ড. আশরাফ উদ্দিন আহমেদ | বৃহস্পতিবার, ১৫ অক্টোবর ২০২০
(চতুর্থ অংশ) : নয় মিলিয়নের ও বেশী লোক ইতোমধ্যেই ২০২০ নির্বাচনে ভোটে দিয়ে ফেলেছে। এদের অধিকাংশই ডেমোক্রেটিক পার্টির সমর্থক বলে সংবাদে প্রকাশ। যে ৩০টি স্টেটের খবর পাওয়া গেছে সেগুলোতে ডেমোক্রেটরা রিপাবলিকানদের চেয়ে দ্বিগুণের ও বেশী সংখ্যায় ভোট দিয়েছে । অবস্থা দেখে মনে হওয়া অস্বাভাবিক নয় যে ডেমোক্রেটরা ৩ নভেম্বর ভোট কেন্দ্রে যেয়ে ভোট দিতে নিরাপদ বোধ করছেনা। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের হুমকি এ ক্ষেত্রে কাজ করছে কিনা কে জানে । তিনি বিতর্কে সতর্ক বার্তা উচ্চারণ করেছেন যে তাঁর কট্টর সমর্থক বাহিনী প্রস্তত থাকবে এবং ডাকলেই আসবে। তাছাড়া, ভোট কেন্দ্রে যাতে জাল ভোটে কেও না দিতে পারে সেজন্য তাঁর কট্টর সমর্থক বাহিনীর সদস্যরা পাহারায় থাকবে । কি উদ্বেগজনক কথা !
অন্যান্য বারে যেমনটি হয়েছিল, এবার ও অর্থনীতি বিষয়টিই সঙ্গত কারণেই ভোটারদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্ব বহন করবে । মনে রাখতে হবে যে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যে অবস্থান করছে । চরম দুরবস্থায় নিপতিত হয়নি যদি ও। মূলত সরকার উদারভাবে সহায়তা দেয়ার কারণে এখনো খেতে খাওয়া এবং চাকুরী করে যারা দিনাদিপাত করে তারা কষ্টেসৃষ্টে টিকে আছে । কিন্তু যে ভাবে এ সহায়তার রাজনীতিকরণ হচ্ছে তাতে এ ব্যবস্থা ভেঙ্গে গেলে বা সাহায্যের পরিমাণ কমিয়ে দিলে অর্থনীতি মহামন্দার রূপ পরিগ্রহ করতে পারে । কভিড -১৯ যে ভাবে দ্বিতীয়বারের মত ছোবল হানছে তাতে ব্যবসা-বানিজ্য চালু হতে অনেক সময় লাগবে বলেই মনে হয় । বেকারভাতার জন্য আবেদনকারীর সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। এ পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় সরকার ও বেশকিছু রাজ্য সরকারের মধ্যেকার দ্বন্দ্ব আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রায় স্থবির অবস্থার নিপতিত করছে খুব তাড়াতাড়ি। ছোটখাটো ব্যবসা, যেমন হোটেল, রেস্টুরেন্ট ইত্যাদির দুর্দশার জন্য এ বিরোধ দায়ী বললে ভুল হবেনা তেমন। প্রণোদনা ভাতা ও পরিমাণ নিয়ে কংগ্রেস ও সিনেটের বিরোধ চলছেই। প্রেসিডেন্ট এ সমস্যা সমাধানের পরিবর্তে একেকবার একেক টুইট বার্তা দিয়ে পুরো বিষয়টি ঘোলা করে ফেলেছেন।
অর্থনীতির পরেই যে বিষয়টি এবারের নির্বাচনে সমধিক গুরুত্বপূর্ণ তা হলো স্বাস্থ্য সেবা। করোনার ভয়াবহতা এ বিষয়টিকে জনমানুষের প্রাণের দাবি হিসেবে সামনে নিয়ে এসেছে । এফোরডেবল কেয়ার বা ওবামা কেয়ার এদেশের ২০ মিলিয়নের ও বেশী লোকের স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের এক মাত্র মাধ্যম। এ ইন্সুরেন্স ব্যবস্থা বাতিলের ইস্যু ভোটে প্রভাব ফেলবে নিশ্চিতভাবে। এর সাথে ফ্রি-এক্সিস্টিং হেলথ কনডিশন পাবলিক ইনসিওরেন্স কভারেজ থেকে বাদ দেয়ার প্রচেষ্টার কারণে রিপাবলিকান পার্টি আনেক ভোটে হারাবে। গুরুত্বের দিক থেকে অতি সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টে তড়িগড়ি করে বিচারপতি নিয়োগ তৎপরতা বিষয়টি ও প্রভাব ফেলবে। করোনা ভাইরাস সমস্যা ব্যবস্থাপনায় বর্তমান সরকারের অদক্ষতার কারণে রিপাবলিকান দল প্রচুর সংখ্যক ভোটে হারাবে বলে মনে করার পেছনে প্রচুর যুক্তি আছে তবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নির্বাচন প্রচার অভিযানে মাস্ক না পরে লোকসমাগম ভিন্ন বার্তা ও দেয় । করোনা আক্রান্ত লোকের সংখ্যা যে ভাবে বেড়ে চলেছে তাতে মনে হয় এ ইস্যুতে ট্রাম্প ভোট হারাবেন।
যুক্তরাষ্ট্রে বর্ণবাদ সমস্যা অনেক পুরোনো হলে ও সাম্প্রতিক সময়ে এর ভয়াবহতা অনেক বেড়ে গেছে । পুলিশের গুলি ও অমানুষিক মারধোরে বেশ ক’জন আফ্রিকান-আমেরিকান ম্যারা গেলে মারদাঙ্গা, দোকানপাট লুটের মতো বেশ কিছু ঘটনা ঘটে। মাইনরিটি জনগণের অসন্তোষ চরম পর্যায়ে থাকায় ভোটে এর প্রভাব পরবে অবশ্যই । তবে, শ্বেতাঙ্গ চরমপন্থিরা কৃষাঙ্গ ও তাদের সহযোগীদের রাস্তাঘাটে বিক্ষোভ ও বিক্ষিপ্ত লুটপাটের ঘটনাকে উপজীব্য করে যে পালটা অভিযান ট্রাম্প ও তাঁর দলের মদদে করে যাচ্ছে তা উগ্রপন্থী হোয়াইটদের উস্কে দেয়াড় জন্য যথেষ্ট কাজ করছে । নিরেপেক্ষ ও উদারপন্থী কিছু হোয়াইট রিপাব্লিকানদের পক্ষে ভিড়ে গেলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবেনা । এমনিতেই, গান কন্ট্রোল, এবরশন রাইট ইস্যু নিয়ে ইভাঞ্জেলিকান খ্রিস্টান সম্প্রদায় সহ বহু সংখ্যক সাদা আমেরিকান ডেমোক্রেটদের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে আছে । বাইনে-হ্যারিস জুটি ও তাদের দল ক্ষমতায় গেলে উল্লেখিত ইস্যুগুলো উদার পন্থি, নারীবাদী এবং প্লানড পেরেনডহুডের স্বপক্ষে যাবে। রিপাবলিকরা তো বটেই, তাদের প্রতি সামান্য সহানুভূতি আছে এমন ধর্মভীরু খিস্টান এ বিষয়গুলিতে ট্রাম্প ও তাঁর দলকেই সমর্থন করার কথা। অন্যান্য আভ্যন্তরীণ ইস্যুর মধ্যে ট্যাক্স, সীমান্ত প্রাচীর, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন, অভিবাসন ইস্যু, নির্বাচনে রাশিয়া ও চীনে হস্তক্ষেপ সম্পর্কিত গুজব, বিভিন্ন দেশের, বিশেষত চীনের সাথে ট্রেড সমস্যা ও যুক্তরাষ্ট্রের ফার্ম মালিক, বাণিজ্য ইত্যাদির উপর এর প্রভাব শীর্ষক বিষয়গুলো ভোটারদের পছন্দ-অপছন্দ কিছু মাত্রায় হলেও প্রভাবান্বিত করতে পারে। আন্তর্জাতিক ইস্যুগুলোর মধ্যে রাশিয়া, চীন , ইরান, নর্থ কোরিয়া, ভারত (মোদী সখ্যতা), ইসরাইয়েল (রাজধানী স্থানান্তর)বনাম মুসলিম বিশ্ব , সাউথ আমেরিকা, ইত্যাদি ২০২০ নির্বাচনে অল্পস্বল্প প্রভাব ফেলতে পারে। পরবর্তী সংখ্যায় এগুলোর উপর আলোকপাত করার ইচ্ছে রইলো ।
(প্রবন্ধটি রচনায় Pew Research Center, U.S. Politics and Policy, Aug. 13, 2020
Election 2020: Voters are highly Engaged , but nearly half expect to have difficulties Voting থেকে সহায়তা নেয়া হয়েছে)।
অক্টোবর ১১, ২০২০/ লং আইল্যান্ড, নিউ ইয়র্ক ।
Posted ১১:০৬ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৫ অক্টোবর ২০২০
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh