ড. মাহবুব হাসান : | বৃহস্পতিবার, ১২ নভেম্বর ২০২০
নভেম্বর ৫ তারিখে নেভাদার ( ৬টি ইলেকটোরাল ভোট ) ভোট গণনা শেষ হতে পারে বলে জানানো হয়েছিলো। এ-রাজ্যে ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী জো বাইডেন রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের চেয়ে সামান্য ব্যবধানে এগিয়ে আছেন।
গণনাকৃত ভোটের মধ্যে বাইডেন পেয়েছেন ৫,৮৮,২৫২ আর ট্রাম্প পেয়েছেন ৫,৮০, ৫০৫। জো বাইডেন এগিয়ে আছেন ৭৭৪৭ ভোটে। প্রদত্ত ভোটের ৭৫% গণনা হয়েছে। বাকি ২৫% শতাংশ এখনো বাকি রয়েছে। জর্জিয়া রাজ্যে উভয়েই সমান ভোট ৪৯% পেয়েছেন । ২০১৬ সালে এ-রাজ্যে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিলারী ক্লিনটন পেয়েছিলেন ৪৮.৯% ভোট। এবার তারা আটলানটার শহরতলিতে জোর প্রচারণা চালিয়ে নিজেদের পজিশন ভালো করতে পেরেছেন। এ-রাজ্যে ১৬টি ইলেকটোরাল ভোট জিতে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে ডেমোক্র্যাটদের।
নর্থ ক্যারোলাইনায় এগিয়ে আছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প ১% ভোটে। ২০১৬ সালে হিলারী ক্লিনটন যে পরিমাণ ভোট পেয়েছিলেন, এবার বাইডেন তার চেয়ে ভালো করেছেন। ধারণা করা হচ্ছে অগণনাকৃত ৬% ভোট জয়-পরাজয় নিশ্চিত করবে। এখানে আছে ১৫টি ইলেকটোরাল ভোট । সেপ্টেম্বরের শেষ দিক থেকে এ-রাজ্যে মেইলে ভোট প্রদান শুরু হয়েছিলো। ধারণা করা হচ্ছে ডাকে পাওয়া ভোটের অধিকাংশই জো বাইডেনের । পেনসিলভানিয়াকে জয়-পরাজয় নির্ধারক রাজ্য হিসেবে গণ্য করা হয়েছিলো। কিন্তু এখন পরিস্থিতি অনেকটাই পাল্টে গেছে। প্রদত্ত ভোটের ৮৯% গণনা হওয়ার পর দেখা যাচ্ছে ট্রাম্প পেয়েছেন ৩২,১৫,৯৮৩ ভোট আর বাইডেন পেয়েছেন ৩০,৫১,৫৬৫ ভোট । শতকরা হিসেবে ট্রাম্প পেয়েছেন ৫০.৭% আর বাইডেন পেয়েছেন ৪৮.১%। বাকি ১১% ভোট মেইলে আসা। সেগুলোই মূলত জয় নির্ধারণ করবে। ১৯৮৮ সালের পর ২০১৬ সালেই কেবল ট্রাম্প বা রিপাবলিকানরা এ-রাজ্যে বিজয় পেয়েছিলেন। আর তার ব্যবধান ছিলো ৪৪, ২৯২ ভোটের। কিন্তু এবার পরিস্থিতি অনেকটাই পাল্টে গেছে। বাকি ১১% শতাংশ ভোটের অধিকাংশই ডাকে পাওয়া এবং তার ডেমোক্র্যাটদের বলে ধরা হচ্ছে। ফলে এ-রাজ্যে জো বাইডেন জিতে যেতে পারেন।
আমেরিকান জাতীয় নির্বাচনের ব্যাটেলগ্রাউন্ড ( নির্বাচনী যুদ্ধক্ষেত্র ) হিসেবে এখন ধরা হচ্ছে উল্লিখিত ৪টি রাজ্যকে। এ-পরযন্ত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জো বাইডেন ২৬৪ ইলেকটোরাল ভোট পেয়েছেন। আর ট্রাম্প পেয়েছেন ২১৪টি ইলেকটোরাল ভোট। এই চারটি রাজ্যের সব ইলেকটোরাল ভোট যদি ট্রাম্প জিততে পারেন, তাহলে তিনি দ্বিতীয়বারের মতো প্রেসিডেন্সি তার দখলে রাখতে পারবেন। চারটি রাজ্যের সম্মিলিত ইলেকটোরাল ভোটের সংখ্যা ৫৭টি। তাহলে ২১৪+৫৭= ২৭১টি। কিন্তু একটা রাজ্যে যদি ট্রাম্প হারেন, তাহলে জিতে যাবেন জো বাইডেন। শুধু নেভাদার ৬টি ভোট জিতলেই বাইডেনের প্রাপ্ত ভোট হবে ২৭০। ফলে ট্রাম্পের কপালে দ্বিতীয়বার প্রেসিডেন্সি আর থাকবে না। ধারণা করা হচ্ছে নেভাদাসহ জর্জিয়াতেও বাইডেন খুব ভালোভাবেই জয় পাবেন। আর পেন স্টেটের ২০টি ভোট যদি তিনি জিততে পারেন, তাহলে গতবার (২০১৬ সালে ) হিলারি ক্লিনটন যে গ্যারাকলে পড়েছিলেন এবার ট্রাম্প সেখানেই হাবাডুবু খাবেন। চারটিতেই যদি জো বাইডেন জেতেন, তাহলে ট্রাম্পের পরিণতি কেমন হবে তা সহজেই অনুমিত।
২.
ট্রাম্প আজ ১০ নভেম্বর হোয়াইট হাউসের সরকারি কর্মকর্তাদের একটি নির্দেশ যদিছেন যাতে প্রেসিডেন্ট-নির্বাচিত জো বাইডেনের টিম ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়ার কাছে ঘেঁষতে না পারে। আমরা জানি না, হেরে-যাওয়া ট্রাম্প তাদের এমন কথা বলেচেন যে, মিডিয়া কি করলো বা বললো, তার কোনো মূল্য নেই। অর্থাৎ সাংবাদিক , সংবাদপত্র, ইলেকট্রনিক্স মিডিয়া কেউই ট্রাম্পের কাছে মূল্যহীন। তিনি যে ক্ষমতা আঁকড়ে থাকতে চান, তার এই মনোভাব ও তার প্রকাশই তার প্রমাণ। ক্ষমতার মজা তিনি ভোগ করেছেন চার বছর এবং উপভোগও করেছেন। এই মজা তেকে তিনি বেরুতে পারবেন, এমনটা মনে হয় না। আর সরকারি লোকেরা অর্থাৎ অ্যাডমিনেট্রেশনের লোকেরা কেন ট্রাম্পের নির্দেশ এখনো মানবে, সেটা আমাদের বোধগম্য নয়। ট্রাম্পের মতো তারাও কি মনে করেন যে জো বাইডেন জেতেননি?
জর্জিয়ায় পুনরায় ভোগ গণনা হচ্ছে, সে কারণেই যদি ক্ষমতা হস্তান্তরের কাজটি তারা ঢিলে দিয়ে দেন, সেটা প্রমাণ করবে যে সরকারি কর্তারা ট্রাম্পের অনুগত বাহিনীতে পরিণত হয়েছেন। কিন্তু তারা যে রাষ্ট্রের সেবক অর্থাৎ জনগণের অর্থে তাদের বেতন ভাতা ও পজিশনের মান-শওকত চলছে, সেটা মনে রাখা উচিত। ধরা যাক, জর্জিয়ায় ট্রাম্প জিতে গেলেনে পুর্ণনায়, তাহলে তার ভোটপ্রাপ্তি বাড়বে, কিন্তু বাইডেনের লেজ তো তিনি ছুঁতেও পাবেন না। আমি আগেই বলেছি ওই চারটির তিনটিতে জিততে পারলেও তিনি জয় পাবেন না। যে অ্যারিজোনায় জয়ের লোভ তিনি ছাড়তে পারেননি, সেখানে তিনি কতো ভোটে হেরেছেন? সেখানে জো বাইডেন পেয়েছেন ১৬৫৫১৯২ ভোট। আর ট্রাম্প পেয়েছেন ১৬৪২ ৩৭৯ ভোট ১২ ৮১৩ ভোটে। তিনি তোিএগিয়ে ছিলেন, ধীরে ধীরে পিছিয়ে পড়েছেন।যে ১% শতাংশ ভোট এখনো গণনা করা হয়নি তার সব ট্রাম্প পেরেও তিনি বিজয়ী হতে পারবেন না।
আর ভোটের যে ট্রেইন্ড তাতে বাকি ভোটগুলোও জো বাইডেনের কপালেই জুটবে। ওপরে যে চারটি রাজ্য জর্জিয়া, পেনসিলভানিয়া, নেভাদা ও নর্থ ক্যারোলাইনার মধ্যে ট্রাম্প জয় পেতে পারেন নর্থ ক্যারোলাইনায়। তাহলে কিভাবে তিনি মনে করেন যে তিনি বিজয়ী হতে পারেন।
একজন অথর্ব টাইরান্ট যা যা করতে পারেন, যে সব পদক্ষেপ নিতে পারেন, তার সবই তিনি করছেন এবং এ-সব কথা আগেই প্রিডিক্ট করা হয়েছে। আর যাই হোক, পয়সা খাইয়ে যে ক্ষমতা টিকিয়ে রাখা যাবে না, সেটা তিনি না বুঝতে চাইলেও সরকারি কর্মকর্তাদের তা বোঝা উচিত। জনগণ যদি মুখ ফিরিয়ে নেয়, তাহলে কোর্ট-কাছারি করে লাভ হয় না।
নিউ ইয়র্ক
Posted ১২:৩১ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১২ নভেম্বর ২০২০
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh