ড. মাহবুব হাসান : | বৃহস্পতিবার, ২৬ নভেম্বর ২০২০
অবশেষে মাথা নোয়াতে শুরু করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। গত সোমবার বিকেলে, আসলে সন্ধ্যায় জেনারেল সার্ভিসেস অব এ্যামিনিস্ট্রেশন (জিএসএ)- এর প্রধান এমিলি মারফি নতুন প্রেসিডেন্টের জন্য ফেডারেল সরকারের রাষ্ট্রীয় বিষয়-আশয় বুঝিয়ে দেবার ইনডিপেনডেন্টলি ডিসিশন নিয়েছেন। সেটাও ঘটেছে গত সোমবার সন্ধ্যায়। তার আগেই মিশিগানের বোর্ড অব ক্যানভাসার্স জানিয়েছে যে ওই রাজ্যে বাইডেন জিতেছেন। সেই জানানোটা সারটিফায়েড ভোটের মাধ্যমেই হয়েছে। ফলে ট্রাম্প প্রশাসনের জিএসএ প্রধান এমিলি বুঝে গেছেন যে আর দেরি করা ঠিক হবে না। যদিও ট্রাম্প টুইট করে বলে চলেছেন যে তার কেসগুলো এখোনো স্ট্রং। গো-হারার পরও যদি কেউ বলে যে তার কেসগুলো স্ট্রং, তাহলে ধরে নিতে হবে যে, তিনি হয় কেজি ফর পাওয়ার, না হলে তার মতিভ্রম ঘটেছে। ট্রাম্পের নিয়োগকৃত জেনারেল সার্ভিসেসের জনবল প্রধান এমিলি মারফি আইনের আলোকে নিজের অবস্থানকে পোক্ত রাখতেই জানিয়েছেন যে এতোদিন ( ২ সপ্তাহেরও বেশি সময়) তিনি কারো প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ প্ররোচনায় দেরি করেননি। আসলে ইলেকশন রেজাল্টে নিয়ে ট্রাম্পের কোর্টে যাওয়ার ফলেই এমনটা ঘটেছে। ১৯৬৩ সালে সৃষ্ট ক্ষমতা হস্তান্তর সম্পর্কিত অ্যাক্ট-এ বলা হয়েছে, এ-কাজটি জিএসএ প্রধানের ক্ষমতার অন্তর্গত। যদিও তারা আনিগতভাবে ভাড়ায় খাটা মানুষ। কিন্তু আইন তাকে সেই ক্ষমতাই দিয়েছে।
একটু দেরি হলেও ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া মুরু হওয়ার একটাই মানে দাড়ায়, তাহলো প্রেসিডেন্ট-ইলেক্ট পরিপূর্ণ রাষ্ট্রপতির দায়িত্বে পৌছার পথে কদম রাখছেন। ফলে ডেমোক্রেট দলে যেমন খুশির বান না ডাকলেও তাদের ক্ষমতায় যাওয়ার সংগ্রামের শেষ ঘামটি শেষ হলো। এখন জো বাইডেনের ট্রিম ক্ষমতার নাড়ী-নক্ষত্র বুঝে নেবেন। কাজটি মঙ্গলবার ২৪ নভেম্বর সকাল থেকেই শুরু হয়েছে। ২০২১-এর ২০ জানুয়ারি, বাইডেন শপথ নেবার সাথে সাথে এই ট্রানজিশন-ধারা শেষ হবে। তবে, ছোটো গল্পের মতো ‘শেষ হেইয়াও হইলো না শেষ’ ধরনের লেজ থেকে যাবে। আর তাহলো সেক্রেটারিদের প্রস্তাবিত নিয়োগ হাউজ ও সিনেটের অনুমোদনের পরই তা কার্যকর হবে। আগামি চার বছর (বাইডেন বলেছেন তিনি একটি টার্ম প্রেসিডেন্সিতে থাকবেন। সেটা তার বয়সের কারণেই বোধহয়। বর্তমানে তাঁর বয়স ৭৮।) জো বাইডেন ক্ষমতায় থাকবেন। চার বছর পর হয়তো কমলা হ্যারিস ডেমোক্রেটদের প্রার্থী হবেন কিংবা অন্য কাউকে প্রার্থী দেয়া হবে। আমেরিকান সমাজের কনজারভেটিভ মানুষের সংখ্যা নিতান্তই কম নয়। রিপাবলিকানরা কনজারভেটিভ। তার সাথে যোগ হয়েছে ‘সাদাত্ববাদ’ আর মুসলিম বিদ্বেষ’। বর্ণবাদি হোয়াইট সুপ্রিম’ বলে যে ধারাটি প্রকাশ্যে ও রাজনৈতিকভাবে উসকে দিয়েছে ডোনাল্ড ট্রাম্প, সেই ক্ষ যে দিন দিন আরো বাড়বে, তা বোঝা যায়। কারণ, তারা যতই হারতে থাকবে ক্ষমতায় যাওয়ার নির্বাচনে, ততই মাইনোরিটি ফিলিংস থেকে নিজেদের বিপন্ন বোধ করবে তারা। এবং একদিন তারা চরমভাবে হেরে যাবে, যাবেই। এটাই ইতিহাস আমাদের শিক্ষা দেয়, দিয়েছেন। মানবতার কাছে মানবতার কাছে তারা হেরে যেতে বাধ্য। আমাদের কাছে সেই রকম তথ্যই আছে।
২০১৬ সারের নির্বাচনে, ট্রাম্পের চেয়ে ৩০ লাখ পপুলার ভোট বেশি পেয়েছিলেন হিলারি ক্লিনটন। আমেরিকান সাধারণ মানুষ কনজারবেটিভ নয়, সেটাই প্রমান করেছে। কিন্তু রিপাবলিকানরা যে অন্ধ কনজারভেটিভ, সেটা সাধারণ মানুষ জানে। ইরেকশন সিস্টেমের কাছে সে-বার হেরেছিলেন হিলারি, জনগণের কাছে নয়। ইলেকটোরাল কলেজ ভোট নামের যে ‘গ্যাড়া’ আছে, তার প্রয়োজন আমেরিকার গণতন্ত্রকে দুনিয়ায় প্রশ্নবিদ্ধ করে রেখেছে। এটা আসলেই কোনো গণতন্ত্র হতে পারে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। আমার বিবেচনা, আমেরিকান নির্বাচন তেকে এই ইলেকটোরাল ভোট ব্যবস্থার শেকড় উপড়ে ফেলার সময় এসেছে। আরো দেরি করলে, মানুষকে নারী ও পুরুষের মধ্যে বিভক্ত করে রাখার খেসারত দিতে হবে।
মানুষকে শাদা কালো পীত বা হলুদ ও বাদামি হিসেবে না দেখে, মানুষকে নারী ও পুরুষ হিসেবে বিবেচনা না করে কেবল ‘ মানুষ’ এই অভিধাসিক্ত করাই হবে মুক্তচেতন মানুষের কাজ।
আমরা জানি ১৯২০ সালের আগে, এতো ভালো একটি সংবিধান উপহার দেবার পরও সেই অনন্য নেতারা এ-দেশের নারীদের ভোটাধিকার দেননি। নারীর অধিকার বঞ্চনার আরেক নাম হতে পারে, তাদের পাশবিক ও অনৈতিকতারই প্রতিফলন। এ-তেকে বেরিয়ে আসতে হবে তাদের। নারীর রাজনৈতিক অধিকার দেবার মতোই আমরা মনে করি আমেরিকান জনগণ ‘ইলেকটোরাল কলেজ ভোট ’ উঠিয়ে দেবার জন্যও ভোট দেবে। আগামি ২০২৪ এই নির্বাচনে এ বিষয়ে ভোট নেবারও অনুরোধ আমরা করি।
আমি মনে করি, আমেরিকান রাজনৈতিক ও সামরিক উত্থানের পেছনে যে নীতি ও আদর্শ আছে, তাকে আরো ওপরে নিয়ে যেতে হলে ‘পরধনে’ মত্ত না হয়ে অন্যদেশের জন্য সামাজিক-সাংস্কৃতিক উন্নয়নের পাশাপাশি মানবিক পৃথিবী গড়ে তোলার পররাষ্ট্র-নীতি গ্রহণ জরুরি এখন। জো বাইডেন যদি এ-সব পদক্ষে নেন, তাহলেই তার এই বয়েসে প্রেসিডেন্সিতে যাওয়া স্বার্থক হবে। গতানুগতিক প্রেসিডেন্ট হয়ে ইতিহাসে জায়গা পাওয়ার চেয়ে অগতানুগতিক প্রেসিডেন্ট হলেই বরং পৃথিবীর মানুষ তাকে মনে রাখবে।
Posted ১০:৩১ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৬ নভেম্বর ২০২০
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh