মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪ | ৫ চৈত্র ১৪৩০

Weekly Bangladesh নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত
নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত

সুজন মানুষের প্রতিচ্ছবি

ড. আশরাফ উদ্দিন আহমেদ   |   বৃহস্পতিবার, ২৯ জুলাই ২০২১

সুজন মানুষের প্রতিচ্ছবি

(দ্বিতীয় পর্ব) : লেখাটি আমার একজন পরম সুহৃদ, শিক্ষক তুল্য মানুষ খন্দকার মাহমুদুর রহমানকে (১৯৩৮-৭ জুন ২০২১) নিয়ে লেখা। সমন্বিত পল্লী উন্নয়ন কর্মসূচীতে/আইআরডিপিতে ঠিক কবে বার্ড ছেড়ে এসে যোগদান করেছিলেন তা আমার মনে নেই । আমি আমেরিকান ইউনিভার্সিটি অব বৈরুত থাকতেই শুনেছিলাম তিনি যোগদান করবেন। খুব সম্ভবত বার্ড ছেড়ে আসা পরিচালক নুরুল হক সা’বের কাছ থেকে শুনেছিলাম।
১৯৭৪ এর মাঝামাঝি আমি বৈরুত থাকাকালীন সময়েই তিনি গিয়েছিলেন সেখানে। বাংলাদেশে পল্লী উন্নয়নের জন্ম হয়েছে যে আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাত প্রতিষ্ঠানটিতে সেখান থেকে আসা জনাব আনয়ারুজ্জামান খান, মিসেস তাহেরুন্নেসা আব্দুল্লাহ ও জনাব নুরুল হকের সাথে ড. আখতার হামিদ খানের আরেক সাগরেদ খন্দকার মাহমুদুর রহমান যোগদান করলে বিকাশমান জাতীয় প্রোগ্রামটি দারুণ উপকৃত হবে ভেবে আনন্দিত হয়েছিলাম। আমি সমন্বিত পল্লী উন্নয়ন কর্মসূচীতে তাকে বেশিদিন পাইনি। সিলেটের খাদিমনগরে অবস্থিত টেকনিক্যাল ট্রেইনিং পাইলট প্রজেক্ট আইআরডিপিকে রুরাল ডেভেলপমেন্ট ট্রেইনিং ইন্সিটিউট নাম দিয়ে হস্তান্থর করা হলে খন্দকার মাহমুদুর রহমানকে প্রিন্সিপাল /ডিরেক্টর হিসেবে সেখানে দেয়া হয়। সদ্য প্রয়াত ড. ক্ষণদা মোহন দাস থেকে তিনি দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।


দাস বাবু তখন সার্কেল অফিসারের অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে টেকনিক্যাল ট্রেইনিং পাইলট প্রজেক্টের প্রিন্সিপাল ছিলেন। খন্দকার সাব বছর দুয়েক কাজ করার ফর ঢাকা সদর দপ্তরে ফিরে আসেন। তদানীন্তন মহাপরিচালক হেদায়েত আহমেদ সাব চট্টগ্রাম গেলে আমাকে খবর দিয়ে এ দায়িত্ব পালন করতে বলেন। আমি সে সময় লিয়েনে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজতত্ত্বের সহকারী অধ্যাপক। পদটির সাথে বেতনের অসঙ্গতি ইত্যাদি বিবেচনায় পদটিতে সরকারি নিয়ম অনুসরণ করে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে কাউকে নিলে আমি বিবেচনা করব বলায় তিনি তাই করলেন এবং অনেক প্রতিযোগীর মধ্য থেকে আমাকেই বাছাই করা হয় । খন্দকার মাহমুদুর রহমান ততদিনে ঢাকা এসে গেছেন। আমি ১৯৮৮ এর সেপ্টেম্বর মাসে সেখানে পরিচালক হিসেবে যোগ দেই। চার বছরের মত ছিলাম। খন্দকার মাহমুদুর রহমান দ্বিতীয় বারের মত আর ডি টি আই’তে আবার যোগদান করেন। সেখান থেকেই তিনি বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের জ্যৈষ্ঠ পরিচালক হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে তিনি সিলেট মেট্রোপলিটান বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যবসা প্রশাসনের অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। বিশ্ববিদ্যালয়টির ডীন, রেজিষটরার ও ট্রেজারার হিসেবে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি দায়িত্ব পালন করেন ।

সুন্দর স্বাস্থ্যের অধিকারী খন্দকার মাহমুদুর রহমান শেষ বয়সে নানাবিধ বার্ধক্য জনিত রোগে ভুগছিলেন কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব পালনে অবহেলা করেননি। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর। তাঁর ছোট মেয়ে শিল্পী দুরারোগ্য ক্যান্সারে ম্যারা যাওয়ায় মানসিক ভাবে তিনি খুব ভেঙ্গে পরেছিলেন। ধর্মপ্রাণ মানুষটি মৃত্যুকালে পত্নী ও দুই কন্যা রেখে গেছেন।


সদা হাসিখুশী খন্দকার মাহমুদুর রহমান অত্যন্ত্য সৎ, সোজা-সরল, দায়িত্বের প্রতি নিষ্ঠাবান একজন নির্ভেজাল ভদ্রলোক ছিলেন। চ্যালেঞ্জের মধ্যে তিনি স্থির, শান্ত থাকতে আমি থাকে অনেক পরিস্থিতে দেখেছি। কাজ শেষ করতে সদা উদগ্রীব থাকতেন কিন্তু উৎকণ্ঠা, উদ্বেগ কচিৎ তাঁর মধ্যে দেখেছি। অনেক মানুষ ভুল করে কিন্তু মার্জনা চাওয়া তাদের ধাতের মধ্যে দেখা যায়না। খন্দকার রহমান এ ক্ষেত্রে ভিন্নতর ছিলেন।
unfettered humility যাকে বলে তা তাঁর মধ্যে আমি দেখেছি। তিনি সুন্দর মনের মানুষ ছিলেন। কাজের দায়িত্বের পাশাপাশি প্রচুর লেখাপড়া করতেন ; এমনকি কবিতা ও লিখতেন দৈনিক মর্নিং নিউজ পত্রিকায় ছদ্মনামে (খুব সম্ভবত থমাস এঞ্জেল নামে) ইংরেজিতে লেখা তাঁর কবিতা ছাপা হতো। কথায় কথায় একদিন আমাকে না বললে আমি হয়তো কোনদিন জানতামই না। যারা তাকে ঘনিষ্ঠ ভাবে জানতেন তাঁরা নিশ্চয় জানেন তিনি খুবই প্রচার বিমুখ ছিলেন।

তাঁর শিক্ষাদীক্ষার পরিধি ছিল ব্যাপক। ১৯৫৯ সালে অর্থনীতিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স সহ স্নাতক এবং পরের বছর মাস্টার্স পাশ করেছিলেন তিনি। তাছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান ষ্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে কৃষি অর্থনীতিতে মাস্টার্স ডিগ্রি ও তিনি অর্জন করেছিলেন। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে তিনি উচ্চতর প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। পল্লী উন্নয়নে কাজ করা ছাড়া ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থায় তিনি কন্সালটেন্ট হিসেবে কাজ করেছেন। তাঁর পাবলিকেশনের সংখ্যা ও অনেক। অবসর নেয়ার পর ও তিনি পল্লী উন্নয়নের বিভিন্ন প্রজেক্ট পরামর্শক হিসেবে কাজ করেছেন। নিরলস প্রকৃতির মানুষটি সিলেটে মেট্রোপলিটান ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠার পরপরই আর সাথে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে পরেন। ২০০৩ সালে যোগদান করে ২০১৯ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটিতে কাজ করেন। খন্দকার মাহমুদুর রহমানের প্রায় ৪৫ বছর কর্মজীবনের শুরু যেমন প্রশিক্ষক হিসেবে পরিসমাপ্তি ও তেমনি শিক্ষক-প্রশাসক হিসেবে। আমার আদর্শ এ মানুষটিকে আল্লাহ তায়লা পরম প্রশান্তিতে বেহেস্তে রাখুক এ কামনা রইলো। আমিন।


advertisement

Posted ৮:৫৫ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৯ জুলাই ২০২১

Weekly Bangladesh |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

গল্প : দুই বোন
গল্প : দুই বোন

(6091 বার পঠিত)

স্মরণে যাতনা
স্মরণে যাতনা

(1286 বার পঠিত)

মানব পাচার কেন
মানব পাচার কেন

(1142 বার পঠিত)

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১১২১৩১৪১৫১৬
১৭১৮১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭২৮২৯৩০
৩১  
Dr. Mohammed Wazed A Khan, President & Editor
Anwar Hossain Manju, Advisor, Editorial Board
Corporate Office

85-59 168 Street, Jamaica, NY 11432

Tel: 718-523-6299 Fax: 718-206-2579

E-mail: [email protected]

Web: weeklybangladeshusa.com

Facebook: fb/weeklybangladeshusa.com

Mohammed Dinaj Khan,
Vice President
Florida Office

1610 NW 3rd Street
Deerfield Beach, FL 33442

Jackson Heights Office

37-55, 72 Street, Jackson Heights, NY 11372, Tel: 718-255-1158

Published by News Bangladesh Inc.