ড. আশরাফ উদ্দিন আহমেদ | বৃহস্পতিবার, ১৯ নভেম্বর ২০২০
বর্তমান সময়ে যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন অঙ্গনে বড় বেসামাল অবস্থায় নিপতিত। রাজনৈতিক ফ্রন্টে চরম বিশৃংখল অবস্থা। প্রেসিডেন্ট কে হচ্ছেন এ প্রশ্নের চূড়ান্ত সুরাহা হয়ে ও হচ্ছে না। এসোশিয়েটেট প্রেস, ফক্স নিউজ, সিএনএন এবং এবিসি’র মত সংবাদ মাধ্যম ও টিভি চ্যানেল জো বাইডেন জয়ী হয়েছেন বলে ঘোষণা দিলে ও প্রেসিডেন্ট ট্র্যাম্প তা মেনে নেন নি। ফলাফল চ্যালেঞ্জ করে অনেকগুলো মামলা করেছে তাঁর আইনজীবিরা। বেশীর ভাগ মামলায় হেরে গেলে ও জো বাইডেনের বিজয়কে শ’ বছরের ও বেশী সময়ের প্রথা ও রীতি অনুযায়ী স্বীকৃতি দেননি আজ পর্যন্ত। এদিকে নির্বাচনের দু’সপ্তাহের ও বেশী সময় পার হয়ে গেছে। অবশ্য এ মাসের শেষ তারিখ পর্যন্ত বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের স্টেট সেক্রেটারিগণ পূর্ব নির্ধারিত ক্যালেন্ডার অনুযায়ী সারটিফাই করার কাজ শুরু করে দিয়েছেন। নভেম্বর মাসের ৩০ তারিখের মধ্যে এ প্রক্রিয়া অবশ্যই শেষ করতে হবে। স্টেট পর্যায়ে আনফেইথফুলের ঘটনা না ঘটলে আশা করা যায় নির্বিঘ্নে প্রত্যয়ন কাজ সম্পন্ন হবে । তবে সমস্যা পরবর্তী ধাপে হতে পারে যখন কংগ্রেসের অধিবেশনে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য উত্থাপিত হবে । এ প্রেসিডেন্টের আমলে কিছুই নিশ্চিত করে বলা যায় না । প্রেসিডেন্ট ট্র্যাম্প ভোটে কারচুপি ও ভোটে প্রদান এবং গণনায় বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম হয়েছে অজুহাতে কোর্টের শরণাপন্ন হয়েছেন। বেশীর ভাগ কেসে হেরে গেলে ও কোথা ও একটা অন্য রকম হলেই ঝামেলা সৃষ্টি করতে তৎপর হবেন তিনি, তাঁর দল ও সমর্থক গোষ্ঠি । গৃহযুদ্ধের মত ভয়াবহ না হলেও রায়ট সদৃশ কিছু ঘটলে তা গণতন্ত্রকে যেমন বিপন্ন করবে তেমনি বিশ্ব অঙ্গনে যুক্তরাষ্ট্রের ভাবমূর্তি দারুণভাবে ক্ষুণ্ণ করবে, আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ করবে। বিশ্বশান্তি মারাত্মক ভাবে বিঘ্নিত হলে ও অবাক হওয়ার কিছু থাকবেনা। জো বাইডেন দায়িত্ব গ্রহণ করে হোয়াইট হাউসে অধিষ্ঠিত হলে তবেই শান্তির সুবাতাস বইতে থাকবে এ দেশে এবং বিশ্ব চরাচরে।
জো বাইডেন-কামালা হ্যারিস ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার উপর নির্ভর করবে কোভিড-১৯ এর অপ্রতিরোধ্য বিস্তার ও ভয়াবহতা কতটা প্রতিহত করা সম্ভব। প্রেসিডেন্ট ট্র্যাম্পের যে নিষ্ক্রিয়তা, বিজ্ঞানকে অস্বীকার করার প্রবণতা, সর্বোপরি হামবড়া মানসিকতা এবং আত্মরম্ভিতা তার ঠিক বিপরীত
জো বাইডেন। ৮ বছর ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতার বাইরে ও কংগ্রেসে প্রায় ৩০ বছর কাজ করেছেন। প্রয়োজনে অন্য দলের সাথে মতৈক্য প্রতিষ্ঠা করে কাজ সুসম্পন্ন করতে তিনি সিদ্ধহস্ত । পররাষ্ট্র বিষয়ক দায়িত্ব ও তিনি এ কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে পালন করেছেন । বারাক ওবামার সময় ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে ইউরোপীয় কয়েকটি দেশের পররাষ্ট্র বিষয়ক জটিল সমস্যাবলী তিনি সমাধান করতে পারঙ্গমতা প্রদর্শন করেছেন । কামালা হ্যারিস একজন দক্ষ আইনজীবী , ক্যালিফোর্নিয়ার মত বৃহৎ অঙ্গ রাজ্যের এটর্নি জেনারাল এবং একজন ঝানু সিনেটর । তাঁর গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নাতীত । ইতোমধ্যে তাঁরা হোয়াইট হাউস টাইম যাদের বাছাই করেছেন তাঁরা অত্যন্ত দক্ষ এবং কুশলী। দেশপ্রেমে ও তাঁরা পরীক্ষিত । ক্ষমতা হস্থান্তর বাধাবিঘ্ন ছাড়া সম্পন্ন হলে আশা করা যায় ইতোমধ্যেই প্রণীত পরিকল্পনা অনুযায়ী কোভিড ১৯ মনিটরিং টিম পান্ডেমিকের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধে নামে যাবে।
জলবায়ু পরিবর্তন ফ্রন্টে প্রেসিডেন্ট ট্র্যাম্প জে আঘাত হেনেছেন তা ভিন্ন খাতে নিয়ে যাওয়া তত কঠিন হবে না কারণ জো বাইডেন প্যারিস চুক্তিতে তাঁর দৃঢ় মনোভাবের কথা খোলাখুলি ভাবে প্রকাশ করেছেন। দলের অভ্যন্তরে পলিসি ও কৌশল নিয়ে কিছুটা ভিন্ন মতামত থাকলে এর আশু প্রয়জনিতা নিয়ে কারো দ্বিমত নেই। তবে , কয়লা ও তৈল শিল্পের পাওয়ারফুল কার্টেলকে যে ভাবে প্রলুব্দ করে একত্রীভূত করেছে তা নিরপেক্ষ করা কঠিন হবে। স্বার্থ এবং লোভ এক্ষেত্রে পরিবেশ প্রশ্ন থেকে বেশী বিবেচ্য হবে। প্রেসিডেন্ট ট্র্যাম্প জানুয়ারী মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে আর্কটিক অঞ্চলে সুবিস্তৃত মেরুভুমি (যা আলাস্কার জীব-জন্তু তথা প্রকৃতির জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে) তা তেল শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যাক্তি/কোম্পানির কাছে লীজ দেয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করছেন এবং সে মোতাবেক সিদ্দান্ত বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া ও নাকি শুরুর পথে। এতে যে সীমাহীন ক্ষয়ক্ষতি হবে তা থেকে উত্তরণ কয়েকশ বছরে ও হবে না, পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা এমনটিই বলছেন। ফসিল জ্বালানির ক্ষেত্রে স্বনির্ভরতা অর্জনের জন্য, তেল শিল্পে জড়িতদের আরও বিত্তবান হতে সহায়তা করতে এহেন হঠকারী সিদ্দান্ত যুক্তরাষ্ট্রকে পরিবেশ ফ্রন্টে দরিদ্রতর করবে নিঃসন্দেহে।
Posted ১০:৪৬ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৯ নভেম্বর ২০২০
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh