আশরাফ উদ্দিন আহমেদ | বৃহস্পতিবার, ০৫ মে ২০২২
প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সচরাচর ছোটখাট লক্ষ্য নির্ধারণ করে কাজে নামেন না। বারাক ওবামার সাথে ভাইচ-প্রেসিদেন্ত হিসেবে দু টার্ম কাজ করার সময়ও আ মন-মানসিকতা দেখা গেছে তবে প্রেসিডেন্ট মনোনয়ন ও নির্বাচনী প্রতিজ্ঞায় এমনতরো ধারাবাহিকতা জোরেশোরে স্পষ্ট হয়েছে। এখন তার প্রতিপক্ষ এগুলোকে ‘বিগ লাই’ বা চরম মিথ্যেচার হিসেবে ভোটারদের সামনে তুলে ধরার কাজে নেমে পড়েছে। এতে তিনি নিজে এবং ডেমোক্রেট পার্টি বেশ বেসামাল অবস্থায় নিপতিত হচ্ছে দ্রুত লয়ে । প্রথমে দেখা যাক তাঁর “বিগ প্রমিসেজ” কি ছিল যা এখন তাঁকে এবং দলকে দারুণ রকমের বেকায়দায় ফেলার অবস্থায় উপনীত করেছে ।
(ক) কোভিড -১৯ অতিমারিকে দ্রুততম সময়ে বিজ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে কব্জা করার প্রতিশ্রুতি ধাপে ধাপে দেয়া টার্গেট অনুযায়ী বাগে আনার কৌশল পুরোমাত্রায় সাফল্যের মুখ দেখেনি সত্য তবে প্রশংসনীয় মাত্রায় সফল হয়েছেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন ও তাঁর প্রশাসন। এ ক্ষেত্রে ও সমালোচকরা বলতে মুখিয়ে আছেন যে ট্র্যাম্প প্রশাসন ভ্যাকসিন আবিষ্কারের কাজটি তরান্বিত না করলে বাইডেন কিছুই করতে পারতেন না। যে সত্যটি তারা সযত্নে এড়িয়ে যান তাহলো প্রাক্তণ প্রেসিডেন্টের বিজ্ঞানের সামর্থ্য ও আর আশ্রয় নিতে অহেতুক দীর্ঘসূত্রিতার কারণে লাখে লাখে মানুষের মৃত্যুবরণ। ২০২২ মধ্যবর্তীকালীন নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের কোভিড-১৯ প্রশমিত করার নীতি ও কৌশল এবং সময়ে উদার সহায়তা প্রদানের প্রচেষ্টা ফলোদয় হবে আশা করা অহেতুক হবেনা মনে করার সঙ্গত কারণ আছে।
(খ) মুদ্রাস্ফীতি দমিয়ে রাখার লড়াইয়ে বাইডেন সুবিধে করতে পারেননি। আন্তর্জাতিক বাজারে ডলার এখনো তেজী থাকলে ও দেশের অভ্যন্তরে উদ্বেগজনক হারে বাড়ীভাড়া বেড়ে যাওয়া, মর্টগেজ রেটের উল্লফন গতি এবং বাড়ী তৈরির খরচ অনেক গুণ বেড়ে যাওয়ায় মধ্যবর্তী শ্রেণীর লোকজনের অবস্থা বড়ই করুণ। কভিডের সময়ে পাওয়া প্রণোদনা আর্থিক সঙ্গতি অবস্থায় ভাল প্রভাব ফেলবে বলে যে ধারণা সৃষ্টি হয়েছিল তা উবে যেতে সময় লাগেনি। এ বিরাট শ্রেনিটি ফুঁসে আছে বর্তমানে বিরাজমান মুদ্রাস্ফীতি ও বাড়ীভাড়া বেড়ে যাওয়ার প্রবণতায়। এ শ্রেণীর লোকজন ক্রমেই রাগান্বিত হচ্ছে । এ অবস্থা হউজিং সেক্টরের এ হেন অবস্থা রোধ করতে না পারলে ডেমোক্রেটদের এ সমর্থক গোষ্ঠী বেঁকে যেতে পারে ধারণা করা তেমন অসঙ্গত হবে না। গত বছরের তুলনায় এ বছর হউজিং সেক্টরে বৃদ্ধি ১৯.৮% ও শতাংশের ও বেশী। পাল্লা দিয়ে স্বাস্থ্য সেবা ও খরচের মাত্রা বেড়েছে যেমনটি স্টুডেন্ট লোনের ক্ষেত্রে। উচ্চতর পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের মাথাপিছু এ লোনজনিত ঋণ ৩৬,৬৩৫ ডলার। দেরিতে হলে ও সম্প্রতি প্রেসিডেন্ট বাইডেন এ বিষয়টি সহজে পরিশোধের ব্যেপারে কিছু নীতিমালা ঘোষণা করেছেন। মিডল ক্লাসে ধস নামলে আমেরিকার বর্তমানকার কন্সটিটিউশনাল সরকারের পতন ঘটতে পারে।
অন্যান্য উদ্দেশ্যগুলোর মধ্যে ‘বিলড ব্যাক বেটার’ , ‘ইউনাইট দ্য কান্ট্রি’ এবং ফিক্স ডেমোক্রাসি’- এ তিনটির ক্ষেত্রে অগ্রগতি সামান্যই; নেই বললেই চলে । অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি লক্ষ্য ছিল রাশিয়া ও চীনকে রশি টেনে ধর (Rein in Russia + China) । এ ফ্রন্টে অগ্রগতি মন্দ নয় যদিও অর্থনৈতিক অবরোধের বাইরে তেমন কোন কাজ লক্ষ্য করা যায়না । ইউরোপে মিত্রদের স্বপক্ষে রাখতে পারাটা সন্তোযজনক সন্দেহাতীত ভাবে তবে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন যে গতিতে চলছে তা অব্যাহত থাকলে পোল্যান্ড সহ বেশ কিছু ন্যাটো ভুক্ত মিত্রদেশ আক্রান্ত হয়ে যেতে পারে এমন আলামত লক্ষ করা যায় । মহাশূন্যে রাশিয়া, চীন ও ভারত যে হারে উচ্চ প্রোফাইলের অ্যান্টি সেটেলাইট মিসাইল টেস্ট করছে তাতে উদ্বিগ্ন না হয়ে পারা যায় না । ১৯৬৭ সালে প্রণীত এবং সকল পার্টি কতৃক স্বাক্ষরিত Outer Space Treaty অবমাননা করে রাষ্ট্র তিনটির এহেন তৎপরতা আন্তর্জাতিক শান্তির পক্ষে দারুণ বাঁধার সৃষ্টি করবে । মহাশূন্যে এমন পরীক্ষা নিরীক্ষা বিশ্বকে মহা বিপদে নিক্ষেপ করেছে । যুক্তরাষ্ট্র বিগত ১৮ এপ্রিল ২০২২ তারিখে এককভাবে ঘোষণএ করেছে যে মহাশূন্যে অ্যান্টি সেটালাইট মিসাইল টেস্ট দেশটি করবে না । বিনীত ভাবে অন্য দেশগুলোকে এ উদাহরণ অনুসরণ করতে অনুরোধ করেছে । বিশ্ব রাজনীতির অঙ্গনে যে অবস্থা তাতে রাশিয়া, চীন, ভারত কেউই এ অনুরোধে কর্ণপাত করবে এমন ভাবার স্বপক্ষে তেমন জোরালো যুক্তি খুঁজে পাওয়া যায় না । (চলবে)
Posted ৭:২৫ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৫ মে ২০২২
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh