ড. আশরাফ উদ্দিন আহমেদ | বৃহস্পতিবার, ১৯ আগস্ট ২০২১
দ্বিতীয় পর্বে একটি ভুলের সংশোধন করে আজকের আলোচনা শুরু করব। বলেছিলাম ছাত্রশক্তির নেতা ও সালিমুল্লাহ মুসলিম হলের ১৯৬২-৬৩ শিক্ষাবর্ষে ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক এক সময় ন্যাপ এ যোগ দিয়ে মতিয়া চৌধুরীকে নিয়ে মাদারীপুরে জনসভা করেছিলে। আসলে সভার স্থানটি ছিল গোপালগঞ্জ। আর এ কারণেই প্রতিপক্ষ বঙ্গবন্ধুর কাছে নালিশ দিয়ে বাহবা ও ফায়দা নিতে চেয়েছিল। এ প্রসঙ্গে অভিযোগের ফলাফল কি হয়েছিল তা সংখ্যাটিতে উল্লেখ করেছি।
আজকের লেখাটি বেশ কজন বন্ধু-বান্ধবের অনুরোধে আমার সে সময়ের বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুদের নিয়ে লেখা। প্রাসঙ্গিক অনেক কিছু আসতেই পারে যা স্মৃতিচারণে স্বাভাবিক ব্যাপার। আমার ব্যাচের, আমার বিভাগের (সমাজ বিজ্ঞান)অনেকেই আজ নেই। আমার আলোচনায় যাদের উল্লেখ করব তাদের অনেকের সাথেই দীর্ঘ দিন যোগাযোগ নেই। প্রায়ই কথা-বার্তা হয় যাদের সাথে তাদের মধ্যে শফিক(প্রফেসর এবং সমন্বয়ক, সাউথ ক্যারোলিনা ষ্টেট ইউনিভার্সিটি), কাজী সদরুল (টরোন্ট, কানাডা), দেওয়ান শামসুল আরেফিন(বাদল), নিউ জার্সি অন্যতম। আদিত্য কুমার দেওয়ান কানাডা থেকে অস্ট্রেলিয়া চলে যাওয়ার পর আর কথা হয়নি। দু’বার নিউ ইয়র্ক এসে আমার সাথে থেকেছে। তাও ১৫ বছরের বেশী হয়ে গেল। আমার ছেলেমেয়ে তার সঙ্গ উপভোগ করেছে। এ ক’জনের বাইরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসমেটদের মধ্যে শামীম (অবসরপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত) আর সাথে যোগাযোগ নিয়মিত নাহলে ও আছে। কিছুদিন আগে ও প্যারিসের জানালা শীর্ষক অনুষ্ঠানে এক সাথে ছিলাম।
সমাজবিজ্ঞানের আমাদের সিনিয়র প্রফেসর মিজান মিয়া, অনুজ ড. গোলাম সারওয়ার মধু ও একই প্রোগ্রামে ছিল। একসাথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পাশ করেছি এমন চার জন বাচ্চু ভাইয়ের পরিচালনায় আমাদের সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে স্মৃতিচারণ করে খুব আনন্দ পেয়েছি। উল্লেখ করা যায় যে শামীম আর আমি একই ব্যাচের; সালিমুল্লাহ মুসলিম হলে ওয়েস্ট হাউসে একসাথে থেকেছি চার বছরের ও কিছু বেশী। ও যখন নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশ দূতাবাসের কন্সাল জেনারাল এবং কিছু দিন জাতিসঙ্ঘ স্থায়ী মিশনের ভারপ্রাপ্ত প্রধান ছিল তখন পারিবারিক পর্যায়ে নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। আমাদের আরেক বন্ধু ইফতেখার (রাষ্ট্র বিজ্ঞান)স্থায়ী মিশনে থাকার সময়ে ও মাঝেমধ্যে দেখাসাক্ষাত হতো। কাইসার, রেজা, ফরিদ এরা ও আমেরিকা ও কানাডায় বসবাস করছে । শেষোক্ত দু’জনের সাথে কয়েকবার দেখা হয়েছে বছর বিশেক আজ্ঞে। কাইসরের সাথে কয়েক বার ফোনে কথা হয়েছে ১৯৯৫-৯৬’র দিকে। ব্যবসা করে। তারা কয়েকজন ভাই (অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল নুরুল ইসলাম অনু সহ) একই শহরে থাকে। সবাই প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী।
আমার ব্যাচে সাংস্কৃতিক জগতে যাদের বিচরণ ছিল এবং পরবর্তীতে বেশ নাম করেছে এদের মধ্যে শাফিক, বাদল, মনু(প্রয়াত) ছাড়া ও নিলুফার, ইসমত (সুন্দর সেতার বাজাত), সদরুল এদের নাম উল্লেখ করার মত। শাফিক টিভি ভাষ্যকার- বিশেষত ক্রিকেট ও ফুটবল খেলার ধারাবিবরণীতে প্রায় নিয়মিতই থাকতো। নাটক পাগল ছিল, প্রযোজনা করতো। যদ্দুর মনে পড়ে , বাদল ও নাটক পাগল ছিল। মনু চমৎকার ঢোলক বাজাত। ছাত্র ইউনিয়নের মিছিল, শোভাযাত্রায় গলায় ঢোলক ঝুলিয়ে মনু গান গাইত। সাথে বালু (বিখ্যাত ফুটবল খেলোয়ার প্রতাপ শঙ্কর হাজরা’র ছোট ভাই Ñ নাম বোধ করি কুমার শঙ্কর হাজরা), শামীম এদের ও দেখেছি মনে হয়। সমাজবিজ্ঞান বিভাগে অনেক মেয়ে ছিল। এদের রূপের খ্যাতি ছিল সারা বিশ্ববিদ্যালয়ে । জেবুন্নেসা চৌধুরী , প্রিঞ্চেস মৈত্রেয়ী, স্বপ্না দেবনাথ, নাজমা, নিলুফার, আফরোজী, মঞ্জু (ভাল নাম মনে হয় মনোয়ারা), মাহবুবা, শামীমা, মমতাজ এ মুহূর্তে এ ক’জনের নামই মনে পরছে । বলে রাখা ভাল, আমাদের সময় ক্লাসমেট ছেলে মেয়ের মেলামেশা প্রায় ছিলোই না। ইতোমধ্যেই অনেকে মৃত্যুবরণ ও করেছে। যাদের খবর জানি তারা হলো : মজিদ (পেশায় উকিল ছিল), মরতুজ আলী (চট্টগ্রাম কলেজে সমাজবিজ্ঞানের সহযোগী অধ্যাপক; প্রফেসর আফসার উদ্দিন (মরহুম) এর চাচাতো ভাই), হেলাল উদ্দিন খান শামসুল আরেফিন, সমাজ বিজ্ঞান এবং পরবর্তীতে নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক), আব্দুল আলীম বুলবুল (প্রাক্তন ছাত্র নেতা, পেশায় এডভোকেট), এবং কামরুল (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক ও সালিমুল্লাহ মুসলিম হলের প্রভোস্ট- সম্পর্কে প্রফেসর একে নাজমূল করিম স্যারের নাতী)।
মেয়েরা শিক্ষকদের পিছু পিছু ক্লাশে ঢুকতো, ক্লাস শেষে একই ভাবে তারা তাদের কমন রুমে চলে যেত। ক্লাসে তাদের জন্য ভিন্ন বসার জায়গা ছিল। তার পর ও প্রেম- প্রীতির সম্পর্ক গড়ে যে উঠতো না তা নয়। লাইব্রেরিতে যাওয়া আসার পথে দেখা সাক্ষাত হতো। তবে, অবাধ মেলামেশার সুযোগ খুব একটা ছিল না।
আমার সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহপাঠীদের পেশা সম্পর্কে যতদূর মনে করতে পেরিছি আজ প্রায় ৫২ বছর অতিক্রান্ত সময়ের ম্রিয়মান স্মৃতি অন্বেষণে তার একটা সাধারণ ছক এ রকম-
* শিক্ষকতা- বিশ্ববিদ্যালয় ৭ জন,
* কলেজ-৭ জন (সংখ্যাটি বেশী হওয়ার সম্ভাবনা আছে),
* সরকারি চাকুরী-৮-১০ জন যার মধ্যে ফরেন সার্ভিস, ইপিসিএস, সমাজ কল্যাণ, যুব মন্ত্রণালয়, ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত । (চলবে)
Posted ৪:৫৩ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৯ আগস্ট ২০২১
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh