ড. আশরাফ উদ্দিন আহমেদ | বৃহস্পতিবার, ০৭ মার্চ ২০২৪
(দ্বিতীয় পর্ব)
১০৯৯ সালের ৭ই জুন তারিখে ক্রুসেডাররা জেরুজালেম নগরীর পাদদেশে পৌঁছে। ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে আসা প্রায় বার শত নাইটস্ এবং বার হাজার পদাতিক যোদ্ধা ও তাদের দলনেতাদের জেরুজালেমের আবহাওয়া সম্বন্ধে তেমন ধারণা ছিলনা। দিনের বেলা প্রচন্ড গরম এবং রাতে ঠান্ডা, পানীয় জলের অভাব, এত বিরাট একটি বাহিনীর লোকজনের খাবার ব্যবস্থা করতে হিমশিম অবস্থায় পড়ে ছয় সপ্তাহ পর্যন্ত তাদেরকে পবিত্র নগরীর বাইরে অবস্থান করতে হয়। জুলাই মাসের ১২ তারিখে কাঠের নির্মিত নিক্ষেপণ যন্ত্রের সাহায্য দেয়ালের বিশেষ কয়েকটি স্থানে অবিরাম পাথর নিক্ষেপের ফলে প্রাচীরে ফাটল ধরানো সম্ভব হয়। রেমন্ড অব টুলেসি (Raymond of Toulouse) এবং গডফ্রে দ্য বু্লয়িন (Godfrey de Bouillon) প্রমুখ খ্যাতনামা নেতৃবৃন্দ বেশকিছু সাহসী যোদ্ধাসহ মই বেয়ে নগরীর ভিতরে প্রবেশ করতে সক্ষম হলে হাতাহাতি সম্মুখ লড়াই শুরু হয়। যীশুখ্রীষ্টের পবিত্র নগরীতে প্রবেশের লালিত স্বপ্ন সফল হয়েছে এ উন্মাদনায় ক্রুসেডারা অসম সাহস ও মনোবল নিয়ে যুদ্ধ করে। কয়েক ঘন্টার মধ্যেই তারা সোলোমন বা সোলেমান গম্বুজের সন্নিকটে মূল ফটক খোলে ফেলতে সক্ষম হয়। দলে দলে খ্রিষ্টান সৈন্য নগরীতে প্রবেশ করে এবং বড রাস্তা, মসজিদ, ইহুদিদের প্রার্থনা স্থান, অলিগলি ও বাসস্থানে ঢুকে শিশু, বৃদ্ধদের আলাদা করে হত্যা করে। পবিত্র নগরীতে রক্তের বন্যা বয়ে যায়। সোলেমান’স বারান্দা বা করিডোর এবং টেম্পলে ক্রুসেডারদের অশ্বগুলো এক হাটু রক্ত সাঁতার কেটে তবেই অগ্রসর হতে পেপেছিল। লুটতরাজ, ধর্ষণ নৃশংস পর্যায়ে পৌঁছেছিল। মহিলা এবং সবল সক্ষম পুরুষদের বন্দী করে ক্রীতদাস হিসেবে বিক্রি করে দেয়া হয়েছিল। নগরীর ইহুদীরা ভেবেছিল ধর্মগৃহ সমূহে (synagogues) আশ্রয় নিলে তাদের রেহাই দেবে। ধর্মান্ধ ক্রুসেডাররা ইহুদিদের সকল প্রার্থনাস্হান ভেঙ্গে গুডিয়ে দেয় এবং আশ্রয়রত সকলকে নৃশংস ভাবে হত্যা করে। ইতিহাস স্বাক্ষ্য দেয়, জেরুজালেমের মুসলিম শাসকরা সকল ধর্মের জনসাধারণের প্রতি যে সহনশীলতা এবং উদার মনোভাব দেখিয়েছে তার বিন্দুমাত্র ও ক্রুসেডাররা দেখায়নি। এ বিষয় প্রসংগে রেমন্ড এগুলিয়ার্স (Raymond of Aguilars) Psalm 118 থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে যুক্ত দেন, This is the day of the Lord has made. Let us rejoice and be glad in it”.
চরম ক্রোধ এবং নৃশংসতার মধ্যে ও কিছু মহৎ ও মানবিক ঘটনা ঘটেছে। প্রথম ক্রুসেডে একটি অতি সাহসী ছোট্ট সাহায্যকারী দল যারা আমালম্ফ হোষ্টেল, আশ্রয়স্থাান ও রন্ধনশালা পরিচালনা করতো তাদে নাইটস্ কাঁতারে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছিল। পুরষ্কার হিসেবে ধন-রত্ন এবং প্রচুর ভূমি দান করা হয়েছিল । ১১৩০ সালের দিকে নাইট্স হিসেবে মিলিটারী অর্ডারে স্থান দেয়া হয়। এভাবেই সৃষ্টি হয় Order of the hospital of St. John, the hospitallers”.
এ সময়েই আরও একটি ঘটনা ঘটে যার নায়ক ছিলেন সেনাধ্যক্ষ রেমন্ড অব টুলেসি। প্রথম ক্রুসেডের সময় জেরুজালেমের মিশরীয় আমির সদলবলে টাওয়ার অব ডেভিড এবং আল-আকসা মসজিদে আশ্রয় নিয়েছিলেন। তাকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিলে তিনি শর্ত সাপেক্ষে সম্মত হন। শর্ত ছিলো, একমাত্র রেমন্ড অব টুলেসি যদি তাকে তার দলবল সহ এসকর্ট করে আস্কালন দূর্গ শহরে পৌঁছে দেন তবেই তিনি আত্মসমর্পন করবেন । রেমন্ড সানন্দে এ অনুরোধে সাড়া দিলে আমীর এবং বহুসংখ্যক মিশরীয় যোদ্ধা প্রাণে বেঁচে যায়। এ রকম বহু ঘটনা ক্রসেড চলাকালীন দু’শত বছরে ঘটেছে যাতে অতিরঞ্জন থাকলে ও বীরোচিত আচার-আচরণ, মনুষত্ব বোধ, উদারতা, প্রতিদান , সর্বোপরি মানবিকতার উৎকৃষ্ট উদাহরণ এসবের পরিচয় বহন করে ।
Posted ১১:২৬ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৭ মার্চ ২০২৪
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh