আনোয়ার হোসেইন মঞ্জু | বৃহস্পতিবার, ২৫ আগস্ট ২০২২
“নদী কভু পান নাহি করে নিজ জল/তরুগণ নাহি খায় নিজ নিজ ফল/গাভী কভু নাহি করে নিজ দুগ্ধ পান —,” ‘পরোপকার’ নামে রজনীকান্ত সেনের এই কবিতা না পড়ে শিক্ষিত হয়েছে এমন বাঙালি পাওয়া যাবে না। কিন্তু সর্বক্ষেত্রে এ নিয়ম যে প্রযোজ্য নয়। কিছু কিছু মানুষ থাকেন, যারা নিজ দেহ নিসৃত বস্তু পান করেন বলে শোনা যায় এবং তা করে সবচেয়ে খ্যাতির অধিকারী হয়েছিলেন ভারতের চতুর্থ প্রধানমন্ত্রী মোরারজি দেশাই। চল্লিশ বছর যাবত নিজ মূত্র পান, শরীরের ব্যথা নিরাময়ে মূত্র ব্যবহার, তিনি দাতের ব্যথা, এমনকি নড়বড়ে দাত দৃঢ় করতে স্ব-মূত্র পানের থেরাপি প্রয়োগ করতেন। ৬১ বছর বয়সে তার চোখে ছানি পড়ে, তিনি অবিলম্বে চোখে মূত্র ছিটানোসহ চোখ ধুঁতে শুরু করেন। ছানি গায়েব! মোরারজি দেশাই ভোরে নিদ্রা ভঙ্গ হতেই তার প্রথম মূত্র পাত্রে ধারণ করে, তা পান করতেন এবং দেহের যেখানে যেখানে প্রয়োজন সেখানে সিঞ্চন বা মালিশ করতেন। ভারতের এক আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক দেবেন্দ্র ভোরা তার ‘আপনার চিকিৎসা আপনার হাতে’ পুস্তিকায় নিজ মূত্র পানের মাহাত্ম বয়ান করেছেন। যে পুস্তিকার ভূমিকা লিখে দিয়েছিলেন স্বয়ং মোরারজি দেশাই। পুস্তিকায় দাঁতের চিকিৎসার অধ্যায়ে বলা হয়েছে-“দাঁতের যে কোন সমস্যায়,এমনকি দাঁত নড়তে থাকলেও অন্তত পাঁচ মিনিট ধরে নিজের মূত্র মুখে নিয়ে কুলকুচি করুন। মাড়িতে মালিশ করুন!”
এটা কোনো বানানো কাহিনি নয়। মোরারজি দেশাই ১৯৭৭ সালে ভারতের প্রথম অ-কংগ্রেসী প্রধানমন্ত্রী হন এবং ১৯৭৮ সালে তিনি নিজেই স্ব-মূত্র পান ও সর্বরোগহর এই অমৃত-সমান এই শিবাম্বুর অসাধ্য সাধনের কথা বয়ান করেন। ভারতের মতো বিশাল এক দেশের প্রধানমন্ত্রীর অমৃত বাণী বলে কথা। প্রকাশ্য ও গোপনে ভারতে তাঁর অনেক ভক্ত মূত্র সেবন শুরু করেছিলেন। নানা পুস্তিকাও বের হতে থাকে এবং স্ব-মূত্র যে যাবতীয় রোগব্যাধি নিরাময়ে একেবারে অব্যর্থ সে সম্পর্কে বলা হয়: তা আবার যেন তেন রোগ নয় আলসার, পেটের পীড়া, স্তনে টিউমার, জড়ায়ু সমস্যা জিভ ও গলার ক্যান্সার, হার্টের ব্লক এমনকি যৌবন ও ত্বকের সজিবতায় এবং চেহারার লাবন্য ধরে রাখতেও নিজ-মূত্র পান টনিকের মত কাজ করে। মোরারজি দেশাই একশ’ বছরের আয়ু পেয়েছিলেন। এর পেছনে তাঁর নিয়মিত নিজ মূত্র পানের অবদান থাকতেও পারে। আহা, সৃষ্টিকর্তার মহিমার শেষ নেই!
যদিও চিকিৎসা বিজ্ঞানিরা মানুষের মূত্রে রোগ নিরাময় যোগ্য কোনো উপাদান খুঁজে পান না, বরং উল্টোটাই বলেন যে, শরীর যাবতীয় তরল অপ্রয়োজনীয় ও বিষাক্ত বর্জ্য মূত্রের সঙ্গে বের হয় এবং তা পান করার অর্থ শরীরের ক্ষতি ডেকে আনা। কেউ নিজ দায়িত্বে নিজ মূত্র পান করলে তাদের বলার কিছু নেই। পানি পরিশোধনের মতো মূত্র শোধন করার মাধ্যমে খাঁটি পানিতে পরিণত করে পান করা ভিন্ন কথা। মোরারজি দেশাই নিজে মূত্র পান করেছেন এবং অন্যদেরও পরামর্শ দিয়েছেন নিজ নিজ মূত্র সেবন করতে। নিরোগ থাকতে চান, দীর্ঘজীবী হতে চান — মূত্র সেবন শুরু করুন। ১৯৭৮ সালে দেশাই যুক্তরাষ্ট্র সফরে আসেন এবং সিবিএস টেলিভিশনে ড্যান র্যাদার ‘সিক্সটি মিনিটস’ প্রোগ্রামে তাঁর সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেন। ষাট মিনিটের প্রায় পুরো সময় ধরেই তিনি মূত্র সেবন নিয়ে কথা বলেছেন। তার মতে যারা আধুনিক চিকিৎসা নিতে অক্ষম, তাদের জন্য স্ব-মূত্র পান খাঁটি চিকিৎসা পদ্ধতি।
ভারতের পরলোকগত খ্যাতিমান সাংবাদিক, লেখক খুশবন্তু সিং তাঁর “ইউরিন থেরাপি” নামে এক নিবন্ধে যা উল্লেখ করেছেন, তা সংক্ষেপে তুলে ধরছি: “আমি যখন মোরারজি দেশাইয়ের কাছে সুস্বাস্থ্যের জন্য নিজ মূত্র পানের কথা শুনি, তখন আমার বমনোদ্রেক হয়েছিল। এরপর আমি একটি খবর পাঠ করি যে হরিদ্বারের এক ব্যক্তি গো-মূত্রের প্যাটেন্ট করেছে আয়ুর্বেদিক দাওয়াই হিসেবে। এবং নিয়মিত নির্দিষ্ট পরিমাণে গো-মূত্র পানের গুণাগুণ প্রচারকারী বিজেপি নেত্রী, গরু ও বাছুর প্রেমিক উমা ভারতির বচন শুনতে থাকি। আমি তাকে তামাশার পাত্রে পরিণত করার জন্য কয়েকটি লাইন লিখি এবং সেটি পাঠ করে তিনি ক্রুদ্ধ হন এবং আমাকে নোংরা ভাষায় একটি চিঠি লিখেন এবং সাথে এক বোতল মূত্র প্রেরণ করেন। আমি নিশ্চিত ছিলাম না যে এটি গো-মূত্র ছিল অথবা তার নিজের মূত্র ছিল। বিশ্রী দুর্গন্ধ, আমি টয়লেটে ফ্লাশ করে দেই।”
Posted ৮:২৫ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৫ আগস্ট ২০২২
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh