আশরাফ উদ্দিন আহমেদ : | বৃহস্পতিবার, ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি বছরই বিদেশ থেকে প্রচুর সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রী আসে। এখানকার শিক্ষা ব্যবস্থার মান খুবই উন্নত ও আধুনিক। বিশ্বের সেরা বিশ্বিদ্যালয়গুলোর অধিকাংশ এ দেশেই অবস্থিত। ইউনেস্কোর হিসেবে যে দশটি দেশে, যুক্তরাষ্ট্র, অষ্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, রাশিয়া, কানাডা, ফ্রান্স, সংযুক্ত আরব আমিরাত, জাপান, ও চীন ২০১৯ সালে ৬ মিলিয়ন ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট এসেছে তার মধ্যে খোদ যুক্তরাষ্ট্রেই ৯৭৬,৮৫৩ সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রী এসেছে। বাংলাদেশ থেকে ও ইদানীং সময়ে প্রচুর সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রী আসছে। বিগত এক দশকে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা তিনগুণেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১১-২০১২ শিক্ষাবর্ষে আমেরিকাতে পড়তে যাওয়া বাংলাদেশি শিক্ষার্থী ছিল ৩ হাজার ৩১৪ জন যা ২০২১-২০২২ শিক্ষাবর্ষে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৫৯৭ জন হয়েছে। প্রাক্তণ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বিনির্মিত ট্রাম্প বিশ্ববিদ্যালয় টেকেনি।
অসীম ক্ষমতাধর প্রসিডেন্ট ভেবেছিলেন অঢেল বৈভব আসবে ‘ফর প্রফিট’ ধরণের এই প্রতিষ্ঠানটি থেকে । মানসম্মত শিক্ষা প্রদানের চেয়ে ছাত্র-ছাত্রী আকৃষ্ট করার মোক্ষম পন্হা হিসেবে ডলারের বিনিময়ে রিয়েল এষ্টেট বিষয়ে স্বল্প সময়ে সহজলভ্য সার্টিফিকেট/ডিগ্রী প্রদানের মিশন নিয়ে মাঠে নেমে ক্ষমতাধর মানুষটির প্রতিষ্ঠানটি টিকতে পারেনি । রাজনৈতিক কারণ ছাড়া ও নিয়ম-কানুনের তোয়াক্কা না করা , এবং সর্বোপরি অতি উচ্চমূল্যে ডিপ্লোমা/ডিগ্রী প্রদান ট্রাম্প ইউনিভার্সিটির জন্য বিপত্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল । ২০০৫ এ চালু করা প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন সময় নাম বদলিয়ে ও আইনের হাত থেকে পরিত্রাণ পায় নি ।
১৯৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত আশা (অঝঅ) কলেজ শুরুতে কম্পিউটার প্রোগ্রামিং শেখানোর জন্য চালু করা হয়েছিল। একাউন্টিং, কম্পিউটার প্রোগ্রামিং, ইনফরমেশন টেকনলজি, এবং মেডিক্যাল এসিস্টিং ডিগ্রী প্রদান করতে পারবে এ মর্মে নিউইয়র্ক স্টেট বোর্ড অব রিজেন্ট অনুমতি দেয়। ফর প্রফিট টাইপের কলেজটি প্রায় ৪,৪৫০ জন ছাত্র-ছাত্রী অধ্যয়ন করছে। এর মধ্যে ৫০০ জনের মত বাংলাদেশ থেকে ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে এসেছে বলে জানা যায়।
বর্তমানে ১৬টি অধ্যয়ন বিষয়ে কোর্স চালু আছে। নিউইয়র্ক শহরে তিনটি ক্যাম্পাস এবং ফ্লোরিডা মায়ামী ডেইট কাউন্টি একটি ক্যাম্পাসে ক্লাস অনুষ্ঠিত হয়। কলেজটি আন্ডার গ্রাজুয়েট ডিগ্রী প্রদান করে। কলেজটির মূল জনবল হলো প্রেসিডন্ট, ১ জন প্রভোষ্ট সহ ২৯০ জন ফ্যাকাল্টি (৯০ জন ফুলটাইম ও বাকী পার্ট টাইম। ইদানীং সময়ে কলেজটির খুব খারাপ সময় যাচ্ছে। মিডল স্টেটস কমিশন অন হাইয়ার এডুকেশন প্রদত্ত এক্রেডিশন ২০২৩ তে অনিয়ম ও কমিশনের বিধি বহির্ভূতভাবে করায় মান লঙঘনের অভিযোগে এ বছরই (২০২৩) এক্রেডিশন প্রত্যাহার করা হবে বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশের বেশ ক’জন শিক্ষানুরাগী সমাজকর্মীর নিউইয়র্কে উচ্চশিক্ষা প্রসার করার বাসনা ইদানীং সময়ে পত্র-পত্রিকায় ফলাও করে ছাপা হচ্ছে । সভা-সমিতিতে ও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে । উপরে যে দুটো উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে তা আমাদের উদ্যোগকে নিরাশ করার জন্য নয়; সাবধানতার সাথে নিয়ম-কানুন মেনে আগুয়ান হতে হবে- এমন ইংগিত দেয়ার জন্য । প্রাইভেট ফর-প্রফিট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সহজে টাকা-পয়সা বানানোর কোন ব্যাপার না আনাটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে । ক্ষমতাধর ট্রাম্প তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় ঠেকাতে পারেন নি – এ উদাহরণ মনে রাখা ভালো হবে ।
যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশী শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ছে। দেশটিতে শিক্ষার্থী পাঠানোর ক্ষেত্রে বিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৩তম বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। ঢাকার ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে গত ৩১ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত ‘আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয় মেলা’-র উদ্বোধনকালে তিনি এ তথ্য জানান। যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে যেতে পারেন এমন সম্ভাব্য শিক্ষার্থী ও দেশটির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রতিনিধি নিয়ে আয়োজিত সবচেয়ে বড় শিক্ষা মেলা এটি। পড়তে যাওয়া বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের ক্রমবর্ধমান সংখ্যার বিষয়টি তুলে ধরে পিটার হাস বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশীদের ক্রমবর্ধমান সংখ্যা দেখে আনন্দিত, যারা তাদের সম্ভাবনা উন্নত করতে যুক্তরাষ্ট্রকে পড়াশোনার জন্য বেছে নিয়েছে। এ শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।’
বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি প্রক্রিয়ার বিস্তারিত তথ্য জানাতে এডুকেশনাল প্রোগ্রামস (ইডিপ্রোগ্রামস) এর সঙ্গে যৌথভাবে আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয় মেলার আয়োজন করেছে ঢাকার আমেরিকান দূতাবাস। বাংলাদেশি শিক্ষার্থী ও আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রতিনিধিদের নিয়ে আয়োজিত এ মেলায় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সাড়ে ৩ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছেন।
‘এডুকেশনইউএসএ’ যুক্তরাষ্ট্র সরকারের স্টেট ডিপার্টমেন্টের শিক্ষাবিষয়ক একটি বৈশ্বিক নেটওয়ার্ক। সারাবিশ্বে ৪২৫টিরও বেশি পরামর্শ কেন্দ্র রয়েছে সংস্থাটির। বিশ্বব্যাপী শিক্ষার্থীদের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে অধ্যয়ন সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরার মাধ্যমে আমেরিকার উচ্চতর শিক্ষার প্রসারে কাজ করছে সংস্থাটি। চট্টগ্রামেও এ মেলার আয়োজন করেছিল ঢাকাস্থ যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস। ২৯ জানুয়ারি রোববার চট্টগ্রামের রেডিসন ব্লু হোটেলে এ মেলার আয়োজন করা হয়েছিল। মেলায় আগত শিক্ষার্থীরা যুক্তরাষ্ট্রের ১২টি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় তথ্য জানার সুযোগ পেয়েছেন।
মেলায় অংশগ্রহণকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হলো-কলোরাডো স্টেট ইউনিভার্সিটি, এমব্রিরিডল স্টেট ইউনিভার্সিটি, আইওয়া স্টেট ইউনিভার্সিটি, কুইনিপিয়াক স্টেট ইউনিভার্সিটি, স্টোনি ব্রুক ইউনিভার্সিটি, ট্রাইন ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অফ অ্যারিজোনা, ইউনিভার্সিটি অফ ডেলাওয়ার, ইউনিভার্সিটি অফ নিউ হ্যাভেন, ইউনিভার্সিটি অফ সাউথ ডাকোটা, আর্লিংটনে অবস্থিত ইউনিভার্সিটি অফ টেক্সাস, ওয়েস্টার্ন কেনটাকি ইউনিভার্সিটি।
Posted ১:০৩ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh