ড. আশরাফ উদ্দিন আহমেদ | বৃহস্পতিবার, ১০ জুন ২০২১
ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ার থেকে ডেমোক্রেটিক পার্টির নির্বাচিত সিনেটর জু মাঞ্ছিন (Joe Manchin) অত্যন্ত সুস্পষ্ট ভাষায় বলেছেন যে তিনি ফর দ্য পিপল অ্যাক্ট সমর্থন করেন না। উল্লেখ করা প্রয়োজন যে প্রস্থাবিত অ্যাক্টটি একদিকে যেমন ১৯৬৫ সালের ভোটাধিকার অ্যাক্ট (Voting Rights Act) সংস্থাপন করার প্রয়াস তেমনি সুপ্রিম কোর্টে ২০১৩ সালে ৫-৪ ভোটে নাকচ হওয়া সিদ্ধান্তকে হটিয়ে অ্যাক্টটির পরিধি বাড়ানো ও একে আইনসিদ্ধ করার ও ইচ্ছপ্রসুত। গত মার্চ মাসে পাস হওয়া অ্যাক্টটি সিনেট ভোটাভোটিতে একজন রিপাবলিকান দলের সিনেটর ও সাপোর্ট করেননি। সিনেটর জু মাঞ্ছিন তাঁর সিদ্ধান্তে অনড় থাকলে নিশ্চিত ভাবেই বলা যায় যে অ্যাক্টটি সিনেটে পার পাবেনা। লেজিলেটিভ ফিলিবাস্টার ব্যবস্থা বাতিল করতে পারলে পাস হওয়ার সম্ভাবনা আছে। রিপাবিকানরা এটি হতে দেবেনা। সিনেটর জু মাঞ্ছিন ও নিকট অতীতে ডেমোক্রেটদের প্রবর্তিত এ প্রথা রহিত করার বিপক্ষে। গত রোববারে এক ওপেন এডে মাঞ্ছিন লিখেছেন, “I believe that partisan voting legislation will destroy the alreadz weakening binds of our democracy, and for that reason, I will vote against the For the People Act. Furthermore, I will not vote to weaken or eliminate the filibuster.” (Brennan Center for Justice).
ডেমোক্রেটরা, সিভিল রাইট সপক্ষ শক্তি এবং অনেক আইনজীবী সিনেটর মাঞ্ছিনের মতামতের বিরোধিতা করে তাঁকে তার সিদ্ধান্ত পাল্টাতে অনুরোধ রাখছেন। অন্যদিকে, প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ট্র্যাম্প উল্লাস প্রকাশ করে সিনেটর জু মাঞ্ছিনকে অভিনন্দন জানিয়েছেন পত্র-পত্রিকায় বিবৃতির মাধ্যমে।
ফিলিবাস্টার একটি কুপ্রথা যা গণতন্ত্রকে ক্ষেত্রবিশেষে চরমভাবে ব্যাহত করে। প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা সিভিল রাইট হিরো এবং প্রতিথযশা কংগ্রেসম্যান জন লুইস (John Lewis) শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে বলেছিলেন যে ফিলিবাস্টার হল ঔরস ঈৎড়ি ৎবষরপ এর নামান্তর। ভোটাধিকার সংস্কারের মত কিছুসংখ্যক জন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে এ প্রথা রহিত করতে হবে নইলে গণতন্ত্র বিকশিত হতে পারবেনা। অনেকে বলেন, বেশ কিছু ধরনের আইনপ্রণয়নে বা লেজিসলেশনে ফিলিবাস্স্টার করতে হলে যে সুপারমেজরিটির প্রয়োজন তা রহিত করা হয়েছে। একই ধরনের ব্যতিক্রম ভোটাধিকার সংস্ক্রান্ত আলোচনা বা সংস্কারের বেলায় ও হওয়া বাঞ্ছনীয় বলে ও অনেকে মনে করেন।
ফিলিবাস্টার কি?
সিনেটের পরিপ্রেক্ষিতে কোন আইনপ্রণয়ন বা স্থায়ীকরন প্রক্রিয়া পুরোপুরি অথবা অংশবিশেষ বিলম্বিত অথবা ব্লক করার নিমিত্তে ফিলিবাস্টার কৌশল ব্যভাঁড় করা হয়। এ প্রসঙ্গে সিনেট কি পদ্ধতি অনুসরণ করে বিল্ব পাস করে তা জানা দরকার। কোন একজন বা কয়েকজন সিনেটর যখন নতুন কোন বিল বিবেচনার জন্য প্রস্থাব হিসেবে উত্থাপন করে, তখন সেটি নিয়ে আলোচনা, বাদানুবাদ, শুনানি ও পরিবর্তন, সংযোজন ইত্যাদি কাজগুলো এ সংক্রান্ত যথাযথ কমিটিতে পাঠানো হয়। কমিটির মেজরিটি সদস্য প্রস্থাবের পক্ষে ভোট দিলে তবেই তা সিনেট ফ্লোরে বাদানুবাদ বা ডিবেটের জন্য পাঠানো হয়।
সিনেট ফ্লোরে যাওয়ার পর ৫০+১ ভোটে শেষ হয়ে যাওয়ার বিধান থাকলে ও এখানে কিছু ফাঁক ফুঁকোর আছে। বাদানুবাদ শেষ করার পর তার পরিসমাপ্তির জন্য ৬০ টি ভোট অর্থাৎ সুপারমেজরিটি ডি ফ্যাক্টো মিনিমাম (de facto minimum) সিনেটে আইন পাস করতে প্রয়োজন হয়।
শুরুতে যে নিয়ম ছিল তাতে কোন বিল উত্থাপিত হলে সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে পাস হলেই চলতো। ১৮০৬ সালে তদানীন্তন ভাইস প্রেসিডেন্ট এরন বার এ নিয়মের বিরুদ্ধাচরণ করায় সিনেটরগণ সুযোগ পেয়ে যান এবং কোন বিল বিলম্বিত করার কৌশল হিসেবে বাদানুবাদ করতেই থাকেন। এতে করে সুপারমেজরিটি ভোটে বিলের সপক্ষে যাওয়ার সম্ভাবনা তিরোহিত হতে থাকে। অনেক ক্ষেত্রে সিনেটররা বিরক্ত হয়ে ভোটে দেয়া থেকে বিরত থাকেন। এ কৌশলটিকেই এখন ফিলিবাস্টার বলা হয়। অনর্গল কথা বলতে পারদর্শী যে কোন একজন সিনেটর এ কৌশল কাজে লাগিয়ে একটি নির্দিষ্ট সেশনে একটি বিলকে পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করতে পারেন।
১৯১৭ সালে সিনেট রুল XXII / Cloture rule প্রবর্তন করলে দুই-তৃতীয়াংশ সিনেটর ভোটে দিয়ে ফিলিবাসটার নাকচ করে দিতে পারেন। ১৯৭৫ সালে এ সংখ্যা কমিয়ে ৬০ জনে আনা হয়। আইন পাশ করতে এখন এটিই সর্ব নিন্ম সংখ্যা। তবে, এ নিয়মে ব্যতিক্রম আছে। সাম্প্রতিক একটি উদাহরণ হলো প্রেসিডেন্ট যে সব ব্যক্তিবর্গকে বিভিন্ন পদে নিযুক্তির সুপারিশ করেন তাদের ক্ষেত্রে। ২০১৩ সালে ডেমোক্রেটরা সিনেট রুলে পরিপরতন করেন যাতে করে এক্সিকিউটিভ শাখার কর্মকর্তা, এমনকি কেবিনেট সদস্যদের, সুপ্রিম কোর্টের নন এমনসব জুডিসিয়াল মনোনয়ন স্থায়ী/কনফার্ম করতে পারে। চার বৎসর পড় রিপাবলিকানরা এ পরিবর্তনকে পরিবর্ধন করে সুপ্রিমে কোর্টের নিয়োগদানের বেলায় ও নিয়ে আসেন। এভাবে একটি রুলকে সংখ্যালগিষটরা ও এ অপশন (Nuclear Option) ব্যবহার করে পাস করিয়ে নিতে পারেন। তাছাড়া কিছু কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে শুধুমাত্র সিম্পল মেজরিটি রুল প্রয়োগ করে প্রস্থাব বা আইন পাশ করানো যায়। এসব ক্ষেত্রে ফিলিবাস্টার কার্যকর নয়। আগামী সংখ্যায় এ বিষয়ে আলোকপাত করার ইচ্ছেব রইলো।
Posted ৮:০৩ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১০ জুন ২০২১
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh