আশরাফ উদ্দিন আহমেদ | বৃহস্পতিবার, ০২ মার্চ ২০২৩
(তৃতীয় অংশ) : বেশীদিন আগের কথা নয়। যৌথ পরিবার, পিতৃতান্ত্রিক সমাজ এবং লিঙ্গ-ভিত্তিক শ্রমবিভাজন এ রকম কাঠামোই ছিল বলতে গেলে সার্বজনীন। দাম্পত্য সম্পর্ক ছিল কড়াকড়িভাবে নিয়ন্ত্রিত। স্ত্রী ঘরের সব কাজ গুছিয়ে শুতে গেলে তবেই স্বামীর সাথে দেখা হতো। তাও বলতে গেলে শব্দহীন নীরবতায়, কারণ সন্তান সন্ততি নিজেদের ঔরষজাত ছাড়াও অন্যান্য রক্তের সম্পর্কিতদের সবাই নামমাত্র পর্দা করে একত্রেই থাকতে হতো বিশেষত গ্রামে বা শহরে স্বল্পবিত্ত ও নিন্ম মধ্যবিত্ত পরিবারেও। সোজা কথায়, পিতৃপ্রধান সনাতন সময়ে নারীরা যে দাম্পত্য জীবনের অংশীদার ছিল তা ছিল নিতান্তই একপেশে। পুরুষ কর্তৃত্বে স্ত্রীজাতি নিগৃহীত জীবন যাপন করবে একটি নির্দিষ্ট এবং নিয়ন্ত্রিত সীমারেখার মধ্যে তাই ছিল বিবাহ সম্পর্কের সংস্কৃতি। সকাল-সন্ধ্যা দৈনন্দিন গৎবাধা গৃহস্থালির কাজ, সন্তান জন্মদান ও লালন পালন এর বাইরে নারীদের পদচারণা ছিল না বলল্লেই চলে।
স্বামী বা পরিবারের পুরুষ প্রধানের আদেশ-নির্দেশ সকল অবস্থাতেই শিরোধার্য -এমনতরো মুল্যবোধ মধ্যযুগ পর্যন্ত বিদ্যমান ছিল। বর্তমান সময়ে দম্পতিদের মাঝে খোলামেলা প্রেম-সোহাগের যে সম্পর্ক তা নেহাতই আধুনিক সময়ের। তবে এ সম্পর্কের গতি-প্রকৃতি অতি সাম্প্রতিক সময়ে ভিন্ন মোড় নিচ্ছে। বিবাহিত মহিলাদের অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা আনার জন্য প্রচেষ্টায় ঘরের বাইরে কাজ করার যে তাগিদ তা অচিরেই অবাধ স্বাধীনতা ভোগের সুযোগ এনে দেয়।
নারীমুক্তির এমন সুসময় মোটামুটি সার্বজনীন ভাবে এবং এমন হারে অতীতে দেখা যায়নি। বৈধ বিবাহ সম্পর্ক স্হাপনের তোয়াক্কা অনেক শিক্ষিত কর্মজীবি নারীরা করেন না। অনেক সমাজত্ত্ববিদ মনে করেন বিবাহ বিচ্ছেদের হার আশংকাজনক ভাবে বেড়ে যাওয়ায় পেছনে খোলামেলা স্বাধীন জীবন যাপনের স্পৃহা কাজ করে। তবে এ অবস্থায় পৌঁছতে অনেক আন্দোলন ও সংস্কারমূলক কাজ করতে হয়েছে। সাইমন দ্য বোভার তার বিখ্যাত গ্রন্থ প্রকাশ করেন ১৯৪৯ সালে।
এটি ১৯৫৬ সালে ইংরেজি ভাষায় অনূদিত হলে বিশ্বে সাড়া পরে যায়। তিনি ও তার সহযোগী দার্শনিক জ্যা পল সাত্রে ফ্রান্সে অস্তিত্ববাদ এবং নারীমুক্তি আন্দোলনের যে জোয়ার শুরু করেছিলেন তা অচিরেই সারা বিশ্বে নবজাগরণের জন্ম দেয় । দি সেকেন্ড সেক্স গ্রন্থের ভূমিকায় প্রারম্ভিক উক্তি “One is not born a woman, one becomes one নারীমুক্তি আন্দোলনের ইতিহাসে জ্বলজ্বল করবে অনাদিকাল । প্রায় সমসাময়িক সময়ে মার্গারেট স্যান্গার (Margaret Sanger) দরিদ্র বিবাহিত মহিলাদের সন্তান জন্মদানে গর্ভপাত সমস্যা যা নিত্য ঘটত তা থেকে পরিত্রানে উপায় হিসেবে জন্ম নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার স্বপক্ষে লেখালেখির সাথে সাথে সামাজিক আন্দোলন শুরু করেন।
ফলশ্রুতি হিসেবে প্ল্যানড পেরেন্টহুড ফেডারেশন এর সৃষ্টি হয়। আধুনিক জন্মনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার প্রধান সুপারিশকারী ও জননী এ সংগ্রামী নার্সের অবদান নারীমুক্তি আন্দোলনে অমর হয়ে থাকবে । এ পর্বের লেখাটি স্যাইমন দ্য বোভারের Married Women শীর্ষক প্রবন্ধ থেকে একটি জুৎসই ও প্রাসঙ্গিক উক্তি দিয়ে শেষ করতে চাই : “we must go on to see, then, how women’s condition is characterized essentially by the ÒserviceÓ of the bed and the service, of the housekeeping and in which woman finds her place of dignity only in accepting her vassalage. আগামী পর্বে এমনতরো অবস্থা থেকে উত্তরণের প্রচেষ্টার চিত্র তুলে ধরার অভিপ্রায় রইলো ।
Posted ৭:৩৯ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০২ মার্চ ২০২৩
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh