ড. আশরাফ উদ্দিন আহমেদ | বৃহস্পতিবার, ০৮ এপ্রিল ২০২১
গণতন্ত্রের মধ্যমনি হল ভোটাধিকার। আমেরিকায় একসময় সম্পত্তির মালিকানা, বর্ণ এবং লিঙ্গ এ সবের নিরিখেই কে বা কারা ভোট দিতে পারবে এটি স্থির করা হত। ভোটাধিকার প্রদান ও হরণের খেলা চলে আসছে স্বাধীনতার আব্যবহিত পর থেকেই। গঠনতন্ত্রে ভোটাধিকার , ভোটে প্রক্রিয়া ইত্যাদি ব্যাপার নিয়ে সুনির্দিষ্ট ভাবে তেমন কিছু আলোকপাত না করার কারণে । কেন্দ্র এবং ষ্টেটের মধ্যে ক্ষমতা শেয়ারিং এর আলোচনায় ভোটের বিষয়টি মূলত ষ্টেটের দায়িত্ব হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে তবে খোলাসা করে অনেককিছুই বিধৃত করা হয়নি।
আমেরিকায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পপুলার ভোট যা মোট জনসংখ্যার আনুপাতিক অংশ মাত্র সে নিরিখেই চলে আসছিল। ১৮২৮ সালে সম্পত্তির মালিকানা নেই এমন শ্বেতাঙ্গদের ভোট দেয়ার অধিকার প্রদান করা হলে ভোটারের সংখ্যা পূর্বের তুলনায় বেড়ে যায় বহুগুণ। তবে , ১৯১০ সালে সাউথের ষ্টেটগুলোতে প্রচুর সংখ্যক কালো এবং দরিদ্র শ্বেতাঙ্গদের ভোটাধিকার হরণ করা হলে এ সংখ্যা কমে যায় । ১৯২০ সালে প্রথমবারের মত মহিলাদের ভোটাধিকার প্রদান করা হলে ভোট দাতার সংখ্যা অনেক বেড়ে যায় । এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে ১৭৮৭ থেকে ১৮৭০ সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের গঠনতন্ত্রে ভোটাধিকার প্রসঙ্গটি তেমন প্রাধান্য পায়নি । শুধুমাত্র বলা হয়েছিল যে কোন ষ্টেট যদি ষ্টেট আইনসভার অধিকাংশ ব্রাঞ্চগুলোতে ভোটাধিকারের প্রয়োগ করে তাহলে এসব ভোটারকে আমেরিকার হাউজ অব রিপ্রেসেন্টটেটিভস এ ভোট দেয়ার অধিকার দিতে হবে। আমেরিকার গঠনতন্ত্রে কিংবা ফেডারেল আইনে সুনির্দিষ্টভাবে কোন কিছু উল্লেখ না থাকায় ষ্টেটগুলো যথেচ্ছ ভাবে কারা ভোটে দিতে পারবে , প্রার্থী হতে পারবে তা নির্ধারণ করত ।
ভোটে দেয়ার পদ্ধতিগত বিষয়গুলো ও তারাই স্থির করত। জিম ক্রো আইন প্রবর্তনের পরবর্তীতে পোল ট্যাক্স ইত্যাদি বিষয়গুলো নিয়ে অনেক মামলা মোকদ্দমা হয়েছে। ফলশ্রুতিতে , অনেক মাইনরিটি ভোটাদের ভোটের অধিকার দিয়ে ও বিভিন্ন কায়দায় তা হরণ ও করা হয়েছে।
গঠনতন্ত্রে বেশ কয়টি সংশোধনীর মাধ্যমে (যেমন, পঞ্চম, উনিশতম এবং বিশেষভাবে ছাব্বিশতম ) ভোটাধিকার সংক্রান্ত কথাবার্তা বলা হয়েছে। পরিষ্কারভাবে এই প্রথম গঠনতন্ত্রে উল্লেখ করা হয়েছে যে গোত্র, বণ, গায়ের রং, লিঙ্গ এবং বয়স (১৮ এবং বেশী) অজুহাত হিসেবে নিয়ে কোন নাগরিকের ভোটাধিকার হরণ করা যাবেনা । কেন্দ্রীয় সরকারের আইন এবং গঠনতন্ত্রে বি যে সব ইস্যুতে কোন বিধানের উল্লেখ নেই সেখানে ষ্টেটকে এ সব বিষয়ে সিদ্দান্ত নেয়ার স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে। ভোটাধিকার, নিয়ম-কানুন ইত্যাদি নিয়ে গঠনতন্ত্রে সংযোজন হয়েছে এমন কিছু এমেন্ডমেন্ডের উল্লেখ ইতোমধ্যেই কড়া হয়েছে । তবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি সংশোধনীর কথা উল্লেখ করা হয়নি।
গঠনতন্ত্রে ৫০তম সংশোধনী বিলটি যোগ করার সিদ্দান্তের ৯৫ বছর পর ১৯৬৫ আগস্ট মাসের ৬ তারিখে প্রেসিডেন্ট লিন্ডন জনসন স্বাক্ষর করলে এটি আইনে পরিণত হয়। তৎকালীন সময়ে আমেরিকার দক্ষিণের ষ্টেটগুলোতে বসবাসকারী আফ্রিকান-আমেরিকানরা দুর্বিসহ জীবনযাপন করছিলেন । ভোট দেয়ার প্রশ্নে পোল টক্স, সাক্ষরতা/ শিক্ষাগত যোগ্যতা প্রমাণের জন্য টেস্ট ইত্যাদি ছাড়া ও আমলাদের কর্তৃক হয়রানীর কারণে ভোটার হওয়ার চেষ্টা থেকে বিরত থাকতে হতো । ভোটার হিসেবে তালিকাভুক্তির চেষ্টা করলে নানান ধরনের নাজেহাল , এমনকি শারীরিক নিগ্রহ ও ভোগ করতে হত । মিসিসিপিতে বেশ ক’জন ভোটিং রাইট একটিভিস্টকে হত্যা করা হলে এর প্রতিবাদে বিভিন্ন শহরে শান্তিপূর্ণ মিছিলে পুলিশের হামলার পরিপ্রেক্ষিতে জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় । রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও কৌশল কাজে লাগিয়ে জনসন কংগ্রেসকে রাজী করান । ভোটাধিকার বিলটি পাশ হয় এবং পরের দিনই প্রেসিডেন্ট এতে স্বাক্ষর করেন ।
ভোটাধিকার বিলটি আইনে পরিণত হয়ে গেলে জনমনে ভোটে ব্যাপারে আগ্রহ সৃষ্টি হয় । সাক্ষরতা টেস্টের বিষয়টি বেআইনি বলে ঘোষিত হয় । আইনটির সেকসন ৫ এ ফেডারেল নিরীক্ষক এর বিধান রাখা হয় । কভারড জুরিকডিকশন (Covered Jurisdictions) এলাকাগুলোতে প্রয়োজনে ভোট দানের যোগ্যতা পরীক্ষা করার দায়িত্ব তাদের দেয়া হয় ।
তাছাড়া , বিধান রাখা হয় যে ভোট সংক্রান্ত নতুন পদ্ধতি ও প্রাকটিস চালু করতে হলে কলাম্বিয়া ডিসট্রিক্ট কুড়তের অথবা ইউ.এস এটর্নি জেনারেলের প্রাক ক্লিয়ারেঞ্চে নিতে হবে । আইনটিতে সন্নিবেশিত ২য় সেকশনটি গঠনতন্ত্রের ১৫তম সংশোধনীর পরিপূরক হিসেবে রেস (Race) এবং গাত্রের রং (Color) ভোটাধিকার নির্ধারণে সারা দেশে নিষেধ বলে ঘোষণা করা হয় ।
একই ভাবে ২৪তম ও ১৪তম সংশোধনীর পরিপূরক হিসেবে সমস্ত ধরনের পোল ট্যাক্স নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয় এবং এ ব্যাপারে প্রয়োজন হলে এটর্নি জেনারেলকে হস্তক্ষেপ করতে ক্ষমতা দেয়া হয় ।
Posted ৫:৪০ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৮ এপ্রিল ২০২১
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh