ড. আশরাফ উদ্দিন আহমেদ | বৃহস্পতিবার, ২৭ জানুয়ারি ২০২২
আলামত এমনটিই ঠেকছে। ভোট দেওয়ার বিদ্যমান আইন পরিবর্তন করা হচ্ছে তথাকথিত রেড ষ্টেট গুলিতে। মনে করা হচ্ছে এতে অশ্বেতাঙ্গ ভোটারগণ ভোটে প্রদানে বাধাগ্রস্থ হবেন বা উৎসাহ হারিয়ে ফেলবেন। ২০২০ প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচনে প্রাক্তণ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প হেরে গেলে ২০২২ নির্বাচনকে সামনে রেখে ভোটাধিকার সংক্রান্ত আইন-কানুনে আমূল পরিবর্তন আনার প্রাণান্তকর চেষ্টা করছে রিপাবলিকান পার্টি। ভোটাধিকার বিষয়টি মূলত রাজ্য বা ষ্টেট অন্তর্ভুক্ত বিষয় বিধায় ইতোমধ্যেই রিপাবলিকানরা বেশ কটি ষ্টেটে এ ব্যাপারে সুবিধামত নিয়ম-কানুন রাজ্য আইনসভায় অনুমোদন করিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছে। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হল অ্যারিজোনা।
জনগণের কাছে প্রিয় আগাম ভোট প্রথা বাদ দিয়ে ভোটের পূর্বে একটিভ ভোটার তালিকা করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে । তাছাড়া ব্যালটে স্বাক্ষর সংক্রান্ত নিয়ম কঠিন করা হয়েছে। সবচে নিন্দনীয় যে কাজটি করা হয়েছে তা হোল ডেমোক্রেটিক সেক্রেটারি অব ষ্টেট এর নির্বাচন সংশ্লিষ্ট ক্ষমতা খর্ব করা হয়েছে। আরকানসাসে ড্রপ বক্স দান পদ্ধতিতে ভোট দান নিরুৎসাহিত করার উদ্দেশে কঠিন সব শর্তাবলী যোগ করা হয়েছে। তাছাড়া, মেইলে ব্যালট প্রাপ্তির সময়সীমা হ্রাস করা সহ রিটার্নে কঠিন নিয়ম বেঁধে দেয়া হয়ছে । আই ডি পরিবর্তে অন্যসব পরিচয় সংক্রান্ত দলিলাদি দেয়ার যে বিধান ছিল তা বাতিল করা হয়েছে। ফ্লোরিডা, আইওয়া, ক্যানসাস, মন্টানা, টেক্সাস এবং ওইমিং অঙ্গরাজ্যে ও ভোটে দান পদ্ধতি, তালিকা প্রণয়ন ইত্যাদি নিয়ম-কানুন পূর্বেকার চেয়ে কঠিনতর করা হয়েছে ।
এদিকে, ক্যাপিটল হিলে ডেমোক্রেটদের আনীত ভোটার রাইটস বিল সংস্কারের মাধ্যমে আইনানুগ ভাবে সহজতর করার উদ্যোগ রিপাবলিকান দলের বিরোধিতা ও অনড় মনোভাবের কারণে ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে । ফিলিবারস্টার প্রথা যা ডেমোক্রেটরাই এক সময় প্রবর্তন করেছিল তা এখন তাদের ফেডারেল পর্যায়ে বিভিন্ন সংস্কার তৎপরতায় সবচেয়ে বড় বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তার সাথে যুক্ত হয়েছে রি-ডিস্ট্রিকটিইং (Redistricting) পদ্ধতি যা ভোটাধিকারের প্রতি কুঠারাঘাতের শামিল । এ দু’টো ইস্যু নিয়ে দু’দলই যুদ্ধংদেহি অবস্থানে । গতকাল (জানুয়ারী ২,২০২২) তারিখে সি এন এন একটি সংবাদের শিরোনাম করেছে, “Redistricting Wars: Reforms vs Riggings যা সমস্যাটির গুরুত্বের প্রতি ইংগিত করার সাথে সাথে রাজনীতিতে এ ইস্যুর ভয়াবহ প্রতিক্রিয়া ও পরিণতির কথা তুলে ধরেছে । এক ধাপ এগিয়ে অনেকে এ ধরণের অবস্থাকে জিম ক্রো’র প্রেতাত্মার আবির্ভাব বলে আখ্যায়িত করে ব্রেন্ডা আলভারেজ নামে একজন শিক্ষাবিদ বলেন, A wave of laws limiting the freedom to vote is sweeping across the nation. And voting rights advocates are sounding the alarm. Is this Jim Crow 2.o? (দেখুন, nea Today, January 2022, p.44).
যুক্তরাষ্ট্র ভোটদান ব্যবস্থার ইতিহাস দীর্ঘ । সংক্ষেপে নিন্মে উদ্ধৃত তারিখগুলো সবিশেষ তাৎপর্য বহন করেঃ
১৭৭৬- শ্বেতাঙ্গ ২১ বছর বা তাঁর বেশী পুরুষ মানুষ যাদের জমির মালিকানা রয়েছে শুধু মাত্র তাদেরই ভোটাধিকার আছে। ১৮৪৮- ইউ এস টেরিটরিসের অন্তর্ভুক্ত মেক্সিকোর জনগণ ভোটে দিতে পারবে তবে তাদের ইংরেজি জানতে হবে। ১৮৫৬- সমস্ত শ্বেতাঙ্গ পুরুষ মানুষকে ভোট দানের অধিকার দেয়া হয়; ১৮৭০- ১৫তম সংশোধনীর বলে সকল বর্ণের পুরুষ মানুষদের ভোটাধিকার মঞ্জুর করা হয় তবে জিম ক্রো আইনে কৃষ্ণকায়দের ভোট দানে বিধিনিষেধ বলবৎ থাকে। ১৯২০- ১৯তম সংশোধনী আনা হলে সকল মহিলাদের ভোটাধিকার অনুমোদিত হয় তবে জিম ক্রো বহাল থাকে।
১৯২৪- নেটিভ আমেরিকানদের ভোটাধিকার মঞ্জুর করা হয় তবে অঙ্গ রাজ্যগুলো তাদের ভোটে দিতে বাঁধা দেয়; ১৯৬২ সালে সর্বশেষে ইউটাহ (Utah) বাঁধা অপসারণ করে; ১৯৫২- এশিয়ান আমেরিকানদের ভোটাধিকার দেয়া হয়; ১৯৬৪- ফেডারেল ইলেকশনের ক্ষেত্রে ভোটদান সংক্রান্ত ট্যাক্স (poll Taxes) রহিত করা হয়; ১৯৬৫- ভোটাধিকার অ্যাক্ট স্বাক্ষরতা টেস্ট এবং কৃষ্ণাঙ্গদের ভোট দানের ক্ষেত্রে বিদ্যমান অন্যান্য বাঁধা অপসারণ করা হয়; ১৯৭১- ভোট দানের বয়স সীমা কমিয়ে ২১ থেকে ১৮ করা হয়; ১৯৭৫- যে সমস্ত ভোটার ইংরেজি জানে না তাদের জন্য তাদের নিজস্ব ভাষায় অনুদিত ভোট দান সংক্রান্ত কাগজপত্র পাঠানোর সিদ্ধান্ত অনুমোদিত হয়; ১৯৮২- বিকলাঙ্গ এবং বৃদ্ধদের (People with disabilities and the elderly) ভোট দান পদ্ধতি সহজতর করা হয়; ২০০০- একজন ফেডারেল বিচারকের রায় অনুযায়ী ইউএস টেরেটরিসের অন্তর্ভুক্ত পোয়েট্রি রিকু , দি ভারজিন আইল্যান্ডস এবং গুয়ামের ভোটারগণ ট্যাক্স পরিশোধ ও মিলিটারিতে কাজ করলে ও ফেডারেল ইলেকশনে ভোট দিতে পারবেন না ।
সম্প্রতি রিপাবলিকান রেড রাজ্যগুলোতে ভোট দানের ক্ষেত্রে যে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে এবং প্রয়োগের পায়তারা চলছে তা আপাতদৃষ্টিতে সাধারণ ও যুক্তিসঙ্গত মণে হলে ও অশ্বেতাঙ্গদের ভোট প্রদানে বাঁধা হয়ে দাঁড়াবে । নতুন নতুন বিধি-নিষেধ, যেমন ভোটের তারিখের পূর্বেই ভোট দেয়ার কেন্দ্রের সংখ্যা কমিয়ে আনা, ভোট দানের সময়সীমা আরও কমিয়ে আনা, মাইলে ভোট দান ব্যবস্থাতে পরিবর্তন আনা বা রহিত করা এগুলো আফ্রিকান-আমেরিকান ভোটারদের জন্য অসুবিধার সৃষ্টি করবে; এদের এবং অন্যান্য অনেক জনগোষ্ঠীর ভোটারদের জন্য দুর্গতির কারণ হবে। একটি বিরাট সংখ্যক ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে অসমর্থ হবে। ইউক্রেন নিয়ে রাশিয়ার সাথে যুদ্ধ যুদ্ধ ভাব, চীনের সাথে বাণিজ্য সংঘাত, আফগানিস্তানকে তালিবানদের হাতে ছেড়ে দেওয়া, অতিমারি, তদুপরি আভ্যন্তরীণ রাজনইতিক-সামাজিক এতসব ঝামেলা গৃহ যুদ্ধ পর্যায়ে না চলে গেলেই হয়!
Posted ৯:৪৬ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৭ জানুয়ারি ২০২২
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh