বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪ | ১৪ চৈত্র ১৪৩০

Weekly Bangladesh নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত
নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত

সাগর শুকিয়ে যাচ্ছে

ড. আশরাফ উদ্দিন আহমেদ   |   বৃহস্পতিবার, ১৪ অক্টোবর ২০২১

সাগর শুকিয়ে যাচ্ছে

বিশ্বে অন্তত ৭ টি বৃহৎ পানির আঁধার শুকিয়ে যাচ্ছে অতি দ্রুত গতিতে। ব্রিটানিকার মতে ডেড সি, লেক পপূ, লেক আয়ার, আরল সাগর, লেক মিড, লেক চাদ, লেক উরমিয়া এগুলো মৃতপ্রায় বা ধুঁকছে। কাস্পিয়ান সাগর ও এ শতাব্দীর মাঝামাঝি মরণ দশায় পৌঁছে যাবে। আমু এবং শির দরিয়া নামে দুটি বৃহৎ নদের পানি বিধৌত আরল সাগর বলতে গেলে রাতারাতিই শুকিয়ে গেছে।

মাত্র তিন দিনে প্রবল ঝড়ে এর পানি উবে গেছে ; লবণ মিশ্রিত পানি আশে পাশের ফসল বিলীন করে দিয়েছে; গম এবং তূলা চাষের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা তিরোহিত হয়ে গেছে। নিকিতা ক্রুসেভ সেন্ট্রাল এশিয়াতে কৃষি ব্যবস্থার শিল্পায়ন করতে যে পরিকল্পনা বাস্তবায়ান করেছিলেন তারই খেসারত দিতে এ পরিণতি। বিশ্বে চতুর্থ বৃহৎ এ জলাধারটি তার পূর্বেকার আয়তনের এক দশমাংশের ও কম অবস্থায় কোন রকমে বেঁচে আছে। অপরিণামদর্শী পরিকল্পনা, তাড়াতাড়ি সম্পদশালী হওয়ার উদগ্র বাসনা এবং সীমাহীন লোভ প্রকৃতির এ বিরাট ক্ষতিটি করেছে। শুষ্ক বালুকাময় ভূমিতে ইরিগেশন যে এক সাগর পানি শুষে নিতে পারে তা সোভিয়েত ইউনিয়নের বিজ্ঞানীরা চিন্তায় আনেননি এ কথা ভাবতে বিশ্বাস হয় না।


রাজনীতি এবং বিজ্ঞান এক সমীকরণে না হাঁটলে পরিণতি যে অশুভ হবে তা আমরা অতি দ্রুত উন্নয়ন লম্ফের প্রতিযোগিতায় নেমে বেমালুম ভুলে যাই। সোভিয়েত ইউনিয়নের এককালের প্রাণের দোসর ভারত বাংলাদেশের সাথে অভিন্ন নদীর পানির হিস্যা নিয়ে যা করছে তাতে এ উদাহরণটি দেয়া অমূলক হবে না।

উজবেকিস্তান এবং তুর্কমেনিস্তানের দিকে তাকালে প্রাসঙ্গিকতা উপলব্দি করা কঠিন হবে না। দুটি দেশেই পানির দুষ্প্রাপ্যতা সত্ত্বে শুধু লাভের লোভে তূলা চাষ চালিয়ে যাচ্ছে। এদিকে, জলবায়ু পরিবর্তন জনিত কারণে ও পর্যাপ্ত পানি পাওয়া দুষ্কর করে তুলেছে। তুরকেমেনিস্তান ও খিরজিস্তানেড় পর্বত শ্রেণীর হিমবাহ বা গ্লেসিয়ারই আমু দরিয়া ও শির দরিয়ার পানি সরবরাহের প্রধান উৎস। এ হিমবাহগুলোর আয়তন আকৃতি ছোট হয়ে আসছে।


বাংলাদেশের ক্ষেত্রে হিমালয়ের গ্লেসিয়ার দ্রুত গলে যাচ্ছে। ভারত প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে নিঃসৃত পানি ধরে রাখছে বৃহৎ আকারের আঁধার বানিয়ে। ডাইক/বাঁধ বানিয়ে ভারত আটকে রাখছে তার নিজের প্রয়োজনে। সেচ, জল বিদ্যুৎ উৎপাদন সহ, মৎস্য চাষ ইত্যাদি নানাবিদ কাজে। নিন্মাঞ্চলের প্রতিবেশী ছোট দেশগুলোর প্রয়োজনের কথা বিবেচনায় আনতে সবসময়ই গড়িমসি। বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে যে মরুকরণ প্রক্রিয়া তাতে পশ্চিম বঙ্গ বা ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের তেমন কোন উদ্বেগ আছে বলে মনে হয় না।

খাজাকাস্থানে নর্থ আরল সাগরকে ১২ কিলোমিটার বা ৭.৫ মাইল দীর্ঘ ডাইক (ককারাল ড্যাম) বানিয়ে পুনরুজ্জীবিত করা হয়েছে। খাজাক সরকার ও বিশ্ব ব্যাঙ্কের ৮৬ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে শির দরিয়া নিয়ন্ত্রণ এবং নর্থ আরল সাগর প্রজেক্ট ২০১৮ সালের মে মাসে শেষ হলে মৃত প্রায় সাগরে আবার মাছ ধরা শুরু হয়েছে। মৃতপ্রায় সাগরটি আবার জেগে ওঠেছে যদিও পূর্বেকার আরল সাগর আর ফিরে পাওয়া যাবে না। এমনটি হয়েছিল প্রায় ৩০০ বছর আগে বাংলাদেশর একটি সাগরের বেলায়। সিলেটে স্থানীয় ভাবে একসময় কালিদহ সায়র নামে পরিচিতি ছিল যে বিশালাকায় সাগরের প্রাকৃতিক কারণে সেটি আকৃতি ও হারিয়ে ফেলে; এর প্রকৃতির ও পরিবর্তন হয়।


বৃহত্তর সিলেট, ময়মনসিং, কমিল্লা অর্থাৎ বাংলাদেশের বাংলাদেশর উত্তর পূর্বাঞ্চলে বর্তমানের কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ মৌলভীবাজার, সিলেটের বিস্তীর্ণ ভাতি অঞ্চল জুড়ে যে ৪১৫ টির মত হাওর, বাওর ও বিল আছে সেগুলো কালিদহ সায়রের বর্তমান রূপ। উল্লেখ্য যে শিলং উপত্যকায় যে ডাউকি ফলট যা ইন্ডিয়ান প্লেটের হিমালয় সিস্টেমের টেকটনিক বেলতের আওতায় তার প্রভাবে ১৮৯৭ সালের প্রলয়ঙ্করী ভুমিকম্পে কালিদহ সায়র মরে গিয়ে বর্তমান সময়ের হাওড়ের রূপ পরিগ্রহ কওে- এমন ধারণা অনেকেই করেন। তবে, এ ফল্টের অনেকগুলো ফাটল উপরি ভু-স্থলে সক্রিয় তাখার কারণে ১৮৯৭’র ভূমিকম্পের পূর্বে ও বেশ বড়ো মাপের অনেকগুলো ভূমিকম্প হয়েছে। এখনো এ অঞ্চলে ভু-কম্পন প্রায়ই হয়। এ সবের সমন্বিত প্রভাবে কালিদয় সাগর যেখান দিয়ে প্রব্যহমান ছিল সেখানকার ভ-প্রকৃতির পরিবর্তন হয়েছে।

আসাম, মেঘালয়, বিশেষত খাসিয়া-জয়ন্তিয়া অত্যধিক বৃষ্টিপাত, সুরমা-কুশিয়ারা ও নদীগুলোর শাখা ও উপনদীগুলো নিরন্তরই পানি প্রবাহের যোগান দেয়ায় হাওড়গুলো বছরের সাত-আট মাসই জলমগ্ন থাকে মৎস্য সম্পদ ছাড়া ও প্রায় ২৫০ প্রজাতির হাঁস, পাখী হাওড়গুলোতে বিচরণ করে এ মৌসুমে। অন্য সময়ে ও বিল, বাউরে জমা পানি আংশিক ভাবে হাওড়কে বাঁচিয়ে রাখে। মৎস্য সম্পদের সাথে সাথে আংশিক নিমজ্জিত হাওড় ভূমি তখন ধান চাষের জন্য ব্যবহৃত হয়।

বিশ্বের সর্ব বৃহৎ আভ্যন্তরীণ পানির ভাণ্ডার হলো কাস্পিয়ান সাগর বা হ্রদ। আজারবাইজান, ইরান, কাজাকিস্থান, রাশিয়া এবং তুর্কমেনিস্থান- পাঁচটি দেশের ১৪৩,২৪৪ স্কয়ার মাইল জুড়ে বিস্তৃত হ্রদটিকে সাগর হিসেবেই মানুষ চিনে বেশী। সাগরে নীচে এবং কোস্ট লাইনে তেল, গ্যাস ও অন্যান্য সম্পদের যে সুবিশাল উপস্থিতি তা সাগরটিকে অনন্যসাধারণ ভু-রাজনৈতিক গুরুত্বের আসনে সমাসীন করেছে। জলবায়ু পরিবর্তনসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক কারণে ২০৫০ সালের মধ্যে হ্রদটি ভিন্ন রূপ পরিগ্রহ করতে পারে এমন ধারনা থেকে সকল প্রকার সম্পদ আহরণের প্রতিযোগিতায় মনুষ্যসৃষ্ট রাজনৈতিক সমস্যা সৃষ্টির আশংকা একেবারেই অমূলক নয়।

advertisement

Posted ৮:৩১ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৪ অক্টোবর ২০২১

Weekly Bangladesh |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

গল্প : দুই বোন
গল্প : দুই বোন

(6134 বার পঠিত)

স্মরণে যাতনা
স্মরণে যাতনা

(1289 বার পঠিত)

মানব পাচার কেন
মানব পাচার কেন

(1144 বার পঠিত)

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১১২১৩১৪১৫১৬
১৭১৮১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭২৮২৯৩০
৩১  
Dr. Mohammed Wazed A Khan, President & Editor
Anwar Hossain Manju, Advisor, Editorial Board
Corporate Office

85-59 168 Street, Jamaica, NY 11432

Tel: 718-523-6299 Fax: 718-206-2579

E-mail: [email protected]

Web: weeklybangladeshusa.com

Facebook: fb/weeklybangladeshusa.com

Mohammed Dinaj Khan,
Vice President
Florida Office

1610 NW 3rd Street
Deerfield Beach, FL 33442

Jackson Heights Office

37-55, 72 Street, Jackson Heights, NY 11372, Tel: 718-255-1158

Published by News Bangladesh Inc.