ড. আশরাফ উদ্দিন আহমেদ | বৃহস্পতিবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২১
আফাগানিস্থানে তালেবানদের প্রথম দফা শাসন (১৯৯৬-২০০১) এর সমাপ্তি দ্বিতীয় দফা (১৫ অগাস্ট ২০২১) শাসন শুরুর মধ্যবর্তী সময়টি ছিল নারী শিক্ষা ও প্রগতির স্বর্ণময় দুই দশক। এ সময়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মেয়েদের ভর্তির সংখ্যা ও উপস্থিতির হার ছেলেদের ছাড়িয়ে যায় । মনে হচ্ছিল নারী শক্তির এ হেন উজ্জীবনে দেশটিকে ও আফগান জাতিকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নয়নের পথে ধাবিত করবে দ্রুত গতিতে। লক্ষণ এমনই পরিলক্ষিত হচ্ছিল । আমার একটি প্রবন্ধে বলেছিলাম, “স্কুল, কলেজ, এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ও মহিলা শিক্ষক প্রচুর সংখ্যায় নিয়োগ লাভ করেন । সরকারি চাকুরী, ব্যাংক, বীমা প্রতিষ্ঠান বেসরকারি সেবামূলক সংগঠন, বিদেশী দূতাবাস, অনুবাদক হিসেবে কাজ, নার্স, ডাক্তার ইত্যাদি রকমারি পেশা মহিলাদের ঘরের বাইরে নিয়ে যেতে সহায়ক হয়” (দেখুন, আশরাফ উদ্দিন আহমেদ, ‘থমকে থমকে গেল নারী প্রগতি’, সাপ্তাহিক বাংলাদেশ, ২১ অক্টোবর ২০২১)।
অনাদিকাল থেকেই আফগানিস্থান একটি পুরুষ শাসিত, ধর্মান্ধ, বর্ণ ও সম্প্রদায় বিভক্ত ট্রাইবাল সমাজ। আমেরিকা ও মিত্র দেশগুলো মিলে তালিবানদের বিতাড়ন নারী শিক্ষা ও প্রগতির অগ্রযাত্রায় আশার আলোকবর্তিকা প্রজ্বলন করেছিল নিঃসন্দেহে। উল্লেখ্য করা যেতে পারে যে তালেবানরা প্রায় অরক্ষিত কাবুলে দখলের পূর্ব মুহূর্তে ও কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ২০,০০০ ছাত্র অধ্যয়ন করত। এর অর্ধেকের ও বেশী ছিল নারী শিক্ষার্থী । তালেবানরা অনতিবিলম্বে নারীদের স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়া ও পড়াশোনার উপর নিষেধাজ্ঞা জারী করে যা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পাদিত সমঝোতা চুক্তির পরিপন্থী। পশ্চিমা দেশগুলো চাপ প্রয়োগ অব্যাহত রাখলে তালেবান মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ ঘোষনা দেন যে পরিবেশ ও পরিস্থিতি যখন মেয়েদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষায় সহায়ক হবে একমাত্র তখনই নারীদের স্কুল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা গ্রহণের ব্যাপারটি বিবেচনা করা হবে। উল্লেখ্য যে প্রথম বার ক্ষমতায় আসার পর ও বেন লাদেনের অনুগত তালেবান গোষ্ঠী এমনটিই বলেছিল। বাস্তবে পনের বছরের শাসন কালে এ প্রতিশ্রুতি সামান্য মাত্রায় ও পালন করেনি নারীমুক্তি ও স্বাধীনতায় বিরোধী কট্টরপন্থী মোল্লা নিয়ন্ত্রিত তালিবান সরকার।
গৃহবন্দী জীবনযাপন ও পর্দা প্রথায় অবরুদ্ধ নারী সমাজ স্বাধীনতার যে স্বাদ পেতে শুরু করেছিল ২০০১ পরবর্তী দুই দশক তা ২০২১ এর ১৫ই আগস্টে রুদ্ধ হয়ে যায়। কিন্তু আফগানিস্থানের নারীরা যারা দেশের বাইরে ও বিভিন্ন ক্ষেত্রে সকলের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা পাচ্ছে দায়িত্ব ও কাজের প্রতি তাদের নিষ্ঠা, সততা ও কর্তব্য পরায়নতার জন্য তারা আফগান মেয়েরা যাতে ভিন্ন পথে হলেও শিক্ষালোভের সুযোগ পায় তার জন্য নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যেই প্রশংসনীয় মাত্রায় সাফল্যের মুখ ও দেখেছে। মুক্ত বিশ্বের বিভিন্ন মহল থেকে ও উৎসাহ উদ্দীপনা ও সহায়তার আশ্বাস পেয়েছে এবং পাচ্ছে ও। এমনতরো ঘটনা নিয়েই আমাদের এ প্রবন্ধটি।
আমেরিকায় অবস্থানরত আফগান মহিলাদের চেষ্টায় অনলাইন প্রোগ্রামে ভর্তি হওয়ার মাধ্যমে লেখাপড়ার সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে। সম্প্রতি সৃষ্ট এ রিমোট লার্নিং ব্যবস্থাটি খুবই সঙ্গোপনে চলছে গত নভেম্বরের পহেলা তারিখ(২০২১ সাল)থেকে। ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গ রাজ্যে একটি নন-প্রফিট অনলাইন বিশ্ববিদ্যালয়ে এ কার্যক্রম চলছে। আফগানিস্থানের যে সব মেয়েরা তালেবানদের কারণে উচ্চশিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছে তাদের জন্য এ ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে বলে মণে করা হয় তবে তা অন্যসব দেশের মহিলাদের জন্য ও উন্মুক্ত। সাই রাসেল নামের এক মহিলা এক লক্ষ ছাত্রছাত্রীর জন্য ইউনিভারসিটি অব পিপল (U o People)নামের এ বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রেসিডেন্ট । আফগান নারীদের জন্য ১০০০ বৃত্তি প্রদানের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। বিল এবং মেলিন্দা গেইটস ফাউন্ডেশন, ক্লিনটন ফাউন্ডেশন, ফোর্ড ফাউন্ডেশন এবং অন্যান্য সংগঠন এসব ব্যয় নির্বাহ করবে। সাই রাসেল বলেছেন তিনি আরও বৃত্তির তহবিল সংগ্রহের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। আশা করছেন তিনি সফলকাম হবেন। এদিকে আরও খুশীর খবর হোল জাতিসঙ্গের উন্নয়ন সংস্হা বা ইউ এন ডি পি আফগানিস্থানের নিকটস্থ সেন্ট্রাল এশিয়ান দেশগুলোতে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের আর্থিক সহায়তায় বেশ কয়েকটি বৃত্তির ব্যবস্থা করেছে। সম্প্রতি নারী অধিকার নিয়ে তালিবান সরকার একটি ফরমান জারী করেছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপে পরেই এ ফরমানটি জারী করা হয়েছে। এতে নারীদের বিবাহ ও সম্পতি সংক্রান্ত কতিপয় অধিকার সম্পর্কে নমনীয় মনোভাব
ব্যক্ত করা হয়েছে তবে নারীদের শিক্ষা ও গৃহের বাইরে কাজ করার ব্যাপারে কিছু বলেনি এই কট্টর পন্থী ধর্মান্ধ তালিবান দলটি। তবে আন্তর্জাতিক মহল থেকে চাপ প্রয়োগ অব্যাহত রাখা হয়েছে। সেন্ট্রাল ব্যাংকগুলোতে রক্ষিত আফগান ফান্ড ও উন্নয়ন খরচ নির্বাহের তহবিল হিমায়িত করে রাখা হয়েছে। অর্থনৈতিক ভাবে বিপর্যয়ের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আফগানিস্থান খুবই বেকায়দায় আছে। আশা করা যায় শিগগীরই নারী শিক্ষা ও নারীদের চলাফেরার স্বাধীনতা সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোতে কিছুটা হলে তালিবান সরকার ছাড় দেবে।
Posted ৮:৫৯ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২১
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh