ড. আশরাফ উদ্দিন আহমেদ | বৃহস্পতিবার, ০২ নভেম্বর ২০২৩
মানুষের বোধের জগত বড়োই জটিল। আচার- আচরণ,চেতনার প্রাসাদ এসবই প্রচণ্ড রকমের কুহেলিকাময়। সৃষ্ট জীবকুলে সবচেয়ে বর্বর আর নিষ্ঠুর এই হোমোসেপিয়েন প্রজাতি। এহেন জঘন্য কাজ নেই যা মানুষ করতে পারেনা। সম্প্রতি নিউইয়র্ক ভিত্তিক একজন প্রবীণ সাংবাদিকের একটি উক্তি দেখে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধাবনত হলাম । বিগত ২৭ অক্টোবর ২০২৩ তারিখে সাহিত্য একাডেমি নিউইয়র্ক এর মাসিক সাহিত্য আলোচনায় গাজা’য় ঘটে যাওয়া সাম্প্রতিক ঘটনা টেনে এনে বললেন, “পৃথিবীতে যত প্রাণী আছে সবচেয়ে বর্বর প্রাণী আমরা”। ইতিহাস, দর্শন আর সমাজ বিজ্ঞানের সাথে অল্পবিস্তর পরিচয়ে যা বুঝেছি সে আলোকে সাক্ষ্য দিচ্ছি, সাংবাদিক মহোদয় অতি সত্য কথা বলেছেন। যারা এ সম্মেলনের আলোচনার নির্যাস দেখতে চান তারা এ বিষয়ে পলি সাহিনা’র দেয়া পোস্ট দেখতে পারেন।
আজ থেকে দুই হাজার বছর ও পূর্বে গ্রীক দার্শনিক প্লেটো (৪২৮-৩৪৭ খৃস্টপূর্ব) আদর্শিক মতবাদ ও পদ্ধতি প্রয়োগ করে এই জাগতিক ধুম্রজালের বেষ্টনী ছিদ্র করে ভাল বা উত্তম মানুষ চিহ্নিত করতে সচেষ্ট হয়েছিলেন । সত্য অনুসন্ধ্যানে যুক্তি ও তর্ক বা বাদানুবাদ, তুলনা ইত্তাকার নানাবিদ পদ্ধতি করে তিনি বলেন, “Until philosophers became kings or kings became philosophers, an honest man had no place in politics। তাঁর আদর্শ রাষ্ট্র, সমাজ এবং মানুষের ধারণা জাগতিক বাস্তবতায় প্রস্ফুটিত হয়নি, বিকাশ লাভ তো দূরের কথা। পাশ্চাত্য দুনিয়ার চিন্তা ও মননে তাঁর যে অসীম প্রভাব তা ব্যক্ত করা হয়েছে এভাবে, Plato’s formative influence on Western thought can be traced to his belief that the soul and the bodz had distinct and separate existences, and that beyond the world of the senses existed an eternal, changeless order of Ideal Forms (দেখুন, Stuart Hirschberg and Terry Hirschberg, in Past to Present-Ideas That Changed Our World, Prentice Hall, 2003, p5200). এ পুস্তকটির অন্যত্র বলা হয়েছে যে পৃথিবীতে এক একর জমি ও নেই যা সত্যিকার মালিকের দখলে আছে। একজন থেকে জোর-জবরদস্তি বা ছলে-বলে কিংবা কৌশলে এ জমির অসংখ্য বার মালিকানা বদল হয়েছে।
কথাটি মার্ক টোয়েন বলেছেন তাঁর The Lowest Animal শীর্ষক প্রবন্ধে । তিনি প্রবন্ধটিতে মানুষ নামক জীবের অশুদ্ধ চরিত্র, অতি নিন্ম মানের আচার-আচরণ, হিংসা, প্রতিহিংসা বা জিঘাংসা, শত্রুতার মনোভাব, ষড়যন্ত্র, নিয়ত মিথ্যে বলার প্রবণতা, ঈর্ষা পরায়ণতা ইত্যাদি নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করেছেন। নিষ্ঠুরতা মানুষের মত অন্য কোন প্রাণী কব্জা করতে পারে কিনা সন্দেহ আছে, তুলনামূলক ভাবে সামান্য মাত্রায় রপ্ত করলে ও মানুষের মত সর্বগ্রাসী রাহুস্পৃহা পোষণ করে ব্যবহার ও করতে পারেনা।
সমাজে এখন যে চরিত্রের মানুষের আধিক্য অহরহ দেখা মিলে তারা বিভিন্ন আবরণে, সে ধর্মীয় লেবাসই হোক, সব জান্তা উচ্চ শিক্ষিত টক শো’তে প্রায় নিত্য অংশগ্রহণকারীরাই হোক তারা বেশীর ভাগই তোষামোদকারী। তাদের লোভ, লালসা, লিপ্সা শয়তান সমতুল্য। এহেন দুষ্ট জনেরা অন্যের বাড়া ভাতে ছাই ছিটিয়ে দিতে পারঙ্গম। তোষামোদে এরা এতই সিদ্ধহস্ত যে, এদের বেলায় ‘রাজা যত বলে পারিষদগণে বলে তার শতগুণ‘ প্রবাদসম বাক্যটি শতভাগ সত্য।
Posted ১১:৫৪ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০২ নভেম্বর ২০২৩
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh