ড. আশরাফ উদ্দিন আহমেদ | বৃহস্পতিবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২১
মেরুকরণ কথাটি প্রথম ইংলান্ডে ১৮১২ সালে ইলেক্ট্রো ম্যাগনেটিক বিকিরণের গতি ও নির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা বুঝাতে ব্যবহার করা হয় । পরবর্তীতে, সমাজ বিজ্ঞানে, বিশেষত রাজনীতি বিজ্ঞানে এ বিক্রিয়াকে বিপরীতধর্মী রাজনতিক কর্ম কান্ড কে নির্দিষ্ট করে রাজনৈতিক প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণে ব্যবহৃত হতে থাকে। গুগল এর মতে, Political polarization is the extent to which opinions on an issue are opposed, and the process by which this opposition increases over time. খোলাসা করে বললে বলতে হয় যে দ্বি-দল বিশিষ্ট রাজনৈতিক পার্টি সিস্টেমে দলগুলোর আদর্শ বা মতাদর্শের ভিন্নতা রাজনৈতিক মেরুকরণ নির্দিষ্ট করে । এ ভিন্নতা ব্যাখ্যা করলে রাজনৈতিক জটিলতার সীমা-পরিসীমা বা ব্যাপ্তি, স্থিতি-অস্থিতি ইত্যাদি চলকগুলো ব্যাখ্যা করা সহজ হয়। মেরুকরণ প্রক্রিয়া অনুধাবন করে, নির্দিষ্ট করে একটি দেশের সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি বোঝা সহজতর হয় । উইকপিডিয়ার একটি উদ্ধৃতি এ ক্ষেত্রে প্রণিধানযোগ্য : After George W. Bush was reelected in 2004, English Historian Simon Schama noted that the US has not been so polarized since the American Civil War, and that a more apt name might be the Divided States of America.।
এ বিভক্তি তাঁর ছেলে বুশ জুনিয়রের সময় শুধু বিদ্যমান ছিল তা নয় তেমন তিনি কোন জোরালো, প্রমাণিত এবং সর্বগ্রাহ্য কারণ ছাড়াই সাদ্দাম হোসেনকে মিথ্যে এবং সরযন্ত্রমুলক তথ্যের ভিত্তিতে ফাঁসি দেন। দুই বুশের আমলে মধ্য প্রাচ্যের দেশ ইরাক, ইরানের পরিস্থিতি, সাদ্দাম হোসেনের এর করুণ পরিণতি, কুয়েত নামের দেশের সৃষ্টি, সিরিয়ায় ধ্বংসযজ্ঞ ইত্যাদি বহু কাজ আমেরিকা করেছে গায়ের জোরে, মিথ্যে, ধোঁয়াশে, অভিসন্ধি বা ষড়যন্ত্র মূলক তত্ত্ব (Conspiracy Theory) দাঁড় করিয়ে। তরল সোনার ভাণ্ডার আমেরিকার জন্য পাওয়া সহজসাধ্য করা, সস্তা মূল্যে সরবরাহ নিশ্চিত করা এবং মধ্য প্রাচ্যেরে দেশগুলোকে নিজেদের বলয়ে রাখার সঙ্কল্প থেকেই এহেন অভিসন্ধি। পরবর্তীতে প্রেসিডেন্ট ট্র্যাম্প ও এ ধারা অব্যাহত রাখেন। জেরুজালেমে ইসরায়েলের রাজধানী স্থানান্তর স্পষ্টভাবে এ বার্তা দেয় যে মধ্যপ্রাচ্যে ইরান, ইরাক, সিরিয়া, অর্থাৎ রাশিয়ার মদদ পুষ্ট কোন আঁতাত তিনি হতে দিবেন না। তাঁর আমলে আমেরিকা উত্তর কোরিয়া ও চীনে কূটনৈতিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয় যার জের এখনো চলছে।
জো বাইডেনের নির্বাচনে জেতা নিয়ে প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও রিপাবলিকান দল নানা ধরনের ভেল্কিবাজি ও তেলেসমাতি করেছে। নির্বাচনে ও ভোটে দেয়া এবং গণনায় কারচুপি ইত্যাদি নিয়ে ফেক নিউজ, জন সাধারণকে খেপিয়ে তোলা, সুপ্রিম কোর্ট সহ বিভিন্ন কোর্টে একের পর এক মামলা দায়ের করে হারা এবং তারপর ওয়াশিংটন ডিসি’তে লেজিসলেটিভ ভবন আক্রমণ, ভাঙচুর, খুন-জখম ইত্যাদি যার প্রতেকটিতে প্রেসিডেন্ট ও তাঁর দলের কট্টর পন্থীদের হাত ছিল বলে মনে করা হয় তা ছিল রাজনৈতিক মেরুকরণের জলজ্যন্ত উদাহরণ। যুক্তরাষ্ট্রে রাজনতিক ভাবে মেরুকরণে যে ইস্যুগুলো অত্যধিক মাত্রায় ব্যবহার করা হচ্ছে সেগুলোর একটা তালিকা মোটামুটি ভাবে এ রকম : জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ রক্ষা; গান পলিসিতে সংস্কার; বন্ধ্যাকরন; মিলিটারি শক্তিশালী করা; অর্থনীতির বুনিয়াদ জোরদার করা ; স্বাস্থ্যসেবা এবং স্বাস্থ্য ইন্সুরেন্স জনসাধারণের জন্য স্বল্প মূল্যে প্রাপ্তি সহজতর করা । তাছাড়া, কোভিড -১৯ নিয়ে অতীতে যে ভুল তথ্য জনসাধারণকে দেয়া হয়েছিল তার ফলশ্রুতিতে এর বিস্তৃতি, মৃত্যু সংখ্যা, দীর্ঘ সময় যাবত চিকিৎসা নিয়ে বিভ্রান্তি ইত্যাদি রাজনতিক মেরুকরণে মারাত্মক রকমের প্রভাব ফেলেছ।
ইদানীং অমাক্রম প্রজাতির প্রাদুর্ভাবের কারণে এ নিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের অপচেষ্টা চলছে জোরেশোরে। ওমিক্রনকে উপজীব্য করে ফেক নিউজ এবং কন্সপিরেসি থিওরি ইদানীং আমেরিকায় প্রাধান্য পাচ্ছে। ফলত, জনসাধারণ বিভ্রান্ত হচ্ছে অপ্রতিরোধ্য ভাবে। ফেডারাল সরকারের আকার, ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের পরিধি নিয়ে বিতর্ক রিপাবলিকান দলের একটি পুরানো রাজনৈতিক চাল। এর সাথে সরকারের তিনটি শাখার মধ্যেকার দায়িত্ব ভাগাভাগি বা অংশীদারত্বের প্রশ্নটি তো আছেই। সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতিদের সংখ্যা নিয়ে দু দলের মতবিরোধ ও বিভক্তি ইদানীং একটি বড়ো ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে যা রাজনৈতিক মেরুকরণ প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করছে। কিউবা, চীন, উত্তর কোরিয়া, রাশিয়া , মধ্যপ্রাচ্য ও আফগানিস্তান -এগুলো রাজনৈতিক মেরুকরণে আমেরিকায় হট ইস্যু। ২০২২ এর নির্বাচনে, বিশেষত ২০২৪ এর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এ সব প্রভাব ফেলবে নির্ঘাত।
রাজনৈতিক ইস্যু নিয়ে বাদানুবাদ , প্রোপাগান্ডা এখন সামাজিক মেডিয়ার কারণে দ্রুত ছড়িয়ে যায় । জনসাধারণের জীবন যাত্রার অচ্ছেদ্য অংশ এখন ফেস বুক ইত্তোকার সংযোগ মাধ্যম। মানুষকে প্রভাবিত করা, প্রতারণা, মিথ্যে তথ্য ও তত্ত্ব দিয়ে প্রতিনিয়ত বিভ্রান্ত করা এখন খুব সহজ । নিত্য নতুন ফেক নিউজ ও যড়যন্ত্র সমৃদ্ধ তথ্য ও তত্ত্ব রাজনতিক মেরুকরণে নিয়তই প্রভাব ফেলছে। স্বচ্ছ রাজনীতি বলতে আমেরিকায় এখন কিছু নেই বললে তেমন ভুল হবে না ।
Posted ৯:২০ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২১
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh