ড. আশরাফ উদ্দিন আহমেদ | বৃহস্পতিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৩
(দ্বিতীয় অংশ) : ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স এ দুটো দেশ জেমস ওয়াটস আবিষ্কৃত বাষ্পের ব্যবহার শুরু করার দেশগুলোর মধ্যে প্রথম কাতারে ছিল। জ্বালানি হিসেবে বাষ্পের ব্যবহার এবং ইংল্যান্ডে শিল্প বিপ্লব নতুন যুগ ও সভ্যতার উন্মেষ ঘটায়। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে,, বিশেষত ফ্রান্স, ইতালি, জার্মানী এসব দেশে কল-কারখানায় বাষ্পের ব্যবহার শুরু হয় অচিরেই। তবে, নৌযানের বেলায় বাষ্পের ব্যবহার বেশ ধীর গতিতে অগ্রসর হয়। উনিশ’শতাব্দীর প্রারম্ভে নদীপথে সীমিত দূরত্বে ও আকারে শুরু হলেও ১৮৬০’র দিকে ট্র্যান্স-আটলান্টিক পথে ইউরোপ থেকে আমেরিকা ও কানাডা বিভিন্ন গন্তব্যে চলাচল শুরু করে। অভিগমণকারীদের সংখ্যা হু হু করে বেঁড়ে যায়। অবস্থা এমন দাঁড়ায় যেন ইউরোপের বেশিরভাগ লোক নতুন দেশে পাড়ি জমাবে। ব্রিটিশ কলোনি স্থাপনের বাসনা ফ্রান্স, হল্যান্ড, পর্তুগাল, স্পেন এসব দেশের সাথে প্রতিযোগিতার সম্ভাবনার কথা মনে রেখে ইংরেজরা অভিগমণকে উৎসাহিত করে। দূরপথের সমুদ্রযাত্রাকে কিছুটা হলেও আইনকানুনের মাধ্যমে সুসংহত করার প্রচেষ্টা ১৮৫০ থেকেই লক্ষ্য করা যায়। তবে, ভাড়ার ব্যাপারে কোন নির্ধারিত রেট চালু করতে ব্রিটিশ সরকার ব্যর্থ হয় বা তেমন প্রচেষ্টা তেমন করে তখনো নেয়নি। জাহাজের মালিক পক্ষ যার কাছ থেকে যেমন আদায় করতে পারত তেমন ভাড়াই আদায় করত।
সাধারণত ২ থেকে ৫ পাউন্ডের মধ্য ভাড়া সীমিত থাকতো। একই জাহাজে ভ্রমণকারী যাত্রিরা জাহাজে ওঠে আলাপ আলোচনা প্রসঙ্গে ভাড়ার রকমফের দেখতে পেত কিন্তু প্রতিবাদ করার বা প্রতিকারের কোন উপায় ছিল না। ক্যাপ্টেন ও তার সহকর্মীদের কথার উপরে কিছু বলার ক্ষমতা যাত্রীদের ছিল না । বাষ্পচালিত জাহাজ চলাচল করা শুরু হলে যাত্রী সংগ্রহ এবং ভাড়া নির্ধারণ এসব বিষয় চলে যায় দালালদের হাতে তবে জাহাজ সমুদ্রে ভাসমান হয়ে গেলে ক্যাপ্টেন ও তার অনুচরেরা সুযোগ সুবিধা কমবেশি করার অজুহাত দেখিয়ে ভাড়া নিয়ে হরদম দরকষাকষি করত। শিশু, বয়স্ক যাত্রী, গর্ভবতী মহিলা এরা সাথে থাকলে পানি, খাবারের পরিমাণ, শোয়ার স্থান, এসব নিয়ে নিত্যই বাহাস হত এবং তা ভাড়া ও রেশন পাওয়ার ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলত। যাত্রা শুরু করার পূর্বেও সমস্যা হতো। ব্রোকাররা মাত্রারিক্ত সংখ্যায় টিকেট ইস্যু করত। জাহাজে যারা সময় মত স্থান করে নিতে অপারগ হতো তাদের টিকেটের মূল্য ফেরত পেতে সীমাহীন দুর্ভোগের সম্মুখীণ হতে হতো। আইরিশদের বেশীর ভাগ এদেশে খুবই কম খরচে আসার একটি উপায় পেয়ে যায়। কানাডিয়ান বিশেষ ধরনের জাহাজ আমেরিকার উন্নত মানের কাঠ বা টিম্বার বোঝাই করে ইংল্যান্ডে আসত। ফেরার পথে তেমন কোন কিছুই থাকত না বিধায় আইরিশরা স্বপ্নের দেশে অভিগমণের জন্য এ ধরনের জাহাজ বেঁছে নেয়। জনপ্রতি মাত্র ১০-২০ শিলিং দিয়ে চরম কষ্ট করে তারা জাহাজের সবচেয়ে নীচের পাটাতনে ৪০-৫০ দিন কাটিয়ে আমেরিকা পৌঁছত। থাকার জন্য কাঠের শক্ত পাটাতন এর নিত্য খাবার হিসেবে লবণাক্ত হেরিং মাছ খেয়ে এরা সুস্বাস্থ্যে আমেরিকা পোঁছে যেত।
আমেরিকায় কলোনি স্থাপনের প্রথম প্রচেষ্টা নেন ব্রিটেনের রানি এলিজাবেথ। ১৫৮৭ সালে স্থায়ী কলোনি স্থাপনের জন্য নর্থ ক্যারোলিনা’কে বেছে নেয়া হয়েছিল। ইউরোপিয়ানদের মধ্যে স্প্যানিশরা ইতোপূর্বেই আমেরিকায় ঘাঁটি স্থাপন করার অনেক পরেব্রিটিশদের টনক নড়ে। ২০২০ সালের ইউএস আদমশুমারি দেখলে ইউরোপ থেকে আসা আভিগমণকারীদের সংখ্যা এবং মূলত কোন কোন দেশ থেকে এসেছে তার একটা ধারণা পাওয়া যায়। ষোড়শ শতাব্দী থেকে শুরু করে ২০২০ সাল অব্দি ৪৬.৫ মিলিয়ন ইংলিশ আমেরিকান, ৪৫ মিলিয়ন জার্মান আমেরিকান, ৩৮.৬ মিলিয়ন আইরিশ আমেরিকান, ১৬.৮ ইতালিয়ান আমেরিকা এবং ১১ মিলিয়ন পোলিশ আমেরিকান এদেশে স্থ্যিভাবে আস্তানা গেড়েছে । এরা সবাই শ্বেতাঙ্গ আমেরিকান হিসেবে মূল জাতিগোষ্ঠী। ২০২০ এর সেন্সাস অনুযায়ী ২০১৭ সালে আমেরিকার মোট জনসংখ্যার ৪১% ছিল শ্বেতাঙ্গ যারা ইউরোপিয়ান ডায়াসপরা (European-diaspora) Americans)হিসেবে নিজেদের পরিচয় দেন । তবে, ২০২০ সালে আমেরিকার বা ২৯৪.৩ মিলিয়ন বা জনসংখ্যার ৬১.৬% নিজেদের পরিচয় শ্বেতাঙ্গ হিসেবে দিয়েছেন । (চলবে)
Posted ২:১৮ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৩
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh