ড. আশরাফ উদ্দিন আহমেদ | বৃহস্পতিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২০
(দ্বিতীয় ও শেষ অংশ) : যুক্তরাষ্ট্র গুরুত্বপূর্ণ অন্ত—র্জাতিক বিভিন্ন সংগঠনের অত্যন্ত সক্রিয় সদস্য। প্রভাবশালী ৮টি সেরা দেশের অর্থনীতি ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নীতিমালার সম্মত রূপরেখা বা খসড়া গাইড লাইন জি ৮ এর শীর্ষ বৈঠক বা বাৎসরিক সামিট নেতাদের মধ্যে মতবিনিময় ও চুলচেরা বিশ্লেষণের পর নির্ধারণ করা হয়। কোন সদস্য রাষ্ট্র সদস্য নয় এমন কোন রাষ্ট্রের উপর অর্থনৈতিক জুলুম করলে তার বিচার ও ফয়সালা এ গ্রুপ করে থাকে ৎ। উদাহরণ হিসাবে ২০১৪ সালে রাশিয়ার বহিষ্কারের কথা উল্লেখ করা যায়। ইউক্রেন ক্রাইসিস এ রাশিয়া নাক গলালে এবং অভিযুক্ত হলে দেশটির সদস্য পদ সাময়িক ভাবে বরখাস্ত করা হয়েছিল । জি২০ কলেবরে বড় হলে ও বিশ্বের অর্থনৈতিক ও ট্রেড , সদস্য রাষ্ট্র গুলোর মধ্যে সদ্ভাব সৃষ্টি ও তা বজায় রাখা ইত্যাদি ক্ষেত্রে জি ৮ এর মতই ভূমিকা পালন করে । দুটো গ্রুপেই যুক্তরাষ্ট্র অত্যন্ত প্রভাবশালী সদস্য বিধায় তার মতামত সাধারণত সমধিক গুরুত্ব পেয়ে থাকে। চীন এবং রাশিয়া ইদানীং যুক্তরাষ্ট্রের সাথে অনেক ইস্যুতে ভিন্ন মত পোষণ করলে ও দুটো গ্রুপেই যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থক বেশী থাকায় দেশ দুটো সুবিধে করতে পারেনা ।
জাতিসংঘের সৃষ্টিতে আমেরিকা অত্যন্ত জোরালো ভূমিকা রেখেছিল । এ বিশ্ব সংস্থার সদর দপ্তর ও যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক নগরীতে। চীন, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য, এবং কানাডা সহ পাঁচ জন স্থায়ী সদস্যের একজন যুক্তরাষ্ট্র। জাতিসঙ্গের মোট বাজেটের ২২% যুক্তরাষ্ট্র বহন করে আসছে সংগঠনটির জন্মের পর থেকেই। জাতিসঙ্গের শান্তিরক্ষা বাজেটের ও ২৭% আমেরিকাই বহন করে।
জাতিসঙ্গের বিভিন্ন কর্মসূচি বা প্রোগ্রামে একক দেশ হিসেবে আমেরিকাই সবচেয়ে বেশী তহবিল যোগান দেয়। বিগত কয়েক বছর যাবত যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তার বা হিস্যার পরিমাণ অনেক হ্রাস পেয়েছে । বেশ কিছু ক্ষেত্রে ওয়াদাকৃত বরাদ্দ আংশিক বা একদমই ছাড় করেনি । করোনা ভাইরাস সংক্রান্ত ব্যাপারে ওয়ার্ল্ড হেলথ অরগানাইজেশন এর নীতিমালা ও মোকাবেলা পদ্ধতি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প পছন্দ করেননি বিধায় এ প্রোগ্রামে কোন বরাদ্দ দেয়া থেকে যুক্তরাষ্ট্র সরকার বিরত থেকেছে ।
ফলত , কোভিড-১৯ প্যানডেমিক মোকাবেলায় চিকিৎসা (প্রতিরোধক বা প্রতিষেধক কোনটিতেই) সেবা, গবেষণা বা অন্যান্য ব্যবস্থা নেয়া থেকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে বলতে গেলে নিশচুপই থাকতে হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই আমেরিকা ও জাতিসঙ্ঘের মধ্যে বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে মত বিরোধ দেখা যাচ্ছে। সিকিউরিটি কাউন্সিলে সিদ্ধান্ত গ্রহণে দীর্ঘসূত্রিতা এবং চীন ও রাশিয়ার যুক্তরাষ্ট্র আনীত বা সমর্থিত বিষয়গুলোতে চীন এবং রাশিয়ার অবধারিত ভাবে ভেটো প্রদান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও তার প্রশাসনের মেনে নিতে কষ্ট হয় । জাতিসঙ্ঘ আলাপ আলোচনা বা অন্য কোন উপায়ে এ অবস্থা থেকে উত্তরণের ব্যবস্থা করতে না পারলেই ট্রাম্প ও তার প্রশাসন সংস্থাটিকে গালমন্দ করে। তাছাড়া, ইদানীংকালে জাতিসংঘের মতামতের তোয়াক্ষা না করে বা জাতিসংঘের নজরে না এনেই অনেক বিষয়ে ট্রাম্প প্রশাসন ব্যবস্থা নিয়ে নিচ্ছে এমন ও দেখা যায়। অতি সাম্প্রতিক কালে তেলআবিব থেকে জেরুজালেমে ইসরাইলের রাজধানী সরিয়ে নেয়া বা ইউনাইটেড আরব আমিরাত ও বাহরাইনের ইস্রাইলের সাথে শান্তিচুক্তি পুরো মুসলিম বিশ্বের আবেগ ও মনোভাবকে পাস কাটিয়ে নেয়াটা ইসরায়েলের স্বার্থেই। আমেরিকা সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইনের প্রতিরক্ষায় যে ভূমিকা রাখছে সে ক্ষেত্রে ট্রাম্পের দেয়া অভিমতের বাইরে কিছু করার উপায় এ ছোট দেশ দুটোর নেই বল্লেই চলে। জাতিসঙ্ঘ ও এ সব ক্ষেত্রে অসহায় । তহবিলের জন্য আমেরিকার উপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীলতা জাতিসঙ্ঘকে অতিদ্রুত একটি অকার্যকর এবং নামসর্বস্ব সংগঠনে পরিণত করছে ।
যুক্তরাষ্ট্র এতই শক্তিমান এবং শক্তিমদমত্ত দেশ যে স্বীয় স্বার্থে সে জাতিসঙ্ঘের বা বিশ্বের অপরাপর দেশের মতামতকে তুড়ি মেরে নিজের কাজ করে ফেলবে। তবে , মাঝেসাঝে জাতিসঙ্ঘের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ার মধ্যে থেকে ও কাজ করে। ২০১১ সালে লিবিয়া ক্রাইসিস মোকাবেলায় জাতিসঙ্ঘ যেভাবে নীতিমালা দিয়েছে তা যুক্তরাষ্ট্র অনুসরণ করেছে । সাম্প্রতিক সময়ে সিরিয়াতে ও যুক্তরাষ্ট্র জাতিসঙ্ঘের নীতিমালা ও সিদ্ধান্ত মেনে কুটনৈতিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করেছে। আবার, জলবায়ু পরিবর্তনের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে জাতিসংঘের নীতিমালা, অনুরোধ- উপরোধের তোয়াক্কা না করে নিজস্ব যুক্তিতে চলছে ; বিজ্ঞানকে ও ধর্তব্যের মধ্যে আনতে নারাজ। দেশের পশ্চিম উপকূলীয় অঞ্চলের বনাঞ্চলে স্মরণ কালের ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের সাথে জলবায়ু পরিবর্তনের সম্পর্ক রয়েছে – একথা মানতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প রাজী নন। সোজাসাপ্টা কথা তার, তিনি জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে বিজ্ঞানের ব্যাখ্যা মানেন না।
প্রতি চার বছর পর পর এহেন শক্তিধর দেশের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এবারের ইলেকশন বিশেষভাবে অর্থবহ। সারাবিশ্ব করোনা মহামারীর করালগ্রাসে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট প্রথম যখন ভাইরাসটির উদয় হয় এদেশে তখন তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিতে চেয়েছিলেন। সম্ভব হয়নি। সাত মাস অতিক্রান্ত হলে ও কোভিড-১৯ প্যানডেমিক বহাল তবিয়তেই আছে।
সারা বিশ্বে মৃত্যু সংখ্যা আজ ১৪ সেপ্টেম্বর ৯২৮,৬৮৬ জন। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে এ সংখ্যা ১৯৯,১১৫ জন। চীনে প্রথম শুরু হয়েছিল বলে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প করোনা ভাইরাস না বলে চায়না ভাইরাসই বলেন। আমেরিকা তথা সারা বিশ্বে ব্যবসা-বাণিজ্যে চীনের যে আধিপত্য খর্ব করতে জোরেশোরে ট্রেড ওয়ার চলছে ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার কিছুদিন পর থেকেই। নরমে গরমে চেষ্টা করেও নর্থ কোরিয়ার সাথে সমস্যা রয়েই গেছে। চীন, নর্থ কোরিয়া দুটো দেশই দুশ্চিন্তা এর আগ্রহ নিয়ে আমেরিকার ২০২০ ইলেকশণের গতি প্রকৃতি অবলোকন করছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও তার দল রিপালিকান পার্টি ধারনা করছে চীন ইলেকশান রেজাল্ট প্রভাবিত করতে চেষ্টার কসুর করবে না। রাশিয়া ২০১৬ নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পক্ষে হস্তক্ষেপ করেছিল এমন অভিযোগে ইম্পিচমেন্টের চেষ্টাসহ নানা ধরনের কর্মকান্ডহয়েছে ; এখনো চলছে বলে ধারনা করছে বিভিন্ন মহল। ইসরাইলের পক্ষে প্রেসিডেন্টের খোলামেলা সমর্থন ও তৎপরতা মুসলিম দেশগুলো নিশ্চয় পর্যবেক্ষণ করছে যদিও কিছু করার ক্ষমতা তাদের নেই কারণ অনেকগুলোরই আমেরিকার উপর নির্ভরশীলতা অনেক গভীর। নিজেদের মধ্যে কলহ বিবাদ তো অতি প্রাচীন। মধ্যপ্রাচ্যে একে একে নিভে গেল দেওটি – এমনতরো অবস্থা। যুক্তরাষ্ট্র যে ভাবে চালায় সে ভাবেই চলতে হবে। আমেরিকার হয়ে ইসরায়েল তার মিত্র জর্ডান, মিশর, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইন- মধ্যপ্রাচ্যের অর্থনীতি ও রাজনীতির দাবার ঘুটি চালবে। এ দেশগুলোর কাছে ও ২০২০ ইলেক্শন গুরুত্বপূর্ণ।
Posted ৮:৩৩ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২০
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh