ড. আশরাফ উদ্দিন আহমেদ | বৃহস্পতিবার, ১৮ মার্চ ২০২১
বিশ্বে কভিড -১৯ প্যান্ডেমিকের প্রাদুর্ভাবের বছর পূর্তি হয়ে গেল কিছু দিন পূর্বে । এক বছরের ও পূর্বে চীনের উয়ান (Wuhan) প্রদেশে শুরু হওয়া এ মহামারী আজ মার্চ ১৬ , ২০২১ তারিখ পর্যন্ত সারা বিশ্বে ২.৬ মিলিয়ন লোকের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে ; আক্রান্তের সংখ্যা ১২০.৩ মিলিয়নের ও বেশী । সারা বিশ্বে ভ্যাক্সিন নিয়েছে ৩৮১ মিলিয়নের মত মানুষ। যুক্তরাষ্ট্রে এ সংখ্যা এ সময়ে আক্রান্ত ২৯,৫২৬,৫১৮ জন ; মৃত্যুবরণ করেছে ৫৩৬, ৪৯৪ জন। ১১০,৭৩৭,৮৫৬ সংখ্যক আমেরিকান ভ্যাক্সিন শট নিয়েছেন যার মধ্যে পরিপূর্ণভাবে, অথ্যাৎ প্রয়োজনীয় সংখ্যক শট নিয়েছেন ৩০ মিলিয়নের কিছু বেশী । মোট ১৪২, ৯১৮,৫২৫ ভ্যাক্সিন বিতরণ করা হয়েছে। ইদানীং প্রতিদিন ২.৪৩ মিলিয়ন আমেরিকান ভ্যাক্সিন নিচ্ছেন। মোট জনসংখ্যার ২২% বা ৭২ মিলিয়ন লোককে ভ্যাকসিন দেয়া হয়েছে।
প্রায় ৪৬% আমেরিকান ভ্যাক্সিন নেবে না বলে ধারনা করা হচ্ছে। এদের অধিকাংশই রিপাবলিকান যারা প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ট্র্যাম্পের সমর্থক বলে সংবাদ মাধ্যমে বলা হচ্ছে। বাকীরা সংখ্যালঘু বা বিভিন্ন মাইনরিটি জনগোষ্ঠীর। তাছাড়া , ভ্যাক্সিন প্রস্তুতকারী ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলোর মধ্যে ও বাজার দখল এবং গুণগত মান নিয়ে প্রচারে একধরনের রাজনীতির খেলা চলছে বলে অনেক মহল মনে করে। ইউরোপে বিভিন্ন দেশে ইতোমধ্যেই অ্যাসটরোজেনেকা’র AstraZeneca) তৈরি ভ্যাকসিনের মান নিয়ে নেতিবাচক কথাবার্তা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রে ও ফাইজার এবং মডারনা’র টু শট ভ্যাকসিনের সাথে জনসন অ্যান্ড জনসন কোম্পানির ওয়ান শট ভ্যাকসিনের তুলনা করে শেষোক্তটি কম কার্যকরী বলে অনেকে বলেছিলেন। তবে, জোরেশোরে প্রচারাভিযান এ ধারনাকে অনেকটা অমূলক বলে প্রতীয়মান করতে সক্ষম হয়েছে বলে মনে হয়। ইন্ডিয়ানাতে জনসন এন্ড জনসন এর মাত্র এক শটের ভ্যাকসিনের জনপ্রিয়তা বাড়ছে মর্মে সম্প্রতি রয়টারের এক খবরে প্রকাশ পেয়েছে । এমন খবর মেন (Maine) ষ্টেট থেকে ও পাওয়া গেছে।
প্রেসিডেন্ট বাইডেন আশা করছেন যে ফাইজার ইনক ও অংশীদার প্রতিষ্ঠান বায়োএন টেক এসই (BioNTech SE) , মডার্না ইনক এবং জনসন এন্ড জনসন তাদের প্রতিশ্রুতি মোতাবেক ২০২১ সালের মে মাসের শেষ নাগাদ ৫০০ মিলিয়ন কভিড -১৯ শটস প্রস্তুত রাখলে এ প্যান্ডেমিকের বিস্তার রোধ অনেক সহজ হয়ে যাবে । তবে, ভাইরাসটির নবনব রূপান্তরিত ধরণ (variants) সমস্যার সৃষ্টি করছে। তার চেয়ে ও গুরুতর সমস্যা হচ্ছে তাদের নিয়ে যারা আধুনিক বিজ্ঞান যুগে বসবাস করে ও অন্ধ বিশ্বাস , গোঁড়ামি ও অতি রাজনৈতিক সংপৃক্তি দেখাতে গিয়ে এক ধরনের গোয়ারতুমি করছেন। এ দলে আছেন প্রায় ৪১ শতাংশ রিপাবলিকান । সাম্প্রতিক এক জরিপে (NPR.ORG, Calls Grow For Trump To Urge Supporters To Get COVID-19 Vaccine) উল্লেখ করেছে যে প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ট্র্যাম্পের ৪৭ শতাংশ সমর্থক বলেছে তাঁরা কোন ভ্যাক্সিন নেবে না । এ সব সমর্থক ভুলে গেছেন যে ট্র্যাম্প নিজে ও বেশ আগেই ভ্যাকসিন নিয়ে নিয়েছেন । অনেকেই এ সব সমর্থকদের বলছেন যে অন্তত দেশপ্রেমের খাতিরে ভ্যাকসিন নিয়ে আপনাদের কারণে অন্যরা যাতে সংক্রমিত না হয় সে কর্তব্যটুকু পালন করেন ।
প্রেসিডেন্ট বাইডেন সহ বিভিন্ন ব্যাক্তিবর্গ দলীয় রাজনীতি ও বিদ্বেষের ঊর্ধ্বে উঠে প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ট্র্যাম্পের কাছে অনুরোধ রেখেছেন যাতে তিনি তাঁর সমর্থকদের করোনা ভাইরাস ভ্যাকসিন নিতে বলেন । এ ব্যাপারে অ্যান্থনি ফসি’র (Dr. Anthony Fauci) বক্তব্য প্রণিধানযোগ্য । তিনি ঘচজ সার্ভের তথ্য উল্লেখ করে গত রোববারের (১৪ মার্চ, ২০২১) এনবিসি’র Meet the Press অনুষ্ঠানে বলেন, “I hope he does, because the numbers that you gave are so disturbing „ How such a large proportion of a certain group of people would not want to get vaccinated merely because of political consideration, it makes absolutely no sense. „ WeÕve got to dissociate political persuasion from the from whatÕs commonsense, no-brainer public health things.”
উপরের ব্যক্তবের সাথে ফক্স নিউজ সান ডে’তে ফাউচি আরো বলেন , যেখানে অনেক সাবেক প্রেসিডেন্টগণ, যেমন , বারাক ওবামা, জর্জ ডব্লিও বুশ, বিল্ব ক্লিনটন, এমনকি ৯৬ বছর বয়স্ক জিমি কার্টার ও ভ্যাকসিন নেওয়ার স্বপক্ষে পাবলিক স্টেটমেন্ট দিয়েছেন সেখানে কি করে প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ট্র্যাম্প জাতির এ চরম দুঃসময়ে নীরব থাকছেন। তিনি ও তাঁর পত্নী নীরবে ভ্যাকসিন ঠিকই নিয়েছেন কিন্তু সমর্থকদের এর স্বপক্ষে ইতিবাচক কিছু না বলে বরং নেতিবাচক ভূমিকাই রাখছেন। এ এক ধরণের উস্কানি ও অপ-রাজনীতি জা একমাত্র ট্র্যাম্পের পক্ষেই সম্ভব!
Posted ১১:২৬ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৮ মার্চ ২০২১
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh