আশরাফ উদ্দিন আহমেদ : | বৃহস্পতিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
(দ্বিতীয় পর্ব) : পরিবার কাঠামো এবং ধারণায় ও বিগত দুই আড়াই বছর যাবত যে পরিবর্তন ঘটেছে তা রীতিমতো বৈপ্লবিক। যৌথ ও পুরুষতান্ত্রিক পরিবার ব্যবস্থা এখন অতীতকালের বিষয়, বিশেষত পশ্চিমা সমাজ ব্যবস্থায়। বিশ্বায়ন, যোগাযোগ মাধ্যমে যুগান্তকারী পরিবর্তন, দ্রুত পরিবর্তনশীল শ্রমবিভাজন ইত্যাদি নানাবিধ ফ্যাক্টর পরিবার কাঠামোকে আলোড়িত করছে প্রবলভাবে। মানুষে আয়ুষ্কাল বেড়েছে যা নারীদের ক্ষেত্রে পুরুষদের চেয়ে বেশী তাও এ পরিবর্তনকে প্রভাবিত করেছে। মানুষে মানুষে, মানুষে সংগঠনে বিভিন্ন ভাবে সম্পর্কে নানান ধরণের জটিলতা ও সিম্পল সমাজ কাঠামোর তুলনায় অনেক বেশী। ডিজিটাল প্রযুক্তি এসব সম্পর্ককে ভিন্নতর পর্যায়ে নিয়ে গেছে। পরিবার কাঠামোর ছত্রছায়া এখন আর তেমন আবশ্যিক নেই । এর শক্তিমত্তা বিলীয়মান। এমনকি গতানুগতিক কৃষিনির্ভর গ্রামীন সমাজের ক্ষেত্রেও।
পরিবার কাঠামোতে পরিবর্তন স্বামী-স্ত্রী বা পুরুষ-মহিলার সম্পর্ককে ঘিরে আবর্তিত হয়ে বর্তমান পর্যায়ে পৌঁছেছে । এখন পৃথিবীর অনেক দেশে ‘সেম সেক্স’ পার্টনারশিপ আইনসিদ্ধ করা হয়েছে। বিবর্তনবাদ অনেকটা এরকমঃ প্রাচীন রোমান সভ্যতায় পিতা মেয়ের ব্যবস্থা করতেন। এ ব্যাপারে পিতার কথাই শেষ কথা। অন্যথায় কঠোর শাস্তি দেয়া হতো। সন্তান-সন্ততি বৈধ বলে গণ্য হতো পিতার ব্যবস্থানুযায়ী বিয়ে হলে। একই প্রথা ইউরোপে মধ্যযুগে ও প্রচলিত ছিলো। বিবাহ সামাজিক, ধর্মীয় বিধান ও রীতিনীতি অনুযায়ী সম্পন্ন হতো। রোমান্স ও প্রেমের বিয়ে বা রোমান্টিক প্রেম নতুন কিছু বা নভেল্টি হিসেবে গণ্য হতো। এ ধরণের সম্পর্ক স্থাপনে নারী পুরুষকে সাহসী হতে হতো । সহ্য করতে হতো নিন্দা, সমাজচ্যুতি ইত্যাদি শাস্তি। প্রচলিত নিয়ন্ত্রণ কাঠামো (পরিবার, গিল্ড, চার্চ, রাষ্ট্র) এ ধরণের অপরাধের জন্য শাস্তির ব্যবস্থা করতো। এমনকি রাজা ও বাধ্য হতেন সিংহাসন ত্যাগ করতে। অন্য কথায়, ধর্মীয় বিশ্বাস, মূল্যবোধ ও সংস্কৃতি যা যা রোমান, গ্রীক এবং খ্রীষ্টিয় অনুশাসন থেকে তা মধ্যযুগের ইউরোপে পালিত হতো কঠোরভাবে।
মুক্তচিন্তার অনুকূলে সামাজিক আন্দোলন যা Age of Reformation নামে অভিহিত তার ফলশ্রুতিতে বিবাহ ও নারী-পুরুষ সম্পর্কের ক্ষেত্রে উদার মানসিকতার স্ফুরন ঘটায়। বিবাহ প্রতিষ্ঠান হিসেবে নারী-পুরুষের মধ্যে সংগী বা কম্পেনিয়নশিপ সম্পর্ক সৃষ্টিতে সবচেয়ে বেশী অবদান রাখে- এমন ধারণা ইউরোপে সংস্কার আন্দোলন ও রেঁনেসা বা এইজ অব এনলাইটেন্টমেন্ট সময় থেকে। বিংশ শতাব্দীর আমেরিকায় নারী-পুরুষ সম্পর্কটি সংগী-সাথী বা কম্পেনিয়নশিপ ছাড়া অন্য কিছুতে তেমন বাঁধনযুক্ত ছিলো না। একই লিঙ্গের মধ্যে বিবাহ বা সম্পর্কে বৈধতা আইনসিদ্ধ হয়ে গেলে পরিবার সংগঠনের আবশ্যিকতা এখন আর আগের মতো নেই। অনেকটা বাঁধনমুক্ত বা রশি বিচ্ছিন্ন প্রতিষ্ঠান হিসেবে টিকে আছে, এই যা । (চলবে)
Posted ৪:০৭ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh