ড. আশরাফ উদ্দিন আহমেদ | বৃহস্পতিবার, ১১ নভেম্বর ২০২১
বয়সের হিসেবে বয়োবৃদ্ধ বিশেষণটি আরোপিত হয় ৬৫ বা তদূর্ধ্ব বয়সের মানুষের ক্ষেত্রে। পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্র পরিচালনার সাথে দীর্ঘ সময় ধরে জড়িত থেকে তারা যে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন এসবের যোগফলে তারা প্রাজ্ঞ এবং বিজ্ঞ। যে কারণে অনেক রাষ্ট্রে তাদের কাউকে কাউকে পরামর্শক বা উপদেষ্টা হিসবে রাখা হয়। প্রাচীন রোমান, গ্রীক, মিশরীয় , চৈনিক এবং ভারতীয় রাষ্ট্র পরিচালনায় বয়োবৃদ্ধদের অবস্থান অত্যন্ত সম্মানের ছিল। তাদের পরামর্শ গুরুত্বের সাথে রাজ্যপ্রধান এবং রাষ্ট্র পরিচালনা পরিষদ নিতেন। রোমের সিনেটে, গ্রীসের নগর রাষ্ট্র গুলোতে তাদের পদচারনা ছিল যুগপৎ সরব ও অতীব গুরুত্বপূর্ণ। চীনা দার্শনিক ও গুরু কনফুসিয়াস বয়োবৃদ্ধদের সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনা ব্যবস্থায় সম্মানজনক স্থান দিতে সম্রাট বা শাসকদের বলেছেন সুযোগ ফেলেই।
বুদ্ধের দর্শন ও বাণীতে ও এ ব্যাপ্যারটি বারংবার বলা হয়েছে। রামায়ণ, মহাভারতে বর্ণিত মুনি-ঋষিগণ সাধারণত সবাই পরিণত বয়সের। রোমান ক্যথলিকদের প্রধান ধর্মগুরু পোপ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বয়োবৃদ্ধ ছিলেন এবং এটি ঐতিহাসিক ভাবে সত্য। ইসলাম ধর্মে ও মুরুব্বিদের সম্মান প্রদর্শনের কথা বলা হয়েছে। কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র গ্রন্থের প্রথম খণ্ডে বিস্তারিত ভাবে রাজার পারিষদবর্গে কেন মূলত বয়োবৃদ্ধের আধিক্য থাকবে এ ব্যাপারটি ব্যাখ্যা করা হয়েছে। দ্বিতীয় খণ্ডের ষষ্ঠ অধিকরণে রাজাকে উপদেশ দেয়া হয়ে তাকে ‘বৃদ্ধদর্শী’ অর্থাৎ “বিদ্যাবৃদ্ধজনের সেবী বা জ্ঞানাদি বিষয়ে অভিজ্ঞজনের মত গ্রহণকারী” হতে হবে (ড. রাধাগোবিন্দ বসাক অনুদিত কৌটিলীয় অর্থশাস্ত্র, প্রকাশকঃ জেনারেল প্রিন্টার্স, ১১৯ লেনিন সরণী, কলিকাতা ৭০০ ০১৩, ডিসেম্বর ১৯৮০ দেখুন)। যারা বয়োবৃদ্ধদের উপজীব্য করে সমাজবিদ্যা বা Aging and the Elderly Sociology পড়তে চান তারা W Little, 2014 Aging and the Elderly – Introduction to Sociology বইটির ১৩তম চ্যাপ্টার পড়তে পারেন ।
জেরন্টলজি (gerontology) বা বয়োবৃদ্ধদের বিভিন্ন দিক নিয়ে গবেষণা ও অধ্যয়নের একটি শাস্ত্র খুব দ্রুত অগ্রসরমান হচ্ছে বর্তমান সময়ে। যুক্তরাষ্ট্রে বিষয়টির প্রতি বিভিন্ন মহলের আগ্রহ বাড়ছে। বৃদ্ধদের জন্য সেবাকেন্দ্র, আলাদা সাস্থ্য কেন্দ্র যেমন আছে তেমনি এদের বিনোদনের বিভিন্ন ধরনের ব্যবস্থা ও রয়েছে। ফেডারেল এবং স্থানীয় সরকারের আওতাধীন ব্যবস্থা ছাড়া ও ব্যবসা হিসেবে প্রাইভেট সেক্টর ও এক্ষেত্রে বেশ আগুয়ান। জীবন যাত্রার মান উন্নয়ন, গড়পড়তা আয়ুবৃদ্ধি, উন্নতমানের চিকিৎসা এবং চিত্ত বিনোদনের সুযোগ অনেক দেশেই উল্লেখযোগ্য ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বেশ কিছু সমাজে ধর্মীয়, সামাজিক কর্তব্য ও মূল্যবোধের অংশ হিসেবে বয়োবৃদ্ধদের আলাদা সম্মান দেয়া হয়। কোরিয়া, জাপান, চীন, ভারতীয় উপমহাদেশে এখনো বৃদ্ধ পিতামাতা ছেলে মেয়েদের সাথে থাকেন যদিও একক পরিবার প্রথার কারণে এখন অবস্থায় বেশ পরিবর্তন আসছে। আমেরিকায় ও বয়োবৃদ্ধরা নাতি-নাতনির প্রতিপালনে, স্কুলে নেয়া আনা ইত্যাদি ব্যাপারে প্রয়োজনে বেশ জড়িত থাকছেন। তবে, আমেরিকায় সমস্যা অন্য জায়গায় বেশ জটিল।
চলতি সংখ্যা (নভেম্বর ৮/নভেম্বর ১৮, ২০২১ দি ব্রিফ নিউজ এ Are Americas leaders growing too old to serve? শীর্ষক লেখাটিতে রিপাবিকান দলে সিনেটর বিল কেসিডি যিনি নিজে ও একজন ডাক্তার বলছেন, ৮০ বছর হয়ে গেলে খুবই দ্রুত দেহে ক্ষয় মানুষকে অন্তিম সময়ের দিকে নিয়ে যায়। যারা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় বা অন্য গুরুত্ব পূর্ণ দায়িত্বে আছেন তারা এ সত্যটি যত তাড়াতাড়ি অনুধাবন করেন ততই মঙ্গল। প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ট্র্যাম্প ছাড়া ও বর্ষীয়ান নেতা অনেকেই আছেন যারা আশির কাছাকাছি। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের বয়স ৭৮। হাউস স্পিকার ৮১ তে এখনো খুবই গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় বিষয়াবলী নিয়ে নিত্যই ব্যস্ত থাকেন। ৮৮ বয়স বয়স্ক সিনেটর চাক গ্রাসলি নাকি রি-ইলেকশন করবেন। জিতলে এবং টার্ম শেষ হলে ১০০ বছর ছুঁই ছুঁই করবেন। ৭৯ বছর বয়সে সিনেট বিরোধী দলের নেতা মিচ মেককনেল তুমুল উৎসাহ নিয়ে ডেমোক্রেটদের সাথে যুদ্ধ করে যাচ্ছেন সিনেট ফ্লোরে।
সিনেটে ৫০-৫০ অবস্থানে স্থিত দল দুটোর কোন একজন সিনেটর যদি পিছলিয়ে পড়ে (যেমনটি ইদানীং আমার হচ্ছে ৭৪ বছর বয়সেই) হাতপা, ঘাড় ভেঙ্গে শয্যাশায়ী হয়ে পরেন তা’হলে সংশ্লিষ্ট দলের অবস্থা বেশ নাজুক হয়ে যাবে।
উপরে উল্লেখিত সব বিজ্ঞ নেতারা বয়সের কারণে ক্ষমতা ছাড়তে নারাজ। হয়তোবা উনাদের প্রয়োজন ও আছে তবে তারুণ্য শক্তিতে বলীয়মান নেতাদের ক্ষমতায় যাওয়ার রাস্তা তারা আটকিয়ে রেখেছেন নিঃসন্দেহে। তরুণ নবীন নেতারা প্রবীণদের সাথে কংগ্রেসে অনেক সময় একমত হতে পারছেন না। বয়সের ফারাক এ ক্ষেত্রে কাজ করে বললে মিথ্যে বলা হবেনা যদিও গৌণ আদর্শগত প্রভেদকেই দায়ী করা যায়। অনেক বেশী বয়স্ক (৮০বা তার বেশী) নেতাদের বোধোদয় যত তাড়াতাড়ি আসবে ততই দলের জন্য, রাষ্ট্রের জন্য মঙ্গল।
Posted ৬:২৪ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১১ নভেম্বর ২০২১
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh