আশরাফ উদ্দিন আহমেদ | বৃহস্পতিবার, ০৮ জুন ২০২৩
সংক্ষিপ্ত আকারে হলেও ১৯৭৩ সাল থেক প্রতি বছর ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে কিছু না কিছু লিখি। এবারের নিবন্ধটি একটু ভিন্নধর্মী এজন্য যে, জাতিংসঘের উদ্যোগে পালন হয়ে যাওয়া বিশ্ব পরিবেশ দিবসের সংক্ষিপ্ত বিবর্তন তুলে ধরার প্রয়াসে বাংলাদেশের উপর বিশেষ আলোকসম্পাত করার কারণে । গবেষণাপ্রসূত তেমন নয় তবে অল্পবিস্তর ইতিহাসাশ্রয়ী ।১৯৭২ সালে অনুষ্ঠিত “ স্টকহোম কনফারেন্স অন হিউম্যান এনভায়রনমেন্ট ” (৫-১৬ জুন ১৯৭২) এ গৃহীত সিদ্ধান্ত মোতাবেক ১ম বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালিত হয় ৫ জুন ১৯৭৩ তারিখে । শ্লোগান ছিলো “একটিমাত্র পৃথিবী”(Only One Earth)। তারপর থেকে গত ৫০ বছর যাবত দিবসটি পালিত হয় আসছে বিরতিহীনভাবে। প্রতিবছরই শ্লোগান বদল হয়েছে পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন সমস্যার ভয়াবহ দিকগুলোকে এক এক করে সনাক্ত করে তার আলোকে। মূল যে সমস্যা ইংল্যান্ডে শিল্প বিপ্লব এবং তা সারা ইউরোপে অষ্টাদশ শতাব্দীর মধ্যে ছড়িয়ে পড়ার কারণে বৈশ্বিক তাপমাত্রার মাত্রারিক্ত বৃদ্ধি তা উত্তরোত্তর বেড়েই চলেছে ।
কার্বনের পরিমাণ পৃথিবীর বায়ুমন্ডল, সমুদ্র পৃষ্ঠা, পাহাড়-পর্বত, প্রকৃতি সবকিছুতে অসহনীয় পর্যায়ে দ্রুতগতিতে বেডে চলেছে। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত নানা ধরণের প্রাকৃতিক দূর্যোগ মানবজাতি সহ সকল প্রকার সৃষ্টির ধ্বংস ডেকে নিয়ে আসছে। এসব মোকাবেলার সফল উদ্যোগ এখানে সেখানে যে হচ্ছেনা তা নয়। জাতিসংঘের আহ্বানে বিশ্বপরিবেশ দিবস পালন করে বিভিন্ন দেশ, সরকারী বেসরকারী প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিবর্গ বৃক্ষরোপনের মত মহতী, উপকারী কাজ করছে । উদাহরণ হিসেবে শ্রীলঙ্কার উল্লেখ করা যায়। দেশটি প্রতিবছর বিশ্ব পরিবেশ দিবসে ৫০ মিলিয়ন বৃক্ষ রোপন করে চলেছে।
বাংলাদেশে পরিবেশ দুষণ পরিস্হিতি অত্যন্ত নাজুক। এ বাস্তব অবস্থাার উপলব্ধি থেকেই, অনুমান করা যায়, কেন একক দেশ হিসেবে বাংলাদেশে জাতিসংঘ সর্বাধিক বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। বিগত ৫০ বছর পালিত হয়ে যাওয় এ দিবসে ৫০ টির মধ্যে ১০টিরই প্রধান ভ্যেনু ছিল বাংলাদেশের বিভিন্ন শহরে। ১৯৭৫ সালে ঢাকাতে ‘হিউম্যান সেটেলমেন্ট’ বিষয়কে উপজীব্য করে শুরু হয়েছিল। তারপর একনাগাডে ১৯৭৭ থেকে ১৯৮৪ অব্দি প্রতিবছরই ৫ই জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবসের মূল কেন্দ্র ছিল বাংলাদেশে । ১৯৮২ সালে ঘটা করে ঢাকা নগরীতে Ten Years After Stockholm (Renewal of Environmental Concerns) বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালন করা হয় । ১৯৮৪ সালে রাজশাহীতে “Desertification” এবং ২০১০ সালে রংপুরে Many Species. One Planet. One Future শ্লোগান নেয়ে বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালন করা হয় । মজার ব্যাপার, একমাত্র সিলেট শহর বিশ্ব পরিবেশ দিবসের মুল ভেন্যু ছিল মোট ৬ বার। সন ও থিম উল্লেখ করে সিলেটে অনুষ্ঠিত সম্মেলনগুলোর উল্লেখ করা হলো :
1977: Environmental Concern; Lands Loss and Soil Degradation.
1978: Development Without Destruction.
1979: Only One Future for Our Children- Development Without Destruction.
1980: A New Challenge for the New Decade: Development Without Destruction.
1981: Ground Water; Toxic Chemicals in Human Food Chains.
1983: Managing and Disposing Hazardous Waste: Acid Rain and Energy.
বাংলাদেশে দশবার অনুষ্ঠিত হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ বিশ্ব পরিবেশ দিবস উদযাপনের মূল সম্মেলন। এর মধ্যে সিলেট শহরে ছয় ছয়বার অনুষ্ঠিত হওয়ার পেছনে যে ব্যক্তিত্ব অবদান রেখেছেন তিনি ছিলেন নিশ্চিত ভাবে দেশটির প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত (প্রয়াত)। হাওড-বাওড়, পাহাড় , অপরূপ নৈসর্গিক সৌন্দর্য মন্ডিত ও প্রাকৃতিক বৈচিত্রের সিলেট জেলা সামগ্রিক ভাবে এরকম সিদ্ধান্ত নিতে সহায়ক ছিল একথাও নির্দ্ধিধায় বলা যায়। সিলেটে অবস্হিত হযরত শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় এবং খাদিমনগর স্হ পল্লী উন্নয়ন প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান ভেন্যু হিসেব উন্নত মানের তাও অনেক কারণের মধ্যে অন্যতম ছিলো বলে ধারণা করি। তাছাড়া, চরমভাবে পরিবেশ সংকটে নিপতিত দেশসমূহের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্হান চতুর্থ -এ বাস্তব ও এক্ষেত্রে কাজ করেছে বলাই বাহুল্য।
এ বছর বিশ্ব পরিবেশ দিবস উদযাপন করা হয় প্লাষ্টিক বর্জ নিক্ষেপে পরিবেশ দূষণ বিষয়টিকে উপজীব্য করে পালন করা হয়েছে। বাংলাদেশে এ সমস্যাটি প্রকটভাবে পরিবেশ দূষণে কাজ করছে। ঢাকা, চট্টগ্রাম শহরে তুরাগ, শীতলক্ষ্যা, বুড়িগঙ্গা, কর্ণফুলী ইত্যাদি বড়ো নদীগুলো প্লাস্টিক ও প্লাস্টিক নির্মিত দ্রব্যাদি ফেলার কারণে নাব্যতা হারানোর সাথে সাথে বন্যা, জলাবদ্ধতা ইত্যাদি নানাবিধ সমস্যার সৃষ্টি করেই চলেছে। আইন থাকলে ও বাস্তবে প্রয়োগ নেই। এমন অবস্হা চলতে থাকলে পরিবেশ দূষণ সমস্যা অবযাহত গতিতে চলবে । উল্লেখ করা যায়, বৈশ্বিক মোট প্লাস্টিক দূষণের ২.৪৭ শতাংশ বাংলাদেশে হয় তথ্যে উদ্বিগ্ন না হয়ে পারা যায় না ।
বাংলাদেশে পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে প্রশংশনীয় কাজ হচ্ছে স্বীকার করতেই হয়। তবে, যারা এ সমস্যাগুলো নিয়ে কাজ করছেন তাদের উপযুক্ত স্বীকৃতি দেয়া তো হচ্ছেই না বরং পরিবেশ সংরক্ষন বিরোধী কাজকর্মে বাঁধা দেয়া হচ্ছেনা। বৃক্ষ নিধন, নদী, খালবিল ভরাট ও দখল এসব কাজ কর্তৃপক্ষের নাকের ডগায় চলছে। সম্প্রতি একটি ঘটনার উল্লেখ করে ফেসবুকে একটি পোষ্ট দিয়েছেন আনোয়ার হোসেইন মঞ্জু: “জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলনে কামরুলকে স্মরণ” শীর্ষক পোষ্টটিতে আফসোসের সুরে বলেছেন যে বাংলাদেশের কৃতিমান পরিবেশবাদীকে দেশে স্বীকৃতি দেয়া হয়নি তবে বন এ অনুষ্ঠিত পরিবেশ সম্মেলনে তাঁর সম্মানে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।” সেলুকাস, কি বিচিত্র এ দেশ !
Posted ১:৫১ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৮ জুন ২০২৩
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh