ড. আশরাফ উদ্দিন আহমেদ | বৃহস্পতিবার, ০৭ জানুয়ারি ২০২১
যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় অর্জন এর গণতন্ত্র । গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা , মূল্যবোধ ,কানুন ও প্রাতিষ্ঠানিক আচার অনুষ্ঠান , রীতিনীতি এ সবের ভিত বিগত কয়েক শতাব্দীর অনুশীলনে পাকাপোক্ত ভাবে এ দেশে সমাসীন । ব্যাত্যয় যে ক্ষেত্রবিশেষে ঘটেনা তা নয় । তবে , আমেরিকায় গণতন্ত্রের যে অবিচ্ছেদ্য ধারাবাহিকতা তার গ্রহণযোগ্যতা তথ্য ও তাত্ত্বিক বিবেচনায় , গ্রহণযোগ্যতার মাপকাঠিতে অস্বীকার করা কঠিন । আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ও দেশটির সম্মানীয় পরিচয় শুধু ধনী , সম্পদশালী ও শক্তিশালী দেশ হিসেব নয় , গণতন্ত্রের মানসপুত্র , ধারক ও বাহক হিসেবেই বরং বেশী । দেশটির এরকম পরিচিতি বর্তমান সময়ে কঠিন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন । জর্জিয়াতে যে রান অফ সিনেট ইলেকশন হচ্ছে তা নিঃসন্দেহে এ ক্ষেত্রে টেস্ট কেস । অর্ধ বিলিয়নের ও বেশী ডলার জর্জিয়ার নির্বাচনে ভোটার আকর্ষণ করার জন্য বিজ্ঞাপনেই দুই দলের খরচ হয়েছে যা সিনেট ইলেকশনের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশী । শ্বাসরুদ্ধকর এ নির্বাচনে তিন মিলিয়নের ও বেশী ভোটের আগাম ভোটে দিয়ে দিয়েছে। এর মধ্যে বেশীর ভাগ ডেমোক্র্যাটিক দলের সমর্থক বলে ধারনা করা হচ্ছে। প্রথম বারের মোট ভোট দেয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছে যে সত্তর হাজারের ও বেশী যুবক -যুবতী তাদের সিংহভাগই এ দলটিকেই ভোটে ইতিমধ্যেই দিয়ে ফেলেছে বলে প্রচার মাধ্যমগুলো দাবী করছে । প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এ নির্বাচনে রিপাবলিকান দলের প্রাথিদের জেতানোর জন্য মরিয়া হয়ে লেগে গেছেন । তিনি ও ভাইস প্রেসিডেন্ট পেন্স দুবার জর্জিয়া সফর করে জোর কেম্পেন করেছেন । ডেমোক্র্যাটিক দল ও বসে নেই । প্রেসিডেন্ট-ইলেক্ট জো বাইডেন ও ভাইস-প্রেসিডেন্ট ইলেক্ট কামালা হ্যারিস ও দু’বার জর্জিয়ায় প্রচারাভিযানে গিয়েছেন ।
সিনেটে ৪৮ টি আসন পেয়ে দলটি ২ আসনে রিপাবলিকান দলের চেয়ে পিছিয়ে আছে । জর্জিয়ার আসন দুটো জিততে পারলে ভাইস প্রেসিডেন্টের টাই ব্রেকার ভোটে মেজরিটির ভূমিকায় আসীন হওতে পারবে এবং দলীয় এজেন্ডা পার করিয়ে নিতে পারবে । সিনেট মেজরিটি নেতা এ দলেরই হবে। রিপাবলিকান দোন জর্জিয়ায় একটি আসন পেলে ও সিনেটে মেজরিটি দলে বহাল থাকবে। জো বাইডেন ও তাঁর দল গুরুত্ব পূর্ণ কোন প্রস্তাবই সমযোতা ব্যাতিরেকে পাস করাতে পারবে না । জলবায়ু পরিবর্তন, ইমিগ্রেশন, স্বাস্থ্যসেবা ও বীমা ইত্যাদি বিষয়গুলোতে সিদ্ধান্ত নেয়া মোটেও সহজসাধ্য হবেনা। এসবের চেয়ে ও প্রেসিডেন্ট ট্র্যাম্পের জন্য চরম ভাবনার বিষয় হল তিনি প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচনটি সুষ্ঠু , নিয়ম মাফিক হয়নি বলে বাতিল ঘোষণার যে পায়তারা করছেন সে সাধ ভেস্তে যাবে । আগামী ৬ তারিখে কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে সকল ষ্টেটের প্রদত্ত সারটফাইড ভোট নাকচ করার অপচেষ্টা করে জনগণের এবং কয়েক শতাব্দীর পরীক্ষিত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় কুঠারাঘাত হানতে চান। এ উদ্দেশ্যে কয়েকটি ষ্টেটে জো বাইডেনের প্রাপ্ত ভোট নানান অজুহাতে বাতিল বলে গন্য করাতে চান। এ জন্য ভোটে অনিয়ম হয়েছে এমন প্রস্তাব উত্তাপনের জন্য ডজনের ও বেশী পিপাবিকান সিনেটর ও দেড়শতের মত হাউস অফ রিপ্রেসেন্টটেতিভ সদস্যকে তৈরি করা হয়েছে । মনে হয় এ অপতৎপরতা কোন কাজে আসবে না কারণ সিনেট ও হাউস মিলে ডেমোক্রেটরাই সংখ্যায় বেশী। তবু , এতে একটি অগণতান্ত্রিক উদাহরণ সৃষ্টি হবে নিশ্চয়।
গত কয়েকদিন যাবত প্রেসিডেন্ট ট্র্যাম্প বিভিন্ন ভাবে জর্জিয়ার সেক্রেটারি অফ ষ্টেটের উপর চাপ সৃষ্টি করার চেষ্টায় বিফল হয়ে নিতেই তাঁকে ফোনে এক ঘনতার ও বেশী সময় ধরে প্ররোচনা , হুমকি-ধামকি দেন যা ফাঁস হয়ে যায়। অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে রিপাবলিকান দলের এ সেক্রেটারি অফ ষ্টেট প্রেসিডেন্ট ট্র্যাম্পের প্রতিটি প্রস্থাবে আপত্তি করেন এবং নির্বাচন আইন মোতাবেক পরিচালিত হয়েছে বলে অভিমত রাখেন । প্রেসিডেন্সিয়াল ইলেকশনের ফলাফল রদবদল করে ট্রাম্পকে জয়ী ঘোষণার চাপে নতি স্বীকার করতে ও তিনি অস্বীকৃতি জানান। সেক্রেটারি অফ ষ্টেট তাঁর কোটা অমান্য করলে অপরাধী হিসেবে তার বিচার হবে এমন হুমকিতে ও তিনি তার বক্তব্য থেকে বিন্দুমাত্র সরে আসেন নি। ২০২২ সালের নির্বাচনে তাঁকে এবং গভর্নরকে সমর্থন দিবেন না ট্র্যাম্পের এ ঘোষণা ও হুমকি কোনটাই এ দুজনকে টলাতে পারেনি। বারবার জর্জিয়ার প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচনের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ; বিভিন্ন ধরণের ষড়যন্ত্রমূলক তথ্য ও তত্ত্ব সামনে নিয়ে এসে নির্বাচনটিকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করেছেন ; তার আইনজীবীগণ কোর্টে বারবার মামলা করে হেরে গেছেন তবু ও বেহায়াপনা, শক্তিমদমত্ত মনোভাবের উন্মত্ত প্রদর্শন থেকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বিরত থাকেননি। ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে রাখার উদগ্র বিকৃত বাসনা ট্রাম্পকে একজন গণতন্ত্র হত্যাকারী প্রেসিডেন্ট হিসেবে ইতিহাসে চিহ্নিত করে রাখবে, নিশ্চিত ভাবে বলা যায় ইতিহাস তাঁকে ধিক্কার দিবে। ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ এ স্লোগানের আড়ালে তিনি যে একজন চরম বর্ণবাদী মানুষ , লোভী ব্যবসায়ী, স্বজনপ্রীতিতে চরম বেশরম– এ সব বিশেষণ তাঁকে যুগ যুগ ধরে তাড়িত করবে একজন নিকৃষ্ট ব্যাক্তি হিসেবে, সর্বোপরি গণতন্ত্রের হত্যাকারী হিসেবে। তিনি গণতান্ত্রিক পদ্দতির রাজনীতিকে বিভাজিত করেছেন, যেমন করেছেন এ দেশের জনমানুষকেও। তাঁর যা কিছু অল্পবিস্তর অর্জন তাও এহেন দুর্নামের আস্তাকুড়ে চাপা পড়ে যাবে।
Posted ৭:১১ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৭ জানুয়ারি ২০২১
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh