ড. আশরাফ উদ্দিন আহমেদ | শুক্রবার, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনালড ট্রাম্প চারবার ক্রিমিনাল অপরাধের জন্য অভিযুক্ত বা রহফরপঃবফ হয়ে বিচারের অপেক্ষায় আছেন। এগুলো এবং অপরাপর বিভিন্ন সিভিল অপরাধের অভিযোগ একানব্বইটি। একটি মামলায় মোটা অঙ্কের জরিমানা দিতে হবে এমন রায় হয়েছে। সবকয়টিতে তিনি নিজেকে নিরপরাধী বলে দাবী করেছেন। মিথ্যেচার এবং অপবাদের অপখেলা তিনি খেলেই যাচ্ছেন চতুরতার সাথে। উদ্দেশ্য, নির্বাচন পর্যন্ত যে করেই হোক এহেন খেলা খেলে যাওয়া। ২০২০ সালের নির্বাচনে হেরে গেলে ফলাফল এবং জো বাইডেন জয়ী হয়েছেন তা ঘোষণার যে আইনসম্মত প্রক্রিয়া তা প্রতিহত করতে কুখ্যাত জানুয়ারি ৬, ২০২১ সংগঠিত হয় তার প্রত্যক্ষ মদদ ও প্ররোচনায় এমন তথ্য প্রচার মাধ্যম এবং সংবাদ পত্র ঘাঁটলেই পাওয়া যায়। অভিযুক্ত হয়ে অনেক অংশগ্রহণকারী শান্তি ভঙ্গ করছে। এখনো অনেক মামলা চলমান।
নির্বাচনের ফলাফল তার স্বপক্ষে আনার সকল ধরনের অপপ্রচেষ্টা ব্যর্থ হলে ট্রাম্প অপবাদ ও নিন্দাবাদ ছড়ানোর খেলায় নামেন। প্রেস এবং সংবাদমাধ্যমগুলো সত্য উদ্ঘাতনে তৎপর হলে অনবত বলতে থাকেন সহজাত প্রবৃত্তির তাড়নায় বলতে থাকেন এগুলো ফেইক বা নকল সংবাদ মাধ্যম। সংবাদকর্মীরা কোন অনুসন্ধানে তাকে দোষী বলে লিখলে ট্রাম্প ডাইনি খোঁজা বা witch hunting বলে গালিগালাজ করেন। আদালতে অভিযুক্ত হলে বলেন গ্র্যান্ড জুরী পক্ষপাত দোষে দুষ্ট। কেসে হারলে রায় ঘোষণার সাথে সাথে বলেন প্রচলিত বিচার ব্যবস্থা বা সিস্টেম ভেজালযুক্ত (corrupt)। অহরহই বলতে থাকেন যে তাকে রাজনৈতিক কারণে হেনস্থা করা হচ্ছে, তিনি নির্দোষ ,অকারণে তিনি প্রতিপক্ষের ষড়যন্ত্রের শিকার। সর্বক্ষেত্রেই তিনি নির্দোষ, ধোঁয়া তুলসীপাতা। দৃপ্তকণ্ঠে ঘোষণা দিয়েছেন যে দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসলে তিনি একদিনের জন্য হলেও ডিক্টেটর হবেন।
আইনের শাসন এবং গণতন্ত্র এ দুটো কারণে যুক্তরাষ্ট্র সারা বিশ্বে সমধিক সম্মানিত। ট্রাম্প এ দুটি প্রাতিষ্ঠানিক স্তম্ভকে পর্যুদস্ত করে চলেছেন। দেশটির জন্মলগ্ন থেকে সংবিধান প্রণেতারা যে সমস্ত আদর্শ ও মূল্যবোধ সুচিন্তিত ভাবে একমত হয়ে দলিলটিতে সন্নিবেশিত করেছিলে সেগুলোর প্রতি সম্মান প্রদর্শন না করে নিজের স্বার্থে অর্থাৎ ক্ষমতা দখল করে হোয়াইট হাউজে রাষ্ট্রপতির আসনে উপবিষ্ট হওয়া তাঁর একমাত্র বাসনা। তাকে দোষ দেয়া যায় না কারণ এ পদটি বিশ্বে সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ এবং ক্ষমতাময়। তবে, যে সমস্ত কৌশল তিনি ব্যবহার করেছেন এবং করছেন তার বেশীর ভাগই নানা কারণে প্রশ্নবিদ্ধ।
২০০৩ সালে, অর্থাৎ নির্বাচনের এক বছর পূর্বেই ট্রাম্প লিগ্যাল ফি বাবদ প্রায় ৫০ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছেন। ২০২৪ সালে নির্বাচনের বছর। প্রাক্তণ প্রেসিডেন্ট আইনই লড়াইয়ে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছেন। উকিলদের ফি দিতে হয়। তবে এ চতুর মানুষটি নিজের পকেট থেকে তাঁর নিজের এবং সঙ্গে যারা জড়িত তাদের ফি এবং আনুষঙ্গিক খরচ নির্বাহ করেছেন ইদানীং সময়ে এমন ঘটনা ঘটেনি এমনটিই জানা যায়। রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়ন পেতে, মামলা চালানোড় সমুদয় খরচের যোগান আসে মূলত সেভ আমেরিকা পলিটিকাল অ্যাকশান কমিটি (Save America PAC) এবং মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন (Make America Great Again PAC) এ দুটো ফান্ড থেকে। ২০২০ সালের নির্বাচন এবং এর পরবর্তী সময়ে প্রাক্তণ প্রেসিডেন্ট ২০০ মিলিয়ন ডলারের ও বেশী চাঁদা তুলেছেন যা ৪টি ক্রিমিনাল কেস এবং সিভিল সব মিলিয়ে ৯১টির মোট মামলার পিছনে খরচ হয়ে যায় ত্বরায়। ফান্ড শূন্যের কোঠায় পোঁছে গেলে নিত্য নতুন কৌশলে চাঁদা ও ডোনেশন আদায় করছেন। মামলার ব্যয়ভার (লেখক ক্যারলের মামলার রায় হয়েছে যাতে ট্রাম্পকে জরিমানা করা হয়েছে ৮৩ মিলিয়ন ডলারের ও বেশী), নির্বাচনের জন্য প্রচার, টিভি, রেডিও, অ্যাড, ইন্টারনেটে প্রচারণা, ইত্যাদি দারুণ খরচ সাপেক্ষ। তবে, প্রাক্তণ প্রেসিডেন্ট তার সমর্থকদের কাছ থেকে গতানুগতিক এবং নতুন নতুন কায়দায় ফান্ড রেইজিং করেই চলেছেন। এ ক্ষেত্রে তার পারঙ্গমতার সমকক্ষ কেউ নেই সন্দেহাতীত ভাবে বলা যায়। (চলবে)
Posted ৫:০৭ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh