ড. আশরাফ উদ্দিন আহমেদ | বৃহস্পতিবার, ০৬ মে ২০২১
আন্তর্জাতিক যে কোন মানদণ্ডে আমেরিকা বিত্তশালী, সম্পদশালী দেশ নিঃসন্দেহে। এদেশে বৈভবের সীমা-পরিসীমা নেই। তারপর ও দারিদ্র্য তাড়না করে একটি বিরাট সংখ্যক অধিবাসীদের। নিরন্তর প্রচেষ্টায় ও দারিদ্র্যকে নির্মূল করা যাচ্ছে না। নিউ ডিল এর সময় দারিদ্র্য হঠানোর জন্য আইন করা হয়েছিল যাতে মহামন্দার ফলশ্রুতিতে যে গরীবি তা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব হয়। ১৯৬০ দশকে দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল সরকারীভাবে। ২০০৮ সালের গ্রেট ডিপ্রেসন মোকাবেলায় দারিদ্র্য দূরীকরণ প্রচেষ্টার পরে ও এ দুষ্ট ক্ষতটি বহাল তবিয়তেই আছে।
চরম পুঁজিবাদকে অর্থনৈতিক আদর্শ হিসেবে নিয়ে যে সমাজ ব্যবস্থিত সে সমাজে মূল্যবোধ ব্যবস্থায় সাম্যকে সযতনে দূরে, অতি দূরে রাখা হয়েছে। বৈষম্যহীন সমাজ ও অর্থনীতি এ দেশে কল্পনা মাত্র কারণ সাম্যবস্থার জন্য সবচেয়ে জরুরি হলো সম্পদের পুনঃবণ্টন । বাইডেন প্রশাসন অনেক ঢাকঢোল বাজিয়ে মার্চ ২০২১ এ American Rescue Plan (ARP) অ্যাক্টটিকে আইনে রূপান্তরিত করেছে। বিগত এক দশকে এমন উদার গণমুখী আইন আর পাস হয়নি। দারিদ্র্য দূরীকরণে উল্লেখ যোগ্য রাখতে সক্ষম এ আইনটি বৈষম্য দূরীকরণে তেমন কোন ভূমিকা রাখতে পারবে বলে মনে হয়না কারণ সম্পদশালীদের উপর উচ্চ হারে কর আরোপ না করলে সাম্য আশা করা যায়না । বিত্তবান পাঁচ শতাংশ পরিবারের কব্জায় আমেরিকার মোট সম্পদের (total wealth ) দুই-তৃতীয়াংশ (মূলত সরকার নিয়ন্ত্রিত সিকুইরিটিস এবং রিয়াল এস্টেট প্রপার্টিস) কুক্ষিগত হয়ে থাকলে বৈষম্য নিরসন কিছুতেই সম্ভব নয় । শুধুমাত্র ২০২০ সালে আমেরিকার ১ শতাংশ অত্যধিক ধনী, যারা ৭ ট্রিলিয়ন ডলার সম্পদ বা ওয়েলথ অর্জন করেছে ।
করোনা প্যান্ডামিকের বিভীষিকা ও পুঁজিপতিদের বিত্তবৃদ্ধির সহজাত অদম্য স্পৃহা দমিয়ে রাখতে পারেনি । তবে, পেন্ডেমিক যখন লকডাউন পর্যায়ে, বিশেষত ২০২০ সালের মে থেকে অক্টোবর সময়টাতে, তখন ৮ মিলিয়ন লোক দারিদ্র্য প্রপীড়িত হয়ে পরে।
উল্লেখ করা যায় যে ১৯১৯ সময়ে পেন্ডেমিকের থাবা বিস্তারের আগে আমেরিকায় দারিদ্র্য সীমা ১১.১ শতাংশে নেমে এসেছিল। পরপর কয়েক বছর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বেড়ে যাওয়ার কারণেই এমনটি সম্ভব হয়েছিল। (তথ্যসূত্রঃ ইউ এস সেন্সাস ব্যুরো ২০২০ এসেসমেন্ট)।
শিকাগো , নিউ ইয়র্কের মতো বড় শহর-নগরে প্রকট দারিদ্র্য বস্তিবাসীদের মধ্যে উনিশ শতাব্দীতে বিরাজমান ছিল। এ সময়ে প্রগতির আন্দোলনের ফলে এ ধারায় সামান্য ভাঁটা দেখা গেলে ও গ্রেট ডিপ্রেশন শুরু হওয়ার প্রাক্ষালে সাউথের গ্রামাঞ্চলে বর্গা চাষী বা শেয়ার ক্রপার এবং ভাড়াটে চাষীদের (tenant farmers) আর্থিক অবস্থা খারাপ হতে শুরু করে। উল্লেখ্যয় যে এমনতরো কৃষক সম্প্রদায় সাউথের জনসংখ্যার প্রায় এক-চতুরাংশ ছিল। এদের অধিকাংশই ছিল আফ্রিকান-আমেরিকান। মহামন্দায় এসব পুরনো দরিদ্র জনগোষ্ঠির সাথে নতুন করে অসংখ্য কৃষক, শ্রমজীবী , গৃহভৃত্য ইত্যাদি জনসংখ্যা যোগ হলে এক বিশাল দরিদ্র শ্রেণীর উদ্ভব হয়। সরকার পক্ষ থেকে কোন আনএম্পয়মেন্ট ইন্সুরেন্স দেয়ার ব্যবস্থা না থাকায় তারা নিঃস্ব হয়ে বাড়িঘর বিক্রি করে ছাউনি শহর বা গ্রামে (shantytowns or Hooverville) মানবেতর জীবনযাপন করতে বাধ্য হয় । নিউ ডিল প্রোগ্রাম শুরু হলে ফেডারাল ইমারজেন্সি রিলিফ প্রশাসন (The Federal Emergency Relief Administration) দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য চাকুরী সৃষ্টির প্রচেষ্টায় জোর দেয় কারণ ক্যাশ পেমেন্টের (the dole) চেয়ে যে কোন চাকুরীকে সম্মানের চোখে দেখা হত । নিউ ডিলের আওতায় Civilian Conservation Corps , Public Works Administration চালু করা হলে দারিদ্র্য বিষয়টি বিভিন্ন মহলের নজরে আসে।
এ নিয়ে আলাপ-আলোচনা , তর্ক-বিতর্ক ও বেশ তুমুল ভাবেই শুরু হয়। মাইকেল হ্যারিংটনের (Michael Harrington) কালজয়ী গ্রন্থ The Other America বাজারে আসলে বুদ্ধিজীবী মহলে দারিদ্র্য নিয়ে আলোচনার যে ঝড় ওঠে তা সাড়া আমেরিকায় আলোড়ন সৃষ্টি করে। তাছাড়া, প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে সোশ্যাল সিকিউরিটি চালু হলে দারিদ্র্য অনেকটা স্তিমিত হয়ে পরে । তবে, দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ১৯৬০ দশকের পূর্বে শুরু হয়নি। (চলবে)
Posted ২:৫৯ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৬ মে ২০২১
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh