ড. আশরাফ উদ্দিন আহমেদ | শুক্রবার, ১৯ জানুয়ারি ২০২৪
রিপাবলিকান দলের প্রার্থী এ সময়ে তিন জনে আসে ঠেকেছে। প্রতিযোগীদের মধ্যে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অনেক পয়েন্টে এগিয়ে আছেন। ফ্লোরিডার গভর্নর ডিসেন্টিস, সাউথ ক্যারোলিনার সাবেক গভর্নর ও ট্র্যাম্পের সময় জাতিসঙ্গে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত নিক্কি হ্যালি ট্র্যাম্পের চেয়ে ৩০ শতাংশ পয়েন্টের ও বেশী ব্যবধানে পিছিয়ে আছেন।
পরস্পরের মধ্যে এ দুজনের ব্যবধান ১.৫% মতো । নিকি পিছিয়ে আছেন। তবে নিউ হ্যাম্পশায়ারে তার অগ্রগতি ট্রাম্পকে ও ভাবনায় ফেলে দিয়েছে। এদিকে ডিসেন্টিস ও জোরেশোরে ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যে তার অর্জনের ফিরিস্তি দিচ্ছেন অনবরত। তিনি বলছেন যে রিপাবলিকান দলের জন্য ব্লু-প্রিন্ট হিসেবে ফ্লোরিডায় তিনি যেভাবে নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তাবয়ন করেছেন তা উদাহরণ হিসেবে গ্রহণ করা উচিত। তিনি আশা করেছিলেন আইওয়া ককাসে তিনি অনেক পয়েন্ট কুড়োতে সক্ষম হবেন।
খারাপ করেছেন এমন বলা যাবে না, যদিও এ অঙ্গরাজ্যের প্রতিটি কাউন্টিতে তিনি নিজে উপস্থিত হয়ে প্রচারণা চালিয়েছেন। প্রচুর অর্থ ব্যয় করেছেন। ২১.২৫% ভোটে এবং ৮ জন ডেলিগেট অর্জন করে তিনি দ্বিতীয় অবস্থানে আছেন। নিকি হ্যালি আছেন তৃতীয় অবস্থানে ১৯.১৩% ভোটে এবং ৭ জন ডেলিগেট পেয়ে । রিপাবলিকান পার্টির মূল প্রতিদন্ধি প্রাক্তন প্রেসিডেন্টকে ষ্টেটটির জন্য বরাদ্ধকৃত ৪০ জন ডেলিগেটের ২০ জনকেই কোন বিতর্কে উপস্থিত না থেকেও আরামসে পেয়ে গেছেন। তার পক্ষে ভোটে পড়েছে ৫১.০৫%। প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী বিবেক রামাস্বামী ৭.৬৭% ভোট পেয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেয়ায় এবং ট্র্যাম্পের স্বপক্ষে সমর্থন ব্যক্ত করায় তাঁর ৩জন ডেলিগেট ট্র্যাম্প পেয়ে যাবেন।
অনেকে মনে করেন ফ্লোরিডার গভর্নর এবং সাউথ ক্যারোলিনার প্রাক্তণ গভর্নর দুজনের মধ্যে কে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করতে পারবেন সেজন্য প্রাণপণে লড়তে থাকবেন। তবে এক পর্যায়ে তাদের সরে যেতে হবে। সেক্ষেত্রে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদের জন্য ট্র্যাম্পের সুনজরে আসতে পারার সম্ভাবনা নিকি হ্যালির বেশী । ট্র্যাম্প বিভিন্ন সময়ে ঘোষণা করেছেন যে তিনি ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে একজন মহিলা নিতে আগ্রহী।
নিকি হ্যালিকে বিরূপ বিশেষণে আখ্যায়িত করলে ও প্রাক্তণ গভর্নর এবং জাতিসঙ্গে ঝানু কূটনীতিক হিসেবে প্রায়ই প্রশংসা করেন। বাকপটু চটপটে মহিলা রাজনীতিবিদের চেয়ে প্রশাসন এবং পররাষ্ট্র নীতিতে অভিজ্ঞ পরীক্ষিত অনুগত প্রার্থী (তিনি প্রেসিডেন্ট হলে) ভাইস প্রেসিডেন্ট পদটির জন্য বেছে নেবেন এমনটি ধারনা করা খুবই সঙ্গত বলেই মনে হয়। তাছাড়া, রিপাবলিকান প্রাইমারির দ্বিতীয় যুদ্ধক্ষেত্র নিউ হ্যাম্পশায়ারে নিকি হ্যালি ফ্লোরিডার গভর্নর ডিসেন্টিসকে পেছনে ফেলে দিতে সমর্থ হবেন এমন ধারনা নিকি এবং অনেকের। প্রশ্ন হলো ২০২৪ নির্বাচনে প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ট্র্যাম্প জয়লাভ করতে পারবেন তো ?
সাবেক প্রেসিডেন্টকে তার ইম্পিচমেন্ট এবং বিভিন্ন আইনী সমস্যার জন্য দারুণ ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হবে, এমনকি তার জেল-জরিমানা হলে ও হতে পারে। তবে ‘ম্যাগা’ বা ‘মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন’ সমর্থকরা দ্বিধাহীনভাবে তার পেছনে থাকবে। রক্ষণশীল ও চরম ধর্ম ভিত্তিক উগ্র জাতীয়বাদী গোষ্ঠীগুলো ও তাকে সমর্থন দেবে প্রায় নিরঙ্কুশ ভাবে। নির্বাচনের বর্তমান পর্যায়ে ধর্মকে রাজনৈতিক উদ্দ্যেশে ব্যবহার করার সনাতন কৌশল ট্র্যাম্প ও তার অনুসারীরা সফলতার সাথে করে যাচ্ছে। তবে তা সমাজের জন্য যে ক্ষতিকর ও নিন্দনীয় এবং গণতন্ত্রের জন্য একটি চরম গর্হিত পন্থা তা বুঝতে জনসাধারণের খুব বেশী সময় লাগবেনা। দুই শত বছরেরও বেশী স্থায়িত্বের ক্রুসেড তদানীন্তন সমাজ ও সভ্যতার উপর কি মাত্রায় বিরূপ প্রভাব ফেলেছিল তা মানুষ ভুলেনি।
ট্র্যাম্প কি একই পথে অগ্রসর হচ্ছেন এ সংশয় থেকেই যাচ্ছে। বুশ-আল গোর আইনি লড়াইয়ে আইনের শাসনকে যেভাবে বুড়ো আঙ্গুল দেখানো হয়েছিল তা নগণ্যভাবে সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্র্যাম্পের আইনের শাসনকে অবদমিত করার প্রচেষ্টাই পরিলক্ষিত হচ্ছে। এসব স্পষ্ট ভাবে নির্দেশ করে যে গণতন্ত্রের দেশে গণতন্ত্র পদদলিত হচ্ছে। আইনের শাসনের পরাজয় মানে, ১৬৮৯ সালে রাজনৈতিক দার্শনিক জন লক যেমন বলেছিলেন, সমাজ, রাজনীতি ও রাষ্ট্র ব্যবস্থায় স্বৈরতন্ত্র ও স্বেচ্ছাচার বেষ্টিত অপশাসন ডেকে আনা ।
Posted ১১:১২ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ১৯ জানুয়ারি ২০২৪
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh