ড. আশরাফ উদ্দিন আহমেদ | বৃহস্পতিবার, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১
দ্বিতীয় অংশ : প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ট্র্যাম্পকে ইমপিচ করার দ্বিতীয় প্রচেষ্টা ও ব্যর্থ হওয়ায় ডেমোক্রেটরা, বিশেষত স্পীকার নান্সি পেলোপ্সি, দারুণ হতাশ হয়েছেন সত্যি কিন্তু এ ঘটনা এবং ৬ ই জানুয়ারির ক্যাপিটল হল আক্রমণের পরিপ্রেক্ষিতে নিশ্চিতভাবে রিপাবলিকান পার্টিতে ভাঙ্গনের আলামত শুরু হয়ে গেছে। ট্র্যাম্পের অনুসারীরা রাজনীতির বাজার সরগরম করে রাখছেন যাতে পার্টির নেতৃত্ব প্রাক্তন প্রেসিডেন্টের হাতে থাকে। প্রভাবশালী নেতৃবৃন্দ, যেমন সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম, সিনেটর ট্রেড ক্রুজ , হাউজ মাইনরিটি লিডার কেভিন মেকারতি প্রমুখ নেতাগণ ট্রাম্পকেই নেতা হিসেবে মেনে চলার পক্ষপাতী। রেহাই পাওয়ার পরবর্তীতে রিপাবলিকান দলের যারা ইম্পিস করার সপক্ষে ভোট দিয়েছিলেন (১০ জন হাউজ ও ৭ জন সিনেট সদস্য)তাদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক ব্যবস্থা নেয়ার কাজ ইতোমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে। তাদের নিজেদের হোম ষ্টেটে হেয় ও রাজনৈতিক ভাবে হেনস্থা তথা কোণঠাসা করার জন্য হীন ষড়যন্ত্রের আশ্রয় নেয়া হচ্ছে।
বিভক্তির এই যে শুরু তা রিপাবলিকান দলকে ভাঙ্গনের কোন পর্যায়ে নিয়ে যাবে এ মুহূর্তে সঠিকভাবে না বলা গেলে ও আন্তকোন্দলে দলটি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। মধ্যবর্তীকালীন নির্বাচনের পূর্বে এসব দন্ধ সহনীয় পর্যায়ে না নিয়ে আসতে পারলে ভরাডুবির সমূহ সম্ভাবনা । প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ট্র্যাম্পের নেতৃত্ব দলটির ভাঙ্গন রোধ করতে পারবে না বরং তাঁর সংক্রিপ্ততা সমস্যা গভীরতর করবে।
ফেব্রুয়ারী মাসের ১৩ যে ইম্পিচমেনট ট্রায়ালে সিনেট মাইনরিটি নেতা মিচ মেককোনেল জনতাকে উত্তেজিত করে বিদ্রোহ ও ‘ ইন্সারেক্সন’ এর আশ্রয় নেয়ার অভিযোগে ট্র্যাম্প অপরাধী নন – এ মর্মে ভোটে দিলে ও বক্তৃতায় ট্রাম্পকে নৈতিক ভাবে এ হীন কাজের জন্য দায়ী করে ভরৎসনা করেছেন । ঐদিন সিনেট ফ্লোরে ভোটোত্তর বক্তব্যে তিনি বলেন যে সন্দেহাতীত ভাবে বলা যায় প্রেসিসেন্তন ট্রাম্পই বাস্তবিক এবং নৈতিক ভাবে ঘটনার উস্কানিদাতা। আরও বলেন , যারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে তাঁরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করত যে প্রেসিডেন্টের ইচ্ছে এবং নির্দেশ মতোই তারা সব কিছু করেছে ।
মিচ ম্যাক্কুনেল যাই বলেন না কেন বেশীর ভাগ রিপাবলিকান প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকেই নেতা হিসেবে স্বীকার করেন । তবে, লিন্ডজে গ্রাহাম সত্য কথাই বলেছেন যে ২০২২ ইলেকশনে ট্রাম্পকে অবলম্বন করেই বৈতরণী পার হতে হবে। তাঁর বিকল্প নেতা রিপাবলিকান পার্টিতে এখন ও নেই, এমন ধারনা অনেকের । দলটিতে তাঁর মত বিশাল সাপোর্ট বেস (হেরে ও ৭৫ মিলিয়ন ভোট পেয়েছিলেন) এখনো আর কারো নেই । উগ্রপন্থী গ্রুপগুলো তাঁকে অন্ধ ভাবে অনুসরণ করে । এসব বিবেচনায় সিনেটর গ্রাহাম , সিনেটর ক্রুজের মত কুশলী নেতাগণ ট্র্যাম্পকে ব্যবহার করতে চান । তবে , ২০২২ পরবর্তীতে , অর্থাৎ ২০২৪ প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচনে ট্র্যাম্প যে পার্টির জন্য আপদ হবে সে ব্যাপারে অনেক রিপাবলিকান নেতাই সজাগ ।
বিভিন্ন মহল থেকে প্রাক্তন প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে মামলা রজু ইতোমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে । ডেমোক্র্যেটিক নেতা রিপ্রেসেন্টটেটিভ বেনি থম্পসন ১৮৭১ কেকেকে (Ku Klux Klan) অ্যাক্টের আওতায় ষড়যন্ত্র করে কংগ্রেস এর কাজ ব্যাহত এবং জোর করে অধিবেশন বানচাল করার কারণে ট্র্যাম্পের বিরুদ্ধে মামলা ঠুকে দিয়েছেন । তাছাড়া , সুপ্রিম কোর্ট ট্র্যাম্পের ইনকাম ট্যাক্স ফাঁকি দেয়া মামলার ব্যাপারে পূর্বে দেয়া নিষেধাজ্ঞা তুলে নতিপত্র অবমুক্ত করার সিদ্দান্ত দেয়ার পরিপ্রেক্ষিতে নিউ ইয়র্কে আইনজীবীরা মামলা পুনরিজীবিত করছেন বলে জানা গেছে । ম্যানহাটানের জেলা এটর্নি সাইরাস ভ্যান্স জুনিয়র ট্র্যাম্পের ব্যবসা সংশ্লিষ্ট আর্থিক অনিয়মের বিষয়ে যে ক্রিমিনাল মামলা করেছেন সেটি প্রাক্তন প্রেসিডেন্টের জন্য সমূহ বিপদ ডেকে আনতে পারে বলে অনেক মহলই মনে করছে । এতে ট্রাম্পের বিগত অ্যাট বছরের পার্সোনাল এবং বিজনেস লেনদেনের আর্থিক রেকর্ড সমূহের চুলচেরা পরীক্ষা নিরীক্ষা হবে । ট্যাক্সে অনিয়ম , ইন্সুরেন্স ফ্রড ইত্যাদি ইস্যুসমূহ বের করার সর্বাত্মক চেষ্টা আইনজীবীরা করবেন। ট্র্যাম্পের হিসাব নিকেশ যে প্রতিষ্ঠান রাখছে , মাজারস ইউএসএ , পুরোমাত্রায় সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করেছে বলে সংবাদ মাধ্যমগুলোতে এসেছে ।
তাছাড়া , প্রণয় ও কাম ঘটিত ব্যাপারে বেশ ক’জন মহিলার করা মামলাগুলো আবার সামনে আসবে বলে ধারনা করা হচ্ছে । পর্ণো তারকা স্টরমি ডেনিয়েলসকে সামাল দেয়ার জন্য টাকা পয়সার (হ্যাস মানি)বিষয়টি ও পুনরায় আসতে পারে । ফেঁসে যেতে পারেন ট্র্যাম্প । বেশ কটি ট্র্যাম্প মালিকানাধীন ও পরিচালিত প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যেতে পারে । প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন সময়ে জাস্টিস ডিপার্টমেন্টের ক্রিমিনাল বিচারের আওতামুক্ত ছিলেন যার জন্য কেউ তাঁর কেশাগ্র স্পর্শ করতে পারেনি। নাগরিক ট্রাম্পকে যে কেউ আদালতের কাঠগড়ায় তুলতে পারবে । সব মিলিয়ে , ট্র্যাম্পের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ ও অনিশ্চিত ; রিপাবলিকান দলের কাণ্ডারির ভূমিকায় কত দিন থাকতে পারবেন তা একমাত্র আল্লাহই মালুম ।
Posted ৭:৪৬ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh