগটি ছিল যে তাঁরা ট্রাম্পের সীমান্ত দেয়াল নির্মাণের জন্য সহায়তা হিসেবে দেয়া দাতাদের এক মিলিয়ন ডলার আত্মসাত করেছেন।
এটি ছাড়া ও আরও কয়েকটি কেস তাঁর বিরুদ্ধে ঝুলে ছিল। ৫ মিলিয়ন ডলার বন্ড যার মধ্যে ১.৭৫ ক্যাশ বা সম্পত্তির বিনিময়ে তিনি অগাস্ট মাসে মুক্তি পান। তাছাড়া, প্রাইভেট বিমান , যন্ত্রচালিত জলযান ইত্যাদিতে ভ্রমণের জন্য কোর্টের পূর্ব অনুমতি নিতে হবে -এ মর্মে নির্দেশের মূলে মুচলেকা দিয়ে তবেই ছাড়া পান।
স্টীভ বেনন ২০১৬ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্র্যাম্পের প্রধান পরামর্শক ছিলেন। জেতার পরিকল্পার ছক মূলত তাঁরই দেয়া। রাজনীতিতে অখ্যাত, নবীশ, এন্তার সম্পদের মালিক (বৈধ ও অবৈধ ভাবে অর্জিত) একজন মানুষকে ছলচাতুরী, বানোয়াট কল্পকাহিনীর নায়ক বানিয়ে স্টীভ বেননের দুষ্ট জাদুর স্পর্শে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫ তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন ট্র্যাম্প। তাঁর আমলের কন্সপির্যাচি থিওরী বেশীর ভাগ বেননের দেয়া ফর্মুলায়ই করা।
এক পর্যায়ে ব্যানন প্রেসিডেন্ট ট্র্যাম্পের ছেলে ট্র্যাম্প জুনিয়র’কে রাশিয়ার কূটনৈতিকদের সাথে দহরম নিয়ে, তাঁর কন্যা ইভাঞ্জেলিকাকে অতিমূর্খ মহিলা ইত্যাদি বিশেষণে আখ্যায়িত করে সমালোচনার সূর তুললে তদানীন্তন প্রেসিডেন্টের বিরাগবাজন হয়ে চাকরী হারান। হোয়াইট হাউস এজন্য তাকে একরকম অবাঞ্ছিত হিসেবে ইনফরমালি ঘোষণা করা হয়। পরিশেষে , তিনি প্রবঞ্চনা এবং দাতাদের দেয় অর্থ আত্মসাতের মামলার গ্যাঁড়াকলে নিপতিত হন। এসবের মধ্যে ও শিয়ালের মত ধূর্ত, কৌটিলীয় কুটবুদ্ধি সম্পন্ন এই ব্যাক্তি ট্র্যাম্পের সাথে পরোক্ষ যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হন। জনশ্রুতি, নির্বাচনে হেরে গিয়ে ট্র্যাম্প তার দেয়া ষড়যন্ত্রমূলক বা কন্সপিরেচি তত্ত্ব সমানে প্রচার করে ধূম্রজাল অবস্থা সৃষ্টি করেন। ক্যাপিটল বিল্ডিং ও হল আক্রমণের আগের দিন নাকি তিনি তার পডকাস্ট ওয়ার রুমের শ্রোতাদের বলেছিলেন যে ওয়াশিংটন ডিসি’তে নারকীয় কাণ্ডকারখানা কালই দেখতে পাবেন। পারদিন, অর্থাৎ ৬ জানুয়ারী ২০২১ এ তদানিতন প্রেসিডেন্টের বক্তৃতা এবং তাঁর ফলশ্রুতিতব উগ্র জাতীয়তাবাদী অনুসারীদের ক্যাপিটল হল এ আক্রমণ, একজন পুলিশ অফিসারকে নির্দয় ভাবে হত্যা, আরও চার জনের নিহত হওয়ার ঘটনা সাড়া বিশ্ব দেখেছে। জনতাকে নির্বাচনের ফলাফল উল্টে দেয়ার জন্য ইলেকটোরাল ভোটে যেদিন আইন পরিষদের যৌথ অধিবেশনে আলোচিত হয়ে অনুমোদিত হওয়ার কথা সেদিন পেশীশক্তি প্রদর্শন করে তা রহিত করে ভোটের ফলাফল নস্যাৎ করার নীলনকশা প্রণয়নে স্টীভ বেনন ওতপ্রোত ভাবে জড়িত ছিলেন তা তার পডকাস্ট ব্রডকাস্টিং থেকে স্পষ্টতই প্রতীয়মান হয় ।
প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ট্র্যাম্পের সাথে দোসর হিসেবে স্টিপেন ব্যানন যোগ দেয়া আমেরিকার গণতন্ত্রের জন্য , প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ঐক্যের ডাক এবং সমযোতার রাজনীতির জন্য অশনি সংকেত। হিটলার যেমন নির্ভেজাল বিশুদ্ধ অ্যারিয়ান বর্ণের জার্মানদের শ্রেষ্ঠত্বের মিথ্যে তত্ত্ব দিয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ
বাধিয়েছিলেন , উগ্র শ্বেতাঙ্গবাদের অন্যতম প্রবক্তা প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ট্র্যাম্প এবং তাঁর সহযোগী স্টীভ ব্যানন জুটি যুক্তরাষ্ট্রে গণতন্ত্র, সামাজিক ঐক্য, সুস্থ রাজনীতি, সাম্য ইত্যাদি মূল্যবোধের প্রসারে দারুণ রকমের প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করবে। উল্লেখ্য করা যেতে পারে যে অসীম ক্ষমতাধর স্টীভেন কে বেনন একসময় প্রধান কৌশলবিদ ছাড়া ও প্রেসিডেন্ট ট্র্যাম্পের ২০১৬ নির্বাচনের শেষের মাসগুলোতে ক্যাম্পাইনের ও প্রধান কুশীলব ছিলেন ।
প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট আরও যাদের ক্ষমা করেছেন তাদের মধ্যে উল্লেখ্য করার মত হলেন দারুণ ভাবে উগ্র ডানপন্থী দল ঘেঁষা রজার স্টোন , পল মানাফরড ও মাইকেল ফ্লিন। উগ্র জাতীয়াবাদ ও চরম ডানপন্থী হিসেবে কুখ্যাত এসব ব্যক্তিবর্গ প্রাক্তন প্রেসিডেন্টের মন্ত্রণাদাতা ও দোসর হয়ে আগামী দিনগুলোতে গণতন্ত্রকে দারুণভাবে বিপন্ন করার অপচেষ্টায় রত থাকবেন তা বলাইবাহুল্য । বাইডেন প্রশাসনের জন্য তো বটেই আমেরিকার জন্য, গোটা বিশ্বের জন্য ও সমূহ বিপদ ডেকে আনবে । শান্তি ও সম্প্রীতি, শুধু আমেরিকায় নয়, সারা বিশ্বেই ব্যাহত হতে থাকবে অব্যাহত গতিতে ।
Posted ৯:১১ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৮ জানুয়ারি ২০২১
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh