ড. আশরাফ উদ্দিন আহমেদ | বৃহস্পতিবার, ০৪ নভেম্বর ২০২১
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অত্যন্ত জোর দিয়েছেন প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়নের উপর। যে ৪৮টি দেশ জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে চরম ক্ষতির সম্মুখীন তাদেরকে আশু সহায়তা দেয়ার আহ্বান জানান শেখ হাসিনা। যুক্তি হলো বিশ্বে কার্বন নির্গমনে তাদের অংশ মাত্র শতকরা ৫ ভাগ । যাদের কারণে, যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়া, ব্রাজিল, ভারত পশ্চিম ইউরোপর উন্নত দেশগুলো বিশ্বে প্রায় শতকরা ৯৫ ভাগ কার্বন নিঃসরণ হচ্ছে তাদেরকে পরিবেশ দূষণ ও জলবায়ু পরিবর্তনের দায় নিতে হবে- এ সুর বারংবার ধন্বিত হয়েছে বাংলাদেশর প্রধান মন্ত্রীর মুখে । স্কটল্যান্ডের জলবায়ু সম্মেলন(কপ-২৬) মূল পর্বে লিডার সামিটে দেয়া বক্তৃতায় এসব কথা বলেন । প্লেনারি-২ এর কনফারেন্স অব দি পার্টিস যা জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক ফ্রেমওয়ার্ক কনভেশনের আওতার অনুষ্ঠিত হয়েছে সেখানে তিনি সুনির্দিষ্ট চারটি প্রস্থাব উপস্থাপন করেন।
বাংলাদেশের পরিকল্পনা বা এনডিসির অগ্রগতি সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেন যে ১২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করে ১০টি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র বাতিলসহ ২০৪১ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য উৎস টেকে এনার্জি চাহিদার ৪০ শতাংশ নেওয়া হবে;
উন্নত দেশগুলোর উচিত হবে অভিযোজন ও প্রশমনের মধ্যে ৫০:৫০ ভারসাম্য রেখে বার্ষিক ১০০ বিলিয়ন ডলার দেয়াড় প্রতিশ্রুতি পূরণ করা;
সিভিএফ (Climate Vulnerable Forum) ও ভি-২০ এর সভাপতি হিসেবে তিনি এ ও বলেন যে উন্নত দেশগুলোর উচিত ঝুঁকিতে রয়েছে যে সব দেশ তাদেরকে সাশ্রয়ী মূল্যে পরিচ্ছন ও সবুজ প্রযুক্তি চরিয়ে দেয়ার আশু ব্যবস্থা নেয়া এবং সিভিএফ দেশগুলোর উন্নয়ন কার্যক্রমে সহায়তা প্রদান এবং, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি , লবণক্ততা বৃদ্ধি, নডই ভাঙ্গন , বন্যা ও খরার কারণে বাস্তুচুত জলবায়ু অভিবাসীদের জন্য বিশ্বব্যাপী দায়বদ্ধতা ভাগ করে নেওয়া সহ লোকসান ও ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি সমাধান করা।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী আফসোস করে বলেন যে বিশ্বব্যাপী কার্বন নির্গমনের মাত্র ০.৪৭ শতাংশেরও কম অংশের জন্য দায়ী বাংলাদেশ কিন্তু দেশটি নানান কারণে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে ঝুঁকিপূর্ণ শীর্ষস্থানে অবস্থানকারী দেশগুলোর অন্যতম। কথাটিতে দ্বিমত পোষণ করার অবকাশ না থাকলে ও কিছু কোথা থেকে যায়।
প্রাকৃতিক ও ভৌগলিক অবস্থানের কারণে হলেও ৫৭তি অভিন্ন নদীর পানির সুষ্ঠু ভাগাভাগির না হওয়ার কারণে বাংলাদেশের জলবায়ুয়ে যে বিরূপ প্রভাব পরেছে এবং অব্যাহত ভাবে পড়তে থাকবে এ কথাটি বাংলাদেশর প্রধানমন্ত্রী তেমন জোর দিয়ে গ্লাসগোর আন্তর্জাতিক ফোরামে উল্লেখ করেছেন বলে মনে হয়না । রোহিঙ্গা শরণারথীদের কথা, তাদের কারণে জলবায়ু পরিবর্তনে যে বিরূপ প্রভাব তার কথা বলেছেন কিন্তু ভারতের সাথে নদীর পানির হিস্যা নিয়ে সমস্যাটি যুক্তি দিয়ে তুললে দুনিয়া জানত; সমুদ্র সীমা ভাগাভাগি বা সমুদ্র জয়ের মত এ সমস্যাটি ও একটি সম্মানজনক সমাধানের দিকে হয়তোবা কিছুটা হলে ও অগ্রসরমান হতো । আশা করছি সাইড লাইনে হয়তো বা ভারতের সাথে এ সময়ে ও আলোচনা হয়েছে ।
দেশের উত্তরাঞ্চলে অসময়ে যে বন্যা, খরা, তিস্তা, বাঙ্গালী, করতোয়া সহ বেশ কটি নদীর মরোমরো অবস্থা, সেচ প্রকল্পগুলো সমস্যাগ্রস্থ, উত্তাল, উন্মত্ত পদ্মায় বিস্তীর্ণ চর, মরুপ্রক্রিয়ার ক্রমবৃদ্ধি, ইত্যাদি সমস্যাগুলো জোরেশোরে আসলে ভাল হতো । সময়ে -অসময়ে বন্যা বা নিমজ্জন, লবণক্তা বৃদ্ধির অপ্রতিরোধ্য গতি, নদ-নদীর পানি প্রবাহে নানা সমস্যা যা সময়মত আন্দাজ ও করা যায় না, নদী-খাল-বিল, হাওর-বাওর, বিল সহ পানির উৎস শুকিয়ে যাওয়া বা মরে যাওয়া, বনজঙ্গল নিধন ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা ও পরিকল্পিত কার্যক্রম এ সময়ে খুবই দরকার । কিছু কিছু অগ্রগতি হচ্ছে তবে খোদ প্রধানমন্ত্রী যখন জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে চিন্তাভাবনা করছেন, বিশ্ব অঙ্গনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন সে সময়টি পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে একটি কাঙ্ক্ষিত সময় হতে পারে।
বিশ্ব প্রেক্ষাপটে জলবায়ু পরিবর্তনের তেমন অগ্রগতি পরিলক্ষিত হচ্ছেনা। শিল্পবিপ্লবের দুইশত বছর পার হয়ে গেলে পরিবেশ দূষিতকরন ও জলবায়ু পরিবর্তনে সৃষ্ট সমস্যা মাত্রারিক্ত ভাবে বেড়েই চলেছে। সমস্যাটি নিয়ে বিগত ৪০ বছর ধরে প্রচুর আলাপ-আলোচনা, সম্মেলন হচ্ছে, জাতিসঙ্ঘ মনুষ্য সৃষ্ট গ্রিন হাউস গ্যাস উদ্গিরন নিয়ে প্রচুর আলোচনা হচ্ছে কিন্তু ফলাফল তেমন আশা ব্যাঞ্জক নয়। যেখানে গ্লাসগো সম্মেলনে ১০০র বেশী দেশের রাষ্ট্র প্রধানগণ অংশ নিচ্ছেন সেখানে রাশিয়া ও চীনের প্রেসিডেন্টদের অনুপিস্থিতি নানান প্রশ্ন সামনে নিয়ে আসে। এ দুটো দেশ , আমেরিকার পরেই পরিবেশ ও জলবায়ু দূষণের জন্য দায়ী । দ্রুত শিল্পায়ন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, সমরাস্ত্র , খনি সম্পদ, বিশেষত তেল ও কয়লা আহরণ ও ব্যবহারে মাধ্যমে কম খরচে সম্বৃদ্ধি এ লক্ষ্যে দেশ দুটি কাজ করে যাচ্ছে। আগামী ২০-৩০ বচ্ছরে মধ্যে এদের জলবায়ু পরিবর্তন আন্দোলন ও আন্তরিক প্রচেষ্টায় দেশ দুটো ও তাদের তাবেদার রাষ্ট্রগুলোকে দেখা যাবে বলে মণে হয় না।
Posted ৭:৪৮ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৪ নভেম্বর ২০২১
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh