ড. আশরাফ উদ্দিন আহমেদ | শুক্রবার, ০৫ জানুয়ারি ২০২৪
(শেষাংশ) : ২০১৯ সালে আমেরিকায় অভিবাসী সংখ্যা ছিল ৫০,৬৬১,১৪৯। হিসেব করলে দেখা যায় যে, এ সংখ্যা ছিল সারা দুনিয়াব্যাপী ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ২৪৪ মিলিয়ন অভিবাসীর মধ্যে ১৯ শতাংশের ও কিছু বেশী । যুক্তরাষ্ট্রের মোট জনসংখ্যার ১৪.৪% লোকই বৈধ অভিবাসী। ২০১৮ সালে অভিবাসী এবং যুক্তরাষ্ট্রে তাদের গর্ভজাত সন্তান সন্ততি মিলিয়ে সংখ্যা ছিল ৯০ মিলিয়ন। দেশটির সমগ্র জনসংখ্যার তা ছিল ২৮%।
অভিবাসীদের ক্যাটাগরি সম্বন্ধে ধারনা নেয়ার জন্য উইকিপিডিয়া সাহায্য নিয়ে ২০১৬ সালের উদাহরণ দেয়া যায়। ইমিগ্রেশন ইয়ারবুক শুমারি (Yearbook of Immigration Statistics) অনুযায়ী: ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্র মোট ১.১৮ মিলিয়ন বৈধ অভিবাসীকে এ দেশে আসার জন্য অনুমতি দিয়েছে। এর মধ্যে নতুন আগমনকারী ছয় লক্ষ আশি হাজার এবং পাঁচ লক্ষ পঁয়ষট্টি হাজার হল যাদের স্ট্যাটাস অ্যাডজাস্টমেন্ট হয়েছে।
এদের মধ্যে আমেরিকান নাগরিকদের ঘনিষ্ঠ আত্মীয় স্বজন, ২০% ফ্যামিলি স্পন্সর করেছে এমন, ১৩% রিফুজি অথবা রাজনতিক কারণে আশ্রয় প্রাথী (asylum seekers),এমপ্লয়মেন্ট বেজড আগ্রাধিকার কারণে ১২% , ৪.২% ডাইভারসিটি ভিসা প্রোগ্রামে, অপরাধের শিকার হয়েছে এমন হার ১.৪% এবং ইরাকি ও আফগানিদের জন্য নির্দিষ্ট ১% ভিসা প্রদান জনিত কারণে। বাকি শূন্য দশমিক চার শতাংশ লোকদের অন্যান্য বিভিন্ন কারণে অভিবাসন ভিসা দেওয়া হয়েছিল। শেষোক্ত ক্যাটেগরিতে নিকারুগুয়ান এবং সেন্ট্রাল আমেরিকান রিলিফ অ্যাক্টের আওতাধীন কিছু লোক, সোভিয়েত ইউনিয়ন, কম্বোডিয়া, লাওস, এবং ভিয়েতনামের স্বল্প সংখ্যক রিফুজি স্ট্যাটাস পায়নি এমন কিছু সংখ্যক লোক ও অন্তর্ভুক্ত ছিল।
২৩১৭ সাল অব্দি আমেরিকায় ৪০ মিলিয়ন অভিবাসী ছিল। অবৈধ ইমিগ্রেন্টদেড় সংখ্যা প্রায় ১১.৭ মিলিয়ন ছিল। ২০২৩ এ আশংকা অনেক বেড়ে গেছে। এক হিসেবে মেক্সিকো সীমান্ত দিয়ে গত কয়েক দিন যাবত প্রতিদিন নয় হাজারেরও বেশী লোক অবৈধ ভাবে আমেরিয়ায় প্রবেশ করছে। বর্তমান সময়ে ৪৫ মিলিয়নেরও অধিক সংখ্যক লোক অভিবাসী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছে। ২০২১ সালের হিসেবে দেখা যায় দেশটির মোট জনসংখ্যার ১৩.৬ শতাংশ অধিবাসীই অভিবাসী। তবে,সর্বোচ্চ রেকর্ড ছিল ১৮৯০ সালে যখন এ হার ছিল ১৪.৮%।
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ৫৮,৮৪৬,১৩৪ সংখ্যক আধিবাসী হিস্পানিক এবং ল্যাটিন আমেরিকান যার ৬৫.১ শতাংশই স্প্যানিশ বংশোদ্ভূত। ২০১৭ সালের এক পরিসংখ্যানে পরিলক্ষিত হয় যে আমেরিকায় অবস্থানরত বিদেশে জন্মগ্রহণকারী জনসংখ্যা দেশটির মোট জনসংখ্যার প্রায় ৪৫% বা ২০.৭ মিলিয়ন। ন্যাচারালাইজড নাগরিক মোট জনসংখ্যার ২৭ শতাংশ বা ১২.৩ মিলিয়ন। বৈধ পার্মানেন্ট রেসিডেন্ট ক্যাটেগরি অন্তর্ভুক্ত ৬% বা ২.২ মিলিয়ন মানুষ এবং ২৩% বা ১০.৫ মিলিয়ন আইনানুগভাবে অস্থায়ী রেসিডেন্ট (temporarylawful residents) এবং ২৩% বা ১০.৫ মিলিয়ন অবৈধ ভাবে এ দেশে বসবাস করছে ।
আমেরিকার দক্ষিণ সীমান্ত, বিশেষত মেক্সিকো থেকে ২০২২ সাল থেকে অবৈধ অভিবাসীদের যে প্রবাহ তা নিউইয়র্ক, শিকাগো এবং ডেনভার এ তিনটি নগরীর জন্য বড় ধরনের সমস্যা সৃষ্টি করেছে। নিউইয়র্ক নগরীর মেয়র এরিক অ্যাডামস যে চিত্র তুলে ধরেছেন তা থেকে দেখা যায় ২০২২ সাল থেকে এ সমস্যা শুরু হলে মেয়রের লোকজন প্রতি সপ্তাহে প্রায় ৪০০০ বা তার বেশি সংখ্যক মাইগ্রেন্ট গ্রহণ করতে বাধ্য হচ্ছে। টেক্সাস এবং ফ্লোরিডার জাঁদরেল গভর্নরদ্বয় চার্টার করা বাস বা প্লেনে করে এদের পাঠিয়ে দিচ্ছেন। প্রায় ২ বছর পূর্বে সমস্যা শুরু থেকে বর্তমান অব্দি নগরীতে ১৬১,০০০ মাইগ্রেন্ট প্রবেশ করেছে বলে জানা গেছে। ডেমোক্রেট সরকার ঘোষিত নিরাপদ আশ্রয়দান কারী নগরীগুলো এ দুঃসহ জালাতন সহ্য করতে বাধ্য হচ্ছে মানবিক এবং আদর্শিক কারণে।
বর্তমানে ৬৮,০০০ জন অভিবাসী নিউইয়র্ক সিটির তত্ত্বাবধানে আছে এবং বাকিদের মেয়র দপ্তরের ব্যবস্থাপনা এবং খরচে বিভিন্ন স্থানে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার আইনসংগত ভাবে কিছুই করতে পারছে না । টেক্সাস এবং ফ্লোরিডা এ দু ষ্টেটের গভর্নর দুজনের কারণে সৃষ্ট এ সমস্যা বর্তমান সরকারের আমলে শেষ হওয়ার কোন সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছেনা তবে বাইডেন প্রশাসন জোরেশোরে মেক্সিকো সরকারকে সহযোগী হিসেবে নিয়ে অবৈধ ইমিগ্রেন্টদের বাঁধ ভাঙ্গা বানের জলের মত আসা এ প্রবাহ আটকাতে চেষ্টা করছে। তবে, নিকারাগুয়া সরকারের অতি উদার ভিসা ব্যবস্থা বজায় থাকলে যুক্তরাষ্ট্রের বেশ নিকটবর্তী দেশ হওয়ার সুবাদে অনুপ্রবেশ অনেক সহজ। সে দেশটির রাষ্ট্রপতি ড্যানিয়েল ওরতেগা যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি বন্ধু ভাবাপন্ন ছিলেন না কোন সময়েই।
দেশটির উদার ভিসা প্রদান নীতিমালার সুযোগ নিয়ে অনেক দেশের লোকজন অহরহ আমেরিকা প্রবেশ করছে এমন ধারনা অনেকে পোষণ করে। লাতিন আমেরিকা এবং সেন্ট্রাল আমেরিকান দেশগুলোর দারিদ্রের হার বাড়তে থাকলে এবং নিকারুগুয়া দিয়ে করিডোর সুবিধা এবং দালালদের এ সংক্রান্ত ব্যবসা অব্যাহত থাকলে বাইডেন প্রশাসন সীমান্ত সুরক্ষা করতে পারবে বলে মনে হয়না। প্রসঙ্গত ২০২১ সালে কিউবান ক্রাইসিস এর সুযোগ নিয়ে ও কট্টর কম্যুনিস্ট ওরতেগা এহেন কর্ম করেছিলেন। হেইতির লোকজনও নিকারুয়াগুয়া প্রদর্শিত রাস্তা অনুসরণ করে দেদারসে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করছে। বাইডেন প্রশাসন ওরতেগাকে পাশ কাটিয়ে মেক্সিকোকে সাথে নিয়ে যে বিকল্প ব্যবস্থার চেষ্টা করছে তা কতোটা ফলপ্রসূ হবে তা প্রশ্ন সাপেক্ষ।
Posted ১১:৫৮ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ০৫ জানুয়ারি ২০২৪
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh