ড. আশরাফ উদ্দিন আহমেদ | বৃহস্পতিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৩
গত ১৫ নভেম্বর কিউনিপ্যাক বিশ্ববিদ্যালয় (Quinnipiac University) একটি জরিপের ফলাফল প্রকাশ করেছে। এতে দেখা যায় ৫২ শতাংশ তালিকাভুক্ত ভোটার বিকল্প প্রেসিডেন্ট প্রার্থী চায় বলে মতামত দিয়েছে। প্রাক্তণ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং বর্তমান প্রেসিডেন্ট বাইডেন- দুজনের ক্ষেত্রেই এমন মতামত হরহামেশাই পত্র-পত্রিকা ও বিভিন্ন যোগাযোগ মাধ্যমে পাওয়া যায়। তবে,জো বাইডেনের জনপ্রিয়তা, এমনকি তাঁর দলের লোকদের কাছে ও কমতির পথে। আশা করা যায় অর্থনৈতিক স্থবিরতা, বিশেষত নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য কমে যাওয়ার যে আবহ সৃষ্টির লক্ষণ ক্ষীণভাবে হলেও পরিলক্ষিত হচ্ছে, তা উপযুক্ত গতি পেলে এবং সাথে সাথে মুদ্রাস্ফীতি নিম্নগামী হতে থাকার প্রবণতা অব্যাহত থাকলে পরিস্থিতি অনেকটাই আয়ত্ত্বে এসে যাবে।
আন্তর্জাতিক বড় বড় বিরোধগুলো কূটনীতির সফল প্রয়াসে এবং মিত্রদেশগুলোর আন্তরিক সমর্থন ও প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় কমে আসবে তবে এজন্য আবশ্যিক ভাবে কংগ্রেসের সমর্থন লাগবে। চীনের সাথে নতুন করে যে কূটনীতি তাতে সফল হলে যুক্তরাষ্ট্রের মর্যাদা ও মিত্রদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা অনেকগুণ বেড়ে যাবে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের পুতিন তথা রাশিয়া প্রীতি এ ক্ষেত্রে রিপাবলিকান দলের জন্য বড়ো ধরণের সমস্যা হয়ে দাঁড়াতে পারে।
আরব বিশ্বে ইসরাইয়েল -ফিলিস্তিন যুদ্ধ, ইরান, ইয়ামেনের হোতি এবং সাউথ লেবানন থেকে ইরানের মদদপুষ্ট হেজবুল্লাহ এসবই প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের জন্য চ্যালেঞ্জ। প্রাক্তণ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প হেজবুল্লাহর প্রশংসা করেও এ ধরণের বিপদে পড়েছিলেন, যা বর্তমান প্রেসিডেন্ট ও তার দলে রাজনৈতিক সুফল লাভে কুশলের সাথে ব্যবহার করতে পারা উচিত ।
রিপাবলিকান দলের অনুসারীদের কাছে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ট্রাম্পের গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নাতীত। এ সময়ে নির্বাচন হলে তিনি রিপাবলিকান ভোটারদের ৬০ শতাংশ ভোটে পাবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। নারীদের ভোট পুরুষদের চেয়ে তুলনামূলকভাবে কম পাবেন। তবে বিকল্প পন্থা তিনি বেশ সফলতার সাথে অনুসরণ করে যাচ্ছেন। ইভানজেলিকানদের ভোটে স্বপক্ষে আনতে কুশলতার সাথে রাজনীতির খেলা খেলছেন। অনেকে মনে করেন ফিলিস্তিন-ইসরায়েল যুদ্ধের কারণে আমেরিকান-আরব এবং আমেরিকান-মুসলিমদের ভোট বর্তমান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হলে তেমন হারে পাবেন না। তবে, প্রাক্তণ প্রেসিডেন্ট জেরুজালেমে রাজধানী স্থানান্তরে এককভাবে যে বলিস্ট ভূমিকা রেখেছেন এ ঘটনায় সৃষ্ট ক্ষতসর্বস্তরের মুসলমানরাগভীর মর্ম বেদনার সাথে মনে রাখবে।
ট্রাম্পকে ভোট দেয়ার ব্যপারে তারা শতবার ভাববে । তাছাড়া, ট্র্যাম্প প্রেসিডেন্সির শুরুতেই ছয়টি মুসলিম দেশকে জঙ্গিবাদ লালন পালনের আখড়া এবং বর্বরদের আস্তানা আখ্যা দেয়া এবং কিছুদিন পূর্বে এসব দেশসহ অন্যান্য অনেক মুসলিম দেশের লোকজনদের জন্য যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারী করা বলে হবেএমন অভিপ্রায় ব্যক্ত করার কারণে মুসলিম ভোটাররা ভোটের সিদ্ধান্ত গ্রহণে সমূহ প্রভাব ফেলার সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে। প্রেসিডেন্ট বাইডেন এখন থেকেই এ দেশে বসবাসরত মুসলিম নেতাদের সাথে আলাপ-আলোচনা করছেন যাতে তাদের পূর্বের মত স্বপক্ষে আনা সম্ভব হয় ।
ইদানিং বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে ট্র্যাম্পের হাতে গণতন্ত্র মোটেও নিরাপদ নয় এবং তিনি আধিপত্যবাদ মানসিকতা সম্পন্ন নেতা ও মানুষএমনতরো কথাগুলো জোরেশোরে প্রচার করা হচ্ছে। ক্ষমতার প্রতি তাঁর প্রচণ্ড মোহ যা তাঁকে একজন কঠোর নিয়ন্ত্রক বা কর্তৃত্বধর্মী নেতা হিসেবে পরিগণিত করবে- এমন দুশ্চিন্তা ও অনেকের মনে উদিত হচ্ছে। গণতন্ত্র , বিচার বিভাগের স্বাধীনতা এগুলো আমেরিকায় বড়ো আদরণীয় মূল্যবোধ এবং বিশ্বাস যার অবদমনে দেশটি অসম্ভব রকম দুর্বল একটি জনপদে পরিণত হবে এ সংশয় অনেকের মনে।
প্রাক্তণ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ২০২৪ সালে প্রেসিডেন্ট হলে সাংবাদিকদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ্সহ নানা ধরণের সমস্যার কথা আটলান্টিক ম্যাগাজিন তুলে ধরেছে। এর মধ্যে সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ সহ ইতিহাস বিকৃতি, পরাশক্তি হিসেবে চীনের অপ্রতিরোধ্য অগ্রগতি ও আবির্ভাব, সমস্ত অপরাধ থেকে ট্র্যাম্পের অব্যাহতি, ব্যবসা-বাণিজ্য, বিচার বিভাগ সব জায়গায় ম্যাগা অনুসারীদের পদ দখল এবং অপ্রতিরোধ্য আধিপত্য-এই হবে আমেরিকার সমাজ ও রাজনীতির চিত্র।
Posted ১:২০ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৩
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh