ড. আশরাফ উদ্দিন আহমেদ | বৃহস্পতিবার, ২২ জুলাই ২০২১
পশ্চিম আফ্রিকার সাহেল অঞ্চলের এ দেশটির কথা খুব কম লোকই জানে । চার দিক থেকে পাহাড় পর্বত বেষ্টিত প্রায় ২৭৪,২০০০ স্কয়ার কিলোমিটার বা ১০৫,৯০০ স্কয়ার মাইল আয়তনের দেশটি নাম বদল হয়েছে কয়েকবার। ১৯৫৮ থেকে দেশটির নাম ছিল রিপাবলিক অফ আফার ভোল্টা । ১৯৮৪ সাল থেকে বুরকিনা ফাসো নামে বিশ্বের বুকে পরিচিতি পায়। অধিবাসীরা বুরকিনাবে (Burkinabe) নামে পরিচিত। রাজধানী ওয়াগাদুগু (Ouagadougou) দেশটির বৃহত্তম নগর ও বটে । ফ্রাঞ্চের কলোনী ছিল বিধায় সরকারি ভাষা এখনো ফ্রেঞ্চ । তবে , মাত্র ১৫% লোক এ ভাষায় কথা বলে । দেশটি ৫৯ টি ভাষা প্রচলিত আছে । মোওে (Moore) ভাষায় সর্বাধিক লোক (প্রায় ৫০%)কথা বলে । ফুল (Fula)ও দিউলা (Diola) ও জাতীয় ভাষা হিসেবে স্বীকৃত ।
দেশটি জাতিসত্তার দিক থেকে বিভক্ত । মূল এথনিক গ্রুপগুলো ও তাদের জনসংখ্যার (২১,৫১০,১৮১ জাতিসঙ্ঘের ২০২০ হিসেব অনুযায়ী) শতকরা হার হলো – মসি (৫২%) ফুলা(৮.৪%) , দিউলা (০.৮% ), সনুফো (৪.৫), গুরুন্সি(৪.৬) গুরমা (৭%), তুয়ারেগ (১.৯%) এবং লবি(২.৪%)এবং বুবু (৪.৯)। অধিবাসীদের শতকরা ৬১ ভাগ মুসলমান । ক্রিস্টিয়ানদের সংখ্যা শতকরা ২৩.২ ভাগ। তাছাড়া, স্থানীয় বিশ্বাসের উপর আস্থাশীল (Indigenous beliefs) এমন জনসংখ্যা মোট শতকরা ১৫.৩ ভাগ । রাজনতিকভাবে বুরকিনা ফাসো বেশ কটি সমস্যাসঙ্কুল ধাপ অতিক্রম করে বর্তমানে নিপতিত হয়েছে পশ্চিমা দেশগুলোর হীন ষড়যন্ত্রে ।
লিবিয়ায় ২০১১ সালে ন্যাটো বোমা হামলার পর থেকে দারিদ্র্যের কষাঘাতের সাথে নিত্য যুদ্ধে লিপ্ত থাকলে ও বুরকিনা ফাশো রাজনৈতিক ভাবে মোটামুটি শান্ত একটি দেশ ছিল । সম্প্রতি টাইম ম্যাগাজিনে কলাম লেখক আঙ্গেলিনা জুলি দেশটি নিয়ে চমৎকার ভাবে তাঁর সুচিন্তিত মতামত অত্যন্ত স্পষ্ট ভাষায় ব্যাক্ত করেছেন । এ প্রবন্ধটি লেখার অনুপ্রেরণা জুলি’র FLEEING AN OVERLOOKED WAR’ (Time, July 19/ July 26, 2021’ (ঞরসব, ঔঁষু ১৯/ ঔঁষু ২৬, ২০২১) মতামত নিবন্ধটি পরে পেয়েছি । উল্লেখ্য করা যেতে পারে যেতে আঙ্গেলিনা জুলি মূলত ছায়াছবির জগতে স্বনামখ্যাত অভিনেত্রী (একাডেমী পুরস্কারপ্রাপ্ত) হলে ও মানবিক কর্মকাণ্ডের জন্য সুবিখ্যাত । তিনি জাতিসংঘের হাই কমিশনার ফর রিফুইজির বিশেষ দূত হিসেবে বিভিন্ন দেশে ঘুরে বেড়ান । রাজনৈতিক , সামাজিক সমস্যা সঙ্কুল সব দেশে মৃত্যুভয়ের পরোয়া না করে জুলি সাহসিকতার সাথে মানবপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে এ গুরুদায়িত্ব পালন করে আসছেন। মমতাময়ী এ মানুষটি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে থেকে দরিদ্র পরিবারের ছেলেমেয়েদের দত্তক হিসেবে নিয়ে বড় আকারের পরিবার গড়ে তুলেছেন । বিভিন্ন দেশে, বিশেষত আফ্রিকায় শিক্ষা বিস্তারে তিনি অবদান রেখে চলেছেন দীর্ঘদিন যাবত।
স্মরণ করা জেতে পারে জে লিবিয়ার লৌহ মানব মুয়াম্মার গাদ্দাফির উচ্ছেদের পরবর্তীতে পশ্চিমা দেশগুলোর প্রদত্ত বিরাট পরিমাণ যুদ্ধসরঞ্জাম পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে চলে যায় । মালি , নাইজার, এবং বুকানির ফাশো সয়লাব হয়ে যায় গোলাবারুদের সহজ প্রাপ্তি এবং যুদ্ধবাজ সৈনিকদের অস্ত্র ব্যবহারের প্রস্তুতিতে । চরমপন্থি দলগুলো ক্ষমতা দখলের নেশায় মেতে উঠে । সহজসাধ্য টার্গেট হয় নিরস্ত্র গ্রামবাসী যারা কৃষিকাজ ও পশুচারণ করে জীবিকা অর্জন করতো । অবস্থা এমন হয় যে দেশটি যেন উদ্বাস্তুদের ছাউনি পরিণত । মালি থেকে পালিয়ে আসা উদ্বাস্তুদের ছাউনিতে ও বিদ্রোহীরা আক্রমণ করে।
জাতিসঙ্ঘের ভাষ্য মতে বিদ্রোহী মিলিটেন্টদের তাণ্ডবে ১.২ মিলিয়ন বুরকিনাবে ঘরবাড়ী ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয় । প্রতিনিয়ত আক্রমণের ফলে তারা একস্থানে বেশী দিন থাকতে পারতোনা। প্রয়োজনের তুলনায় খাদ্য সাহায্য নেহায়েতই অপ্রতুল বিধায় উদ্বাস্তু শিবিরগুলোতে ক্ষুধা ও দুর্ভিক্ষ অবস্থা লেগেই আছে । বৃষ্টিপাতের অভাবে দেশটিতে শুষ্ক অবস্থা দীর্ঘদিন ধর্ েচোঁচে যে কারণে চারণভূমি, আবাদের জমি বিরান হয়ে যাচ্ছে দ্রুত । পানির অভাব প্রকট । সব মিলিয়ে এক সময়ের রাজনতিক ভাবে স্থিতিশীল, অর্থনৈতিক দিক থেকে তেমন সম্পন্ন নাহলে ও পার্শ্ববর্তী অনেক দেশ থেকে সহনশীল অবস্থানে থাকা দেশটি আজ বিপর্যস্ত । ২০১১ থেকে ২০১৫ মাত্র চার বছরেই দেশটি এ হালে পরিণত হয় ।
আন্তর্জাতিক গোস্টি বুরকিনা ফাসো’র এহেন দুর্গতিতে আশানুরূপ দেয়নি । এ প্রসঙ্গে এঙ্গেলিনা জুলি’র বক্তব্য প্রণিধান যোগ্য । তিনি বলেন, Humanitarian aid is no substitute for a livelihood, and the funding trickling down into the country doesnÕt come close to matching the scale of the suffering. The U.N. appeal for Burkina Faso is less than a quarter funded. This means that UNHCR and partners have only been able to provide shelter -a basic plastic tent with a wood frame – to 1 in 10 displaced people in the country.
সাহেল এবং সাব-সাহারান অঞ্চলে উদ্বাস্তুদের এই যে ভীড় তাঁর কারণ নিহিত আছে পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যপ্রাচ্য এবং আফগানিস্থানে খনিজ সম্পদ লুণ্ঠন ও আর সাথে সংপৃক্ত অন্যান্য বহুবিধ কার্যকলাপ । এ সবের যে মূল্যমান আমরা দেখছি তা ভয়াবহ । পরিবেশ বিপর্যয় তো আছেই। দ্রুতগতিতে উর্বরা ভূমি খরাগ্রস্থ হয়ে চাষাবাদের অযোগ্য হয়ে যাচ্ছে । পশুপালনের জন্য উপযুক্ত চারণ ভূমি নেই বললেই চলে। শিক্ষা , স্বাস্থ্য, খাবারের অভাব, অস্বাস্থ্যকর আবাসন ইত্যাদি সমস্যাবলী কোটি কোটি শিশুকিশোর ও সকল বয়সের মানুষের নিত্যদিনের জীবন সাথী হয়ে গেছে। আন্তর্জাতিক টেরররিজম দমনের নামে আফগানিস্থান, সিরিয়া তথা মধ্যপ্রাচ্য থেকে আফ্রিকায় স্থানান্তরিত সংঘর্ষের মাঠে এ খেলায় যে সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবন যাত্রার অমানবিক ব্যাঘাত, জীবন নাশ সহ অন্যান্য ক্ষয়ক্ষতি তার খেসারত কে দেবে?
Posted ২:০০ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২২ জুলাই ২০২১
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh