ড. আশরাফ উদ্দিন আহমেদ | বৃহস্পতিবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২১
আফগানিস্তান একটি সুপ্রাচীন জনপদ। মানুষের আবাস শুরু হওয়ার সঠিক সময় নির্ণয় করার প্রচেষ্টা দেশটির প্রাকৃতিক অবিস্থিতি, অধিবাসীদের যুদ্ধবাজ চরিত্র ও সামান্য কারণে খুন করার সহজাত স্পৃহা ও লুটেরা স্বভাবের জন্য কোন সময়েই নির্বিবাদে এগুতে পারেনি। তবে, প্যালেওলিতিক যুগের মধ্য সময়ে প্রথম জনবসতি শুরু হয়েছিল বলে ঐতিহাসিক ও প্রত্নতত্ত্ববিদদের অনেকেই মোটামুটি একমত। পাহাড়- পর্বত ঘেরা স্থলভাগ হলে ও সিল্ক রোড এ জনপদ ভেদ করায় এশিয়ার সাথে মধ্যপ্রাচ্য হয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যাওয়ার জন্য আফগানিস্তানই ব্যবহার করা হত। পারস্য, চীন, মঙ্গোলিয়া এসব দেশে যাওয়া আসার রাস্তা ও আফগানিস্তান হয়েই ছিল। অগুনতি যুদ্ধবিগ্রহ সংগঠিত হয়েছে এ অঞ্চলে । গ্রীক বীর অ্যালেক্সজান্ডার এ পথ দিয়েই বিভিন্ন দেশ পদানত করে ভারত পর্যন্ত পোঁছেছিলেন। মৌর্য, আরব থেকে মুসলিম, মোগল, ব্রিটিশ, সোভিয়েত এবং ২০০১ এ আমেরিকা দেশটি আক্রমণ করেছে, সাময়িক ভাবে কিছু কিছু অংশ কিছু সময়ের জন্য হলেও পদানত করেছে কিন্তু সামগ্রিক অর্থে জয় করতে পারেনি।
তাইতো আফগানিস্থানকে বলা হয় বিভিন্ন সাম্রাজ্যের কবরস্থান বা সমাধি ক্ষেত্র। অথচ, এ জনপদের বাসিন্দারা কোন সময়েই মিলেমিশে সব বাসিন্দাদের জন্য একই সমাজ, জাতি গঠন করতে পারেনি। নেশনালিজম বলতে যে অনুভূতি , অস্তিত্ব তা কখনো ভিত্তি স্থাপন করতে পারেনি দৃঢ় ভাবে। এ ও সত্য যে তারপর ও কোন শক্তিই দেশটি কব্জা করতে পারেনি। অদমনীয় বীরত্বের সামনে তবে আফগানিস্থানের জাতিগত বিদ্বেষ, সম্প্রদায়গুলোর মধ্যে যুদ্ধ বিগ্রহ অতীতে ও ছিল, বর্তমানে ও বিদ্যমান। এ নিয়েই আমাদের আজকের আলোচনা।
৬৫২,৮৬৪ স্কয়ার কিলমিটার বা ২৫২,অ৭২ স্কায়ার মাইল আয়তন এবং ৩১.৪ মিলিয়ন জনসংখ্যার দেশ আফগানিস্থানে সম্প্রদায় বা জাতি ১৪টির মতো । প্রধানগুলো হলো পশতুন (মোট জনসংখ্যার ৪২%), তাজিক(২৭%), হাজারা (৯%) এবং উজবেক (৯%)।
তাছাড়া, আইম্যাক (৪%), তুর্কমেন (৩%), বালুচ (২%) এবং অন্যান্য (৪%)। তালিবান এবং বেশীর ভাগ রাজনৈতিক নেতারা পশতুন সম্প্রদায়ের। তাজিকদের মধ্যে বেশ শাহ মাসুদের মত বেশ ক’জন প্রভাবশালী নেতা আছেন যারা শিক্ষিত এবং জাতিয়বাদ মন্ত্রে উজ্জীবিত । কাবুল, মাজার-ই-শরিফ, হিরাত এবং গজনী এ চারটি শহরে তাজিকরা বেশী সংখ্যার বাস করে। উত্তর ও পশ্চিমের বল্ক, তাখার, বাদাখসান, সামাসান, পারওয়ান পানসি, কাপিসা, গৌড়, বাদসির এবং হিরাত বিভাগে প্রচুর তাজিক বাস করে। মজার ব্যাপার হল সম্প্রদায় হিসেবে পরিচয় দেয়ার চেয়ে এরা অঞ্চলের নামে, যেমন পান্সিরই, কাবুলি, মাজারই ইত্যাদি নামে পরিচয় দেয়া পছন্দ করে। উল্লেখ করা যায় যে তাজাকিস্থনের প্রধান সম্প্রদায় হওয়া সত্বে ও তাজিকদের সংখ্যা আফগানিস্থানে বেশী। আফগানিস্থানের গৃহযুদ্ধ তাজিকদের জাতীয়তাবাদে উদ্বুদ্ধ করেছে প্রবলভাবে।
আফগানিস্তানে সবচেয়ে নিগৃহীত সম্প্রদায় হচ্ছে হাজারা জনগোষ্ঠী । ভিবিন্ন সময়ে এদের হত্যা করা হয়েচ্ছে হাজারে হাজারে। আব্দুর রহমান খানের রাজত্বকালে (১৮৮০-১৯০১) বিনা কারণে হাজারা বংশের মানুষকে হত্যা করে এদের জনসংখ্যা প্রায় অর্ধেকে নামিয়ে আনা হয়েছে । বিতারন করা হয়েছে কয়েক হাজার ; অনেকে দাসত্ব বরন করতে বাধ্য করা হয়েছে । হাযারাস্থান পস্তুন্রা দখল করে নেয়। তালিবানরা সোভিয়েত সেনাবাহিনী চলে যাওয়ার পরপরই হাযারাদের একটি বড় আবাস্থান মালিস্থান আক্রমণ করে ।
অধিবাসীদের চরম্ভবে হেনস্থা করা হয়েছিল । জাতিগত ঘৃণা থেকেই এমনটি করেছিল। এ অবস্থা তালিবানরা, যারা পশতুন সম্প্রদায়ভুক্ত , হাজারাদের দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর ও নিগৃহীত করছে এমনটিই বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম থেকে জানা যায় ।
হাজারা সম্প্রদায়ের লোকজন একেত শিয়া তদুপরি ইরানের প্রতি আনুগাত্যের কারণে পশতুন ও তাজিকরা এদের কখনো মন থেকে গ্রহণ করতে পারেনি, বিশ্বাস করতে পারেনি । ঘৃণিত জনগোষ্ঠী হিসেবে এদের মূলধারা থেকে বিচ্ছিন্ন রাখার চেষ্টা যুগে যুগেই করা হয়েছে । কাবুলে আমির দোস্ত মোহাম্মাদ খানের দ্বিতীয় দফায় শাসনের সময় এদের উপর জিজিয়া ধরণের করারোপ করা শুরু হয় ।
এদের মনে করা হতো সমাজের অত্যন্ত নীচু শ্রেণীর লোক। ২০০৩ সালে প্রথম প্রকাশিত খালেদ হোসাইনির Kite Runner উপন্যাসে আলী নামক ছেলেটিকে চিত্রিত করতে নায়ক বাবা বলে, (because) history isnt easy to overcome. Neither is religion. In the end I was a Pashtun and he was a Hazara, I was Sunni and he was Shia, and nothing ever going to change that. Nothing. (Khaled Hosseini, Kite Runner, Penguin Paper edition, 2005, page 25) ।
Posted ৭:০৬ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২১
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh