ড. আশরাফ উদ্দিন আহমেদ | বৃহস্পতিবার, ২৭ জুলাই ২০২৩
বিপদ ধেয়ে আসছে। আমরা আজও ছিয়াত্তরের মন্বন্তরের কথা বিভিন্ন সময়ে ভীতির সাথে স্মরণ করি। মনুষ্য সৃষ্ট দুর্ভিক্ষের ক্লাসিক উদাহরণ হিসেবে। এই আধুনিক প্রযুক্তি উৎকর্ষ যুগে মুক্ত অর্থনীতি ও বাজার ব্যবস্থা নিয়ে আমরা গর্ব অনুভব করি। পারস্পরিক নির্ভরশীল বিশ্বের সুম সুম অবস্থা খুব দ্রুতই ভিন্ন খাতে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলশ্রুতিতে,দুর্ভিক্ষের পদচারনা শোনা যাচ্ছে। বিশ্বব্যাপী দুর্ভিক্ষের যে অশনি সংকেত তা আমার মত অনেকের মনে শঙ্কার জন্ম দিচ্ছে ; দুর্ভাবনা কিছুতেই পিছু হটছে না।
বিগত কয়েক বছর যাবত পৃথিবী অন্তত ২৫-৩০টি দেশে প্রচণ্ড খরা , দাবদাহ অব্যাহত ভাবে চলছে। অনাবৃষ্টি কবলে আফ্রিকার অনেক দেশ। জলবায়ু পরিবর্তনেড় সমস্যা মোকাবেলা করতে সরকারের আপ্রাণ প্রচেষ্টা সত্ত্বে ও তিউনিসিয়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে গত চার বছর যাবত খরার কবলে। এ সময়ে তাপমাত্রা অনেক সময় ৫০ ডিগ্রী সেলসিয়াস বা ১২২ ডিগ্রী ফারেনহাইট এ উঠানামা করে। সেচের পানি তো দূরের কথা, খাবার পানি খুবই দুষ্প্রাপ্য। দেশটির ভবিষ্যৎ অন্ধকারাচ্ছন্ন । কুপের পানি ব্যবহারে কড়া রেশনিং। সব্জি চাষে সেচের জন্য এ উৎস থেকে পানি আগের মত ব্যবহারের প্রশ্নই ওঠে না। প্রচণ্ড তাপের কারণে পানি তলানিতে চলে গেছে ।
এক সময় রোমান সাম্রাজ্যের শস্যাগার আজ ফসল শূন্য। গম এর বার্লি উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত এ অঞ্চলটি আজ দুর্ভিক্ষের করাল গ্রাসে । পুরো নর্থ আফিকায় এ চিত্র । সারা দক্ষিণ ইউরোপে ও আবহাওয়ার অবস্থা প্রায় একই। বৃষ্টিপাতের স্বল্পতাজনিত সমস্যা সর্বত্র । খরা,জলবায়ু পরিবর্তন এবং ইউক্রেনে যুদ্ধ আফ্রিকার অন্তত ১৫ টি দেশকে দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে নিপতিত করেছে।
সারা বিশ্বেই জলবায়ু পরিবর্তনে চরম অবনতি কারণে গরম, উষ্ণ এবং শুষ্ক আবহাওয়া, বন্যা, সমুদ্রের উন্মাদনা, বিশেষত এল নিনো’র প্রভাবে ঝড়, সাইক্লোন, টর্নেডো, এমনকি ঘন ঘন দাবদাহ বা আগুন লাগার ঘটনা ইত্যাদির প্রকোপ বেড়ে গেছে । উত্তর-পূর্ব আমেরিকা, ভারত, জাপান এসব দেশগুলো সংলগ্ন সমুদ্রের উষ্ণতা তীব্র আকার ধারণ করেছে । সমুদ্রের এ উষ্ণতা বৃদ্ধি পৃথিবী ব্যাপ্ত । সাগর,মহাসাগরের প্রায় ৪০% এর প্রসার ঘটেছে ইতোমধ্যেই । সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা ও বেড়ে যাচ্ছে অব্যাহত গতিতে। আবার,অত্যধিক বৃষ্টিপাত ভারতের পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ, উত্তারাখণ্ড এবং দিল্লী বন্যায় প্লাবিত। এসব অঞ্চলে ফসলাদি দুবে গেছে ; জনজীবন বিপর্যস্ত । হিমালয় পর্বতমালার পাদদেশে অবস্থিত হিমাচল প্রদেশ ও উত্তারাখণ্ডের অবস্থা যে স্থানীয় প্রশাসন অতি জরুরী প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে যেতে মানা করেছে । সউথ-ওয়েস্ট জাপানে অত্যধিক বৃষ্টিপাতের কারণে নদীর পাড় ভাঙ্গনে বিস্তীর্ণ জায়গা জলমগ্ন হয়েছে ; ল্যান্ড স্লাইডের কারণে গৃহপালিত জীবজন্তু ও মানুষ পারতপক্ষে ঘরের বাইরে বের হয় না । বেশ কয়টি জনপদে মানুষ জনের স্থানান্থরের জন্য সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে । ট্রেন এবং বিমান চলাচল অনেক স্থানেই বন্ধ ।
উন্নত প্রযুক্তি ও নিত্য নতুন উদ্ভাবনের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে আবহাওয়ার জটিলতা সত্ত্বে ও উৎপাদন বেড়েছে। তবে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির চলমান অবস্থা বিরাজমান থাকলে জনসংখ্যার সাথে উৎপাদনের স্থিতাবস্থা বজায় নাও থাকতে পারে। এমনধারনাই পাওয়া যায় কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সাম্প্রতিক গবেষণা থেকে ।
মডার্ন ফার্মারস শিরোনামে Grist জার্নালে জুলাই ২৩, ২০২৩ সংখ্যায় Patrick Cooley বলেন, বিগত ষাট বছরের বিরূপ আবহাওয়ার কারণে গ্লোবাল সাউথে শস্যমাঠ বিরান হয়ে যাওয়ার পথে । জলবায়ু পরিবর্তন বিপুল হারে শস্য উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্থ করছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে জনসাধারণের আভ্যন্তরীণ বহিযাত্রা অনেকগুণ বেড়ে যাবে; অপুষ্টি শিশু ও নারীদের আক্রমণ করবে । অন্য কথায়, দুর্ভিক্ষ অবস্থায় নিপতিত হতে পারে খোদ আমেরিকার কিছু কিছু জনপদ ।
Posted ১২:০৩ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৭ জুলাই ২০২৩
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh