আশরাফ উদ্দিন আহমেদ | বৃহস্পতিবার, ০৯ জুন ২০২২
বিচ্ছিন কোনো ব্যাপার নয়। যুক্তরাষ্ট্রের আভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক ও সামাজিক সমস্যা ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের সাথে যুক্ত হয়ে তৃতীয় বিশ্ব যুদ্ধের ক্ষেত্র প্রস্তুত হচ্ছে অত্যন্ত দ্রুত। মধ্যবর্তীকালীন নির্বাচনে প্রাক্তণ প্রেসিডেন্ট ও তাঁর দলের জন্য এমন সুযোগ সৃষ্টি করতে প্রেসিডেন্ট পুতিনের চাল কাজ দিতে পারে। রাশিয়ার প্রোপাগান্ডা যন্ত্রের কথাবার্তা শুনে এমনটিই মনে হয় । যুদ্ধের বর্তমান অগ্রগতি রাশিয়ার পক্ষে। ইউক্রেন এর পূর্বাঞ্চলে রাশিয়ানদের অবস্থা খুবই ভাল যদিও তুমুল যুদ্ধ অব্যাহত আছে।
লুহান্সক এলাকায় সেভেরুদনেস্তেক শহর রাশিয়ানদের পদানত প্রায়। সেখানে আটকে পড়া প্রায় ১২,০০০এর মত সাধারণ মানুষ খাবার ও পানীয় জলের অভাবে নিদারুণ কষ্টে আছে বলে জাতিসংঘ সূত্রে জানা গেছে। ইউক্রেনের যুদ্ধ পোল্যান্ড সহ বিভিন্ন ন্যাটো দেশগুলোতে ছড়িয়ে পরতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য Ñ এ দুটো দেশকে কড়া মাশুল গুনতে হবে -এমন হুমকি রাশিয়ার প্রোপাগান্ডা মেশিন নিত্যই উদ্গীরণ করছে । এদিকে যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে অত্যাধুনিক রকেট সরবরাহ করবে বলে ঘোষণা দিয়েছে । জার্মানি ও রাশিয়াকে সংযত আচরণ করতে বলেছে। গ্রীস তুরস্কে নরওয়ে ও সুইজারল্যান্ডের ন্যাটো সদস্য পদ লাভে বাঁধা দিলে ফল ভাল হবে না বলে কড়া সুরে হুশিয়ারি দিয়েছে। জার্মানি ও তুরস্ক এবং গ্রীসকে নিজেদের মধ্যেকার বিরোধ মিটিয়ে ফেলতে বলেছে যাতে ন্যাটোভুক্ত দেশগুলো এ সময়ে একসাথে রাশিয়া -ইউক্রেন ইস্যুতে কাজ করতে পারে।
মুদ্রাস্ফীতি যুক্তরাষ্ট্রে প্রকট সমস্যা সৃষ্টি করে চলেছে। ডলারের বিনিময় মূল্য সব দেশেই নিম্নমুখী; নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যের ঊর্ধ্বগতি সাধারণ মানুষের জন্য দুর্বিষহ কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
পেট্রোলের দাম গ্যলন ৬ ডলার বা ততোধিক। শিশু খাদ্য উৎপাদনে এমন ঘাঁটতির সম্মুখীন অতীতে এ দেশের মানুষ হয়নি। প্রেসিডেন্ট বাইডেন মুদ্রাস্ফীতি এবং সংশ্লিষ্ট সমস্যগুলোর জন্য পূর্বেকার সরকারকে দোষারোপ করছেন। তিনি নাকি ফেডারেল রিজার্ভের চেয়ারম্যানকে সহযোগিতা করেননি এমনকি তাঁকে মোটেও তোয়াক্ষা করতেননা । ফলে মুদ্রাস্ফীতির বিষয়টি নিয়ন্ত্রণহীনভাবে চলছিল । এহেন দোষারোপ কতটা যুক্তিসঙ্গত তা প্রশ্ন সাপেক্ষ। এ কথা ঠিক যে মুদ্রাস্ফীতি সমস্যা ফেডারাল রিজার্ভের চেয়ারম্যানেরই দেখার কথা কিন্তু এ কথা বলে ক্ষমতাসীন সরকার সমস্যাটি জটিল হওয়ার পূর্বেই ব্যবস্থা কেন নেয়া হলো না এ প্রশ্নটি এড়িয়ে যেতে পারেনা। দেরীতে হলে ও প্রেসিডেন্ট বাইডেন ফেডারাল রিজার্ভের চেয়ারম্যান জেরম পাওয়েলকে ডেকে আলোচনা করাটা যথার্থ হয়েছে। তবে, পেট্রোলের মূল্য কমানোর তেমন কোন ফলপ্রসূ উদ্যোগ বাইডেন প্রশাসন আজতক ও গ্রহণ করেনি। সকল শ্রেণীর মানুষেরই নাভিশ্বাস ওঠেছে। তেলের যে রিজার্ভ সংরক্ষণ আঁধারগুলোতে আছে তা দিয়ে আগামী ৬০ বছরের ও বেশী চলা যাবে। প্রশাসন এগুলোতে এখনো হাত দেয়নি। সৌদি আরব ও ভেনেজুয়েলার শরণাপন্ন হওয়ার প্রেসিডেন্টের অভিপ্রায় রিপাবলিকান দল ছাড়াও বিভিন্ন মহলের সমালোচনার মুখে আপাতত বন্ধ ।
জ্বালানি তেল এবং শিশু খাদ্য ঘাটতি অনতিবিলম্বে মোকাবেলা করতে সক্ষম না হলে মিড-টার্ম ইলেকশনে ডেমোক্র্যাটিক দল বিপাকে পরবে । যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি সেক্রেটারি জ্যানেট ইয়েলেন সিনেটে গত ৩১ মে, ২০২২ তারিখে স্পষ্ট করেই বলেছেন যে আমেরিকা এ সময়ে পান্ডেমিকের ফলশ্রুতিতে সাপ্লাই চেইনে যে দুর্বিষহ সমস্যার সম্মুকিন হয়েছিল তা কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণ ও বর্ণনাতীত আগ্রাসন তেল এবং পণ্য, বিশেষত খাদ্য বাজারে সরবরাহ ব্যবস্থায় চরম বিপর্যয়ের সৃষ্টি করেছে। মনে করার সঙ্গত কারণ আছে যে এ অবস্থা সামাল দেয়ার জন্য প্রেসিডেন্ট বাইডেনের এ বিল তেমন কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারবেনা কারণ মুদ্রাস্ফীতি ও অর্থনৈতিক মন্দার সাথে বিপর্যস্ত সরবরাহ চেইন যুক্ত হয়ে যে জগাখিচুড়ি অবস্থা তা সামাল দেয়া কঠিন। চীনের প্রতি যে নরম সুর তা কতটুক কাজে দেবে তা প্রশ্নবিদ্ধ। চীন ও রাশিয়া মিত্রতা, তাইওয়ান প্রশ্নে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের কড়া কথাবার্তা, তদুপরি প্রাক্তন প্রেসিডেন্টের রেখে যাওয়া চীন নীতি সব আমলে এনে বাইডেনকে যে ছাড় দিতে হবে তা বর্তমান সময়ের আভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে গ্রহণযোগ্য হবে না বলেই মনে হয়।
আন্তর্জাতিক পরিবেশ ও পরিস্থিতি ও বাইডেনের তেমন অনুকূলে নেই। মিত্র তুরস্ক পূর্ব ইউরোপীয় কয়েকটি দেশের ন্যাটো অন্তর্ভুক্তিতে যে ভাবে বাঁধা সৃষ্টি করার পায়তারা করছে তাতে ন্যাটোর সংহতি সমস্যাসঙ্কুল হতে পারে। ইউক্রেনে রাশিয়াকে আদাজল আচ্ছা করে খাইয়ে নাকানি-চুবানি না দিতে পারলে ন্যাটোর ভবিষ্যৎ প্রশ্নের মধ্যে নিপতিত হবে। মিড-টার্ম নির্বাচনে ভরাডুবি ছাড়া ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মোড়লিপনা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত হতে পারে । গণতন্ত্র রাশিয়া-চীন সাম্রাজ্যবাদের নিষ্পেষণে কবলিত হওয়ার পর্যায়ে চলে যাবে। পুতিনের মিত্র ট্র্যাম্প পুনরায় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাকে ও উড়িয়ে দেয়া যায় না।
Posted ৯:৫৭ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৯ জুন ২০২২
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh