বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

Weekly Bangladesh নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত
নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত

তথ্য সংক্রমণ মিছা কথা হাছা কথা

ড. মাহবুব হাসান   |   বৃহস্পতিবার, ০৮ এপ্রিল ২০২১

তথ্য সংক্রমণ মিছা কথা হাছা কথা

বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বছর পালনের অনুষ্ঠানমালা যেমন বর্ণাঢ্য হয়েছে, তেমনি তার আভিজাত্যিক উপস্থাপনাও মুগ্ধ করেছে দর্শক-স্রোতাদের। ওই সময়ে, করোনা ভাইরাসের প্রকোপ তেমনভাবে সক্রিয় না থাকলেও, তার ভয়ে জনজীবন থিতিয়ে ছিলো, তা বলাই বাহুল্য। আমরা ভেবেছিলাম হয়তো এই উৎসব মার খেলো করোনার কাছে। দেখলাম, সাহসী জাতির কাছে করোনা কোনো ভীতির নাম নয়। ১৯৭১ সালে আমরা যেমন অসম যুদ্ধে পাকিস্তানিদের হারিয়েছিলাম, তেমনি এবারও সেই অকতোভয় চেতনা কাজ করেছে। তবে একটাই মোটে খামতি আমার চোখে পড়েছে, তাহলে পার্টিসান ছাড়া এই জন্মশতবর্ষের উৎসবে সাধারণের অংশ গ্রহণ বলতে গেলে হয়নি। তার মানে এ-নয় যে দেশ জুড়ে আওয়ামী লীগের সাপোর্টার নেই। আছে তারা, কিন্তু তারা ছিলেন ম্রিয়মান। তাদের মুখে রা নেই। করোনা কি তাদের ভয়ের কারণ? নাকি অন্য কিছু? কে জানে? কে বলতে পারে?

কিন্তু সাধারণ মানুষ আশ্চর্য এটা দেখে যে, জন্মশতবর্ষের অনুষ্ঠানমালাও শেষ হলো, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও বিদায় নিলেন আর রাতারাতিই বেড়ে গেলো কোভিড-১৯ এর আগ্রাসী প্রকোপ। এটাকে আমরা আগ্রাসী হামলাও বলতে পারি। কারণ এতোদিন আমরা ভয়ে-ডরে গুটিয়ে থাকলেও, ভ্যাকসিনের গ্রহণের সূচনা হতেই আবরো পুরো উদ্যমে জেগে উঠছিলাম। ক্ষমতাসীন অনেক নেতাই রহস্য করে সে-সময় বলছিলেন বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের যে, এ টিকায় কাজ হবে না তাদের ! সেটা যে জোকস ছিলো তারা যেমন বুঝেছেন, তেমনি আম পাবলিকও। কিন্তু এটা কি আঁচ করতে পেরেছিলেন সরকারি দলের প্রজ্ঞাবান নেতারা যে তাদের প্রিয় মোদিজী দেশে ফিরেই বলবেন, বাংলাদেশকে আর টিকা দেয়া যাবে না। না, তারা বুঝতে পারেননি। ভারতীয় নেতার চাল যে কেমন হবে, তা বোঝার মতো ঘোড়েল রাজনীতিক হয়ে উঠতে পারেননি আজো তারা। তারা মুখের কষায় ফেনা তুলে যতোই গীত গান না কেন, মোদি কিন্তু নিজের ও দেশের স্বার্থের বাইরে এক কদমও যাবেন না, যাননি। তিস্তার পানি বন্টন চুক্তি নিয়ে টু শব্দটি করেননি মোদি। তার মানে, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি তিস্তার পানি দিতে যেমন অনীহ ছিলেন এবং আজো আছেন, মোদিজীও সেই একই পথের যাত্রী। তিনিও এ-নিয়ে কথা বলেননি। আমাদের পক্ষ থেকে কথা উঠবেই, সেটা তিনি জানতেন বলেন প্রতিপক্ষকে আগেই নিষেধ করেছিলেন, যাতে কোনো প্রশ্ন না তোলা হয়। বাংলাদেশ সরকারও ভেবেছিলেন, আজ না হোক কাল তো কথা বলতেই হবে। পৌছাতে হবে চুক্তিতেও। নাহলে, চীনের একটি অসাধারণ প্রোপোজাল আছে বাংলাদেশ অংশের তিস্তা নিয়ে। সেই প্রস্তাব বাস্তবায়ন করা হবে। এ-জন্য হাসিনা সরকার তেমন কোনো বিতর্কে যায়নি। কিন্তু তিস্তা না হোক, সরকার কি এটা ভেবেছিলো যে দিল্লি পৌছেই শতরঞ্জ উল্টে দেবেন মোদিজী? না, এতোটা ভাবেননি বাংলাদেশ সরকার। অক্সফোর্ডের অস্ট্রোজেনের ভ্যাকসিন টিকা আর দেবেন না মোদি। কি কারণ? না, কোনো কারণ নেই। এদিকে প্রথম দফায় যারা পেয়েছেন, তাদের দ্বিতীয় টিকা গ্রহণের তারিখ এসে গেছে। পয়লা এপ্রিল থেকেই দ্বিতীয় দফা টিকা গ্রহণ শুরু হয়ে গেছে। কিন্তু ভ্যাকসিনের সরবরাহ নেই। সরকার চেষ্টা চালাচ্ছেন অন্য দেশ থেকে টিকা সংগ্রহের। যদি পাওয়া যায় তাহলে দ্বিতীয় ডোজ আমরা পাবো, না পেলে।


অসমর্থিত একটি সূত্র জানাচ্ছে মহানগরের ধনবানেরা ১৮ হাজার টাকায় টিকা কিনছেন। এই সূত্র যদি সত্য হয়, তাহলে এটা আমরা বলতে পারি, যারা কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিন নিয়ে বাণিজ্যের চেষ্টা চালাচ্ছিলেন, তাদের লক্ষ্মীর দুয়ার খুলে গেলো। বাণিজ্যে বসতি লক্ষ্মী বলে যে লোকবাণীটি আজো চালু আছে, তাদের তফিলে মালকড়ি ঢোকার আয়োজন কি করে গেলেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী? যারা উচ্চ দামে ভ্যাকসিন ব্যবসা করবেন ভেবে ঘুটি সাজিয়ে বসেছিলেন, তারা যে শেষমেষ টেক্কা মেরে দিলেন রাজনৈতিক খেলার ময়দানে, সেটা আমরা বুঝতে পারি।
আরো একটি কানাঘুষা শুনতে পাচ্ছি, আমি তার আগাপাছা কিছু জানি না। কেবল শুনতে পেলাম, লোকজন বলাবলি করছে যে এতোদিন কোভিড-১৯ ভাইরাস মাননীয় মোদির ভয়ে তার সংক্রমণ ডানা ক্লোজ করে রেখেছিলো। মোদিজী চলে যাওয়ার সাথে সাথে তারা আবার উড়তে শুরু করেছে এবং বিভিন্ন ইলেকট্রনিকস মিডিয়ার খবরে শোনা গেলো কোভিড-১৯ তার রূপ পাল্টে ভয়ংকর হয়েছে। বেশি শক্তিশালীই কেবল হয়নি, সংক্রমণ শক্তিও বাড়িয়েছে। ফলে অনেক কম বয়সীরাও সংক্রমণিত হচ্ছে। সরকার আবারো কঠোরভাবে যাতাযাত নিয়ন্ত্রণের আদেশ দিয়েছেন। সামাজিক দূরত্বের যে রীতি চালু করা হয়েছিলো, তা কার‌্যকর করা হচ্ছে। সরকারি হাসপাতালে করোনা ভাইরাস ইউনিটে সিট খালি নেই। যদিও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন প্রত্যেক জেলা-উপজেলার সরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে করোনা ইউনিট খোলা হবে এবং সেখানে আক্রান্তদের সেবা দেয়া হবে। কিন্তু এক বছর কেটে গেলেও তিনি বা সরকার সেই উদ্যোগ কার‌্যকর করতে পারেননি।

প্রতিদিনেই মৃতের হার বাড়ছে। অন্য কোনো রোগে মৃতের কোনো সংবাদ মিডিয়াতে নেই। কোভিডই এখন প্রধান আজরাইল। ভয়ে কেউ আর বাসার বাইরে যাচ্ছে না। এমন কি মসজিদেও যাচ্ছেন না অনেক ধর্মপ্রাণ সালাত আদায় করতে। কিছু চালাক কিংবা অতিচালাক লোক বলছেন, মোদির বিরোধিতাকারীদের মিটিং-মিছিল আর তান্ডবলীলা থামাতে ব্যর্থ সরকার এই কোভিডের শরণ নিয়েছে। হেফাজতিদের গোড়া তো আওয়ামী পরিবারেই লুকিয়ে আছে, সেটা জনগণ জানে। তারা সেটা ভোলেনি। তারা আসল সত্য কোথায় লুকিয়ে আছে জানতে চায়। আর সেই সত্যের রূপই বা কেমন, তা দেখতে চায়। তাদের সেই চাওয়া তো থামাতে পারবেন না সরকার। কারণ সেই চাওয়া তো তাদেরই মনের ভেতরে গাঁথা।


তবে, আমি বলতে চাই, মহামারি হিসেবে কোভিডের সংক্রমণ গোটা পৃথিবীর চেহারাই যেমন পাল্টে দিয়েছে, তেমনি পাল্টে দিয়েছে সর্বগ্রাসী পুঁজির গ্রাস। বাংলাদেশ সেখানে একটি ছোটো এলাকা। আর বাংলাদেশের পুঁজির প্রথিবীর মাপও ছোটো। যারা ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন ডলারের প্রণোদনা প্রোগ্রাম নিয়েও হিমসিম খাচ্ছে, সেখানে বাংলাদেশের অবস্থাকে ভালোই বলতে হবে।
এ-দেশের লাখ লাখ মানুষ তো মারা যায়নি যে আমরা হা-হুতাশ করবো। ভোগবাদী পশ্চিমা বিশ্বের লোভের জিহ্বায় তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে এই ভাইরাস। তার ছোটো-খাটো অভিঘাতে আমাদের দেশের মতো উন্নয়নশীল দেশ অর্থনৈতিকভাবে মারাত্মক হুমকি ও ধসের মধ্যে পড়েছে বটে, তবে মচকে তো যায়নি আজো। যদিও বিশ্ব ব্যাংক বলেছে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির হার ৩.৮ শতাংশ। এই হিসাব কতোটা সত্য, সেটা বিশ্ব ব্যাংকই ভালো জানে। আর জানে বাংলাদেশ সরকার ও তার অর্থমন্ত্রণালয়। আম জনতা এর কি বোঝে? আর কতোটুকুইবা খবর রাখে। আমরা তো চোখের সামনে চোখ ধাঁধানো উন্নয়নকর্ম দেখতে পাচ্ছি। আমরা তো পদ্মাসেতু হতে দেখছি। যত টাকাই লাগুক না কেন, সে টাকা তো লোনের টাকা না, আমাদের নিজস্ব আয় থেকেই করা হলো। না হয়, আরো ২ বছর বাড়বে এ-কাজের সময় ও ব্যয়। জনগণের টাকা ব্যাংকে ফেলে রেখে দিলে তো ক্ষতি! লুটেরা হ্যাকাররা তা লুটে নিয়ে যায়। সেটা টাকা উদ্ধার করা যায় না। আবার বাংলাদেশ ব্যাংকের সেই কাগজপত্রও পুড়ে যায় গায়েবি কারবারে। এই সব ধকল সহ্য করা কঠিন। তার চেয়ে পদ্মা সেতু, ঢাকা মহানগরে মেট্রো প্রজেক্ট, ঢাকা টু চট্টগ্রামে এলিবেটেড হাইস্পিড রেলওয়ে নির্মাণ, চোখ ধাঁধানো পরিকল্পনা। পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ, হাইওয়ে নির্মাণ, গোটা দেশব্যাপী কর্মযজ্ঞের সমারোহ আমাদের ভুলিয়ে দিচ্ছে সরকারের দোষ-ত্রুটি আর মাত্রাতিরিক্ত ব্যয়ের হিড়িক। না, আমরা এটাকে ব্যায়ের হিড়িক বলবো না, বলবো উন্নয়নের জোয়ার। এতে সুবিধা অনেক। ইতিহাসের খেরো খাতায় সরকারের উন্নয়নযজ্ঞের নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। তবে, তার পাশে কালো কালিতে এবড়ো-খেবড়ো হাতের লেখায় লেখা থাকবে জনগণের কষ্টার্জিত অর্থের বেহিসাবি অপচয়।

তা, মানুষ এটা বলবেই। কারণ, মানুষ তো আর র‌্যাশনাল নয়। কোনো যুক্তিই তারা মানে না। তাদের স্বার্থে তারা বলবে, হাসিনার ১২ বছরে কতো ক্ষতি হয়েছে। আবার হাসিনা সরকারের পক্ষের লোকেরা উন্নয়নটা দেখবে, অতিমাত্রায় খরচ দেখবে না। আসলে আমাদের স্বভাব মনটাই।


আমরা ভালোটাকে ভালো বলতে চাই না। খালি দোষ দেখি, দোষ খুঁজে বেড়াই। এই চেতনা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। না হলে মুক্তি নেই।

advertisement

Posted ১১:০৬ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৮ এপ্রিল ২০২১

Weekly Bangladesh |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

গল্প : দুই বোন
গল্প : দুই বোন

(6279 বার পঠিত)

স্মরণে যাতনা
স্মরণে যাতনা

(1306 বার পঠিত)

মানব পাচার কেন
মানব পাচার কেন

(1151 বার পঠিত)

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০  
Dr. Mohammed Wazed A Khan, President & Editor
Anwar Hossain Manju, Advisor, Editorial Board
Corporate Office

85-59 168 Street, Jamaica, NY 11432

Tel: 718-523-6299 Fax: 718-206-2579

E-mail: [email protected]

Web: weeklybangladeshusa.com

Facebook: fb/weeklybangladeshusa.com

Mohammed Dinaj Khan,
Vice President
Florida Office

1610 NW 3rd Street
Deerfield Beach, FL 33442

Jackson Heights Office

37-55, 72 Street, Jackson Heights, NY 11372, Tel: 718-255-1158

Published by News Bangladesh Inc.