ড. আশরাফ উদ্দিন আহমেদ | বৃহস্পতিবার, ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১
(১ম অংশ) : ২০২০ নির্বাচনে হাউসে রিপাবলিকানদের অবস্থা শোচনীয় হওয়ার সম্ভাবনাই ছিল বেশী কারণ ডেমোক্রেট স্বপক্ষ শক্তিকেই প্রবল বলে মনে হচ্ছিল। কিন্তু নির্বাচন হয়ে গেলে দেখা গেল কোন রকমে সংখ্যাধিক্য দল হিসেবে টিকে থাকলে ও বেশ কিছু আসন হারিয়েছে। অপর পক্ষে, রিপাবলিকান দল হাউসে আসন বাড়াতে সক্ষম হয়েছে। ডেমোক্রেটরা ৪৩৫ টি মোট আসনের মধ্যে ২৩৩ টি আসন নিয়ে ২০২০ নির্বাচনে নামলে ও বর্তমানে তাদের জেতা আসনের সংখ্যা ২২২। রিপাবলিকান দল পূর্বেকার ৩ টি আসন হারালে ও ১৩ টি আসন ২০১৮র সংখ্যায় যোগ করতে সমর্থ হয়। দলটির বর্তমানে ২১২ আসন নিয়ে ডেমোক্রেটডের কাছাকাছি অবস্থানে আছে। নিউ ইয়র্কের ওসেগো কাউন্টির আসনের ভোটের ফলাফল এখনো আইনি জটিলতায় চূড়ান্ত করা যায়নি। তাই হাউসে আসনটি শূন্য রয়েছে।
২০২২ নির্বাচনে দল দুটো’র অবস্থান কেমন হবে এ প্রশ্ন নিয়ে আলোচনায় আসার পূর্বে সিনেট নিয়ে কিছু কথা বলা দরকার। আইন প্রণয়নের এ কক্ষে বর্তমানে দু দলেরই সমান সমান , অর্থাৎ ৫০-৫০ অবস্থান। কোন ইস্যুতে টাই হলে ভাইস-প্রেসিডেন্টের ভোটেই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হবে। এ হিসেবে ডেমোক্রেটিক দলই সংখ্যাগরিষ্ঠ। ২০২২ নির্বাচনে ৩৫ টি আসনে ভোটাভোটি হবে। হাউসের সব কটিতেই, অর্থাৎ ৪৩৫ আসনেই নির্বাচন হবে। দুটি দলের জন্যই ২০২২ নির্বাচন অত্যন্ত। ক্ষমতাসীন ডেমোক্রেটিক দলের সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ। করোনা প্যানডেমিকের যে অবস্থা তা সামাল দেয়া সুকঠিন কাজ। ভ্যাকসিন বাণিজ্য সম্ভারে পরিণত হওয়ার পথে।
আর মানবিক ব্যবহার ও সমস্যাসঙ্কুল। আভ্যন্তরীণ জনগোস্টির সকল সামাজিক, অর্থনৈতিক ও বর্ণ ভিত্তিক শ্রেণীগুলো ভ্যাকসিন সমানভাবে পাচ্ছেনা বা সুযোগের সদব্যবহার করতে পারছেনা। আফ্রিকান-আমেরিকান, ইন্ডিয়ান নেশন অন্তর্ভুক্ত এলাকার লোকজন শ্বেতাঙ্গদের মত সুবিধে পাচ্ছেনা এমন কথা ও শোনা যাচ্ছে। প্রেসিডেন্ট বাইডেন প্রস্তাবিত করোনা কালীন ত্রাণ প্যাকেজ অনুমোদন সংক্রান্ত দ্বিপাক্ষিক আলোচনার অগ্রগতি তেমন কোন সাফল্যের মুখ দেখেনি । দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার অভাবে অর্থনৈতিক মন্দার আশু সম্ভাবনা তিরোহিত করার সরকারী প্রচেষ্টা ও মুখ থুবড়ে পড়ে আছে। ব্যবসা বাণিজ্য চাঙ্গা হচ্ছে এমন কোন আলামত ও দেখা যাচ্ছে না । করোনা ভীতি না কমলে অর্থনীতি সচল হবে বলে ভাবার তেমন কোন কারণ দৃশ্যপটে নেই । স্টক মার্কেটের অবস্থা ভাল নেই। স্কুল কলেজ খুলবে এমন কথা অনেক ষ্টেটে জোরেশোরে শোনা যাচ্ছে । সবই নির্ভর করছে দু দলের সমজোতা ও সদিচ্ছার উপর । প্রাক্তন প্রেসিডেন্টের ইম্পিচমেন্ট ঘটনায় ইতি টানা দেশের জনসাধারণ, অর্থনীতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অভিবাসন, ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রেই শুভ সম্ভাবনা নিয়ে আসবে। ২০২২ সালে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচন প্রস্তুতির পালা শুরু হয়ে গেছে।
ডেমোক্রেটিক পার্টি ইম্পিচমেন্ট , ১.৯ ট্রিলিয়নের ত্রাণ প্যাকেজ, সর্বোপরি কোভিড -১৯ মৃত্যুহার হ্রাস করা সহ ও ভ্যাকসিন প্রাপ্তি , বিতরণ এবং যথাযথ ব্যবহার ইত্যোকার বিষয়গুলো নিয়ে ব্যস্ত থাকার সুযোগ নিয়ে রিপাবলিকান দল সুবিধাজনক অবস্থায় আছে। এস্টাব্লিসমেন্ট জিওপি প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বুশের সহযোগিতায় এবং রিপ্রেসেন্টটেটিভ চেনী’র নেতৃত্বে ভালই আগুয়ান। রেফ অ্যাডাম কিনজিঙ্গার প্যাক চালু করে ট্র্যাম্প অনুসারীদের বিরুদ্ধে লড়ার জন্য ফান্ড তোলার ব্যবস্থা করে ফেলেছেন। সিনেটর হউলি ও টেড ক্রুজ কেপিটল বিল্ডিং ও হল আক্রমণকারীদের প্রত্যক্ষ মদদ দেয়ার কারণে ট্র্যাম্প স্বপক্ষ উগ্র বর্ণবাদী ও কট্টর জাতীয়তাবাদী শক্তির কাছে বাধা পড়ে গেছেন বলে মনে হচ্ছে। হাউসে বিরোধী দলের নেতা ম্যাককার্টি প্রাক্তন প্রেসিডেন্টের সাথে দেখা করে তাঁর সাথেই গাট বেধেছেন। সিনেটের বিরোধী দলীয় নেতা সিনেটর ম্যাককনেল কট্টর ট্র্যাম্প সমর্থক রিপ্রেজেনটেটিভ মার্জারি গ্রীনকে মিথ্যেবাদী আখ্যায়িত করেই ক্ষ্যান্ত হননি, মহিলাকে চরম মনোভাবাসম্পন্ন বিভ্রান্তি সৃষ্টিকারী কন্সপিরাচি তাত্ত্বিক হিসেবে তার নিন্দাবাদ করেছেন । অ্যান্টি- সেমেটিক ও ইসলাম বিরোধী মনোভাব প্রকাশের জন্য ও ম্যাককুনেল মার্জারি টেলর গ্রিনের সমালোচনা করেন। এ ধরণের সদস্য দলের জন্য “ক্যান্সার” স্বরূপ বলে মন্তব্য করেন এ ঝানু রিপাবলিকান।
ডেমোক্রেটিক দলে ও আভ্যন্তরীণ বিভেদ, পারস্পরিক বিরোধিতার কমতি নেই। প্রেসিডেন্ট নমনীয় মধ্যপন্থী হলে ও একটি অংশের নেতা ও সিনেট বাজেট কমিটির চেয়ারম্যান সিনেটর বার্নি স্যান্ডারস প্রগতিশীল। প্রেসিডেন্ট পদে জো বাইডেনের প্রতিদন্ধি এ নেতার অনুসারীর সংখ্যা ও অনেক । তাঁর প্রোগ্রামের স্বপক্ষে থাকার শর্তে যে আঁতাত তাঁর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তন, উদার ইমিগ্রেশন ও স্বাস্থ্য সুবিধে সংক্রান্ত বিষয়গুলো। প্রেসিডেন্ট এ সব বিষয়ে ছাড় দেয়া শুরু করেছেন। সেন্ডারসের অনুসারীরা অনেক সুসংহত দলের অন্য গ্রুপগুলোর তুলনায়। অ্যালেকজান্ডার অকাসিও কর্টেজ এর উদীয়মান তরুণ নেতারা এসটাব্লিশমেন্ট ডেমোক্রেটদের জন্য চ্যালেঞ্জ হতে পারেন। আদর্শ ও মর্জি মেজাজে এরা ভীষণ তেজি স্বভাবের । আকাসিও ২০২২ সিনেট নির্বাচনে নিউ ইয়র্কের বয়োজ্যেষ্ঠ নেতা ও সিনেট লিডার চাক সুমারকে চ্যালেঞ্জ করলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
Posted ৭:৩৪ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh