ড. আশরাফ উদ্দিন আহমেদ | বৃহস্পতিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৩
(দ্বিতীয় অংশ) : ২০২৩ তে অনুষ্ঠিত ইলেকশনের ফলাফল প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মনোমত হয়নি। কারণ হিসেবে তিনি যে সব যুক্তি দেখাচ্ছেন তা নেহায়েতই অযৌক্তিক এবং প্রলাপ বলেই মনে হয়। তাঁর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে অনুসরণ করেন তারা কেন্টাকি অঙ্গরাজ্যের গভর্নর পদে স্টেটটির রিপালিকান এটর্নি জেনেরাল ড্যানিয়েল ক্যামেরনের স্বপক্ষে কি দৃঢ় বিশ্বাস ও প্রতীতি নিয়ে কথা বলেছেন তা নিশ্চয় খেয়াল করেছেন। ড্যানিয়েল ক্যামেরন ট্র্যাম্পের দারুণ পছন্দের প্রার্থী ছিলেন এতে কারুরই সন্দেহ থাকার কারণ নেই। কিন্তু তিনি শোচনীয় ভাবে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির এন্ডি বেসারের কাছে পরাজিত হন। বেসার গভর্নর পদে সহজেই পুনঃনির্বাচিত হয়েছেন। ট্রাম্প নির্বাচন পরবর্তী সময়ে বলছেন তিনি নাকি ড্যানিয়েল ক্যেমেরনকে ২৫ পয়েন্ট এ এগিয়ে দিয়েছিলেন কিন্তু প্রাতঃই এবং তার দল তা ধরে রাখতে পারেনি। এছাড়া ও তিনি নানা অজুহাত তুলে ধরেছেন যা নিতান্তই অবাস্থব। তার মনোনীত প্রার্থী কেন হারলেন তার আর কারণ হিসেবে ট্রাম্প সিনেটের এবং সম্মানিত মাইনরিটি লিডার মিচ মেককনেলের (Mitch McConnel) প্রেতপ্রভাবের কথা উল্লেখ করেছেন। সিনেটর রমনিকেও (Senator Mitt Romney) টেনে এনেছেন এ দুর্বিপাকের আরেকজন হোতা হিসেবে। অথচ, প্রথমক্তোজন মাত্র কয়েক বছর পূর্বে ২০ পয়েন্ট এর ব্যবধানে অঙ্গরাজ্যটি থেকে সিনেট প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছিলেন। গাঢ় রক্তলাল কেন্টাকি স্টেটে ট্রাম্প ২০২০ সালে অনুষ্ঠিত ইলেকশনে বেশ বড় ব্যবধানে জিতেছিলেন। অনেক মনে করছেন যে প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট অভ্যেস বশত ২০২৩ নির্বাচনে বড় ধরনের কারচুপি হয়েছে এ কথা বলে বেড়াচ্ছেন। ডেমোক্র্যাটিক পার্টি ভোট কারচুপি করে অন্যায় ভাবে জিতেছে বলে নির্বাচনটি প্রশ্নবিদ্ধ করতে চাইছেন। প্রশ্ন থেকে যায়, কেন্টাকি ছাড়া ও ওহাইয়ো এবং ভার্জিনিয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ স্টেটগুলোতে ডেমোক্র্যাটিক পার্টি জিতল কেমন করে? নিউ জার্সি এবং পেনসালভানিয়া- এ দুটো স্টেটে ও ডেমোক্র্যাট দল ভাল করেছে।
২০২৩ নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট দলে আশাতীত সফলতার পেছনে নিঃসন্দেহে গর্ভপাত অধিকারের বিষয়টি কাজ করেছে। উল্লেখ্য করা যেতে পারে যে আনুমানিক দুই-তৃতীয়াংশ আমেরিকান সুপ্রিম কোর্ট ২০২২ সালে রো বনাম ওয়েড (Roe v. Wade) মামলার সিদ্ধান্ত নাকচ করে দিলে দারুণ অসন্তুষ্ট হয়। ২০৭৩ সালে এ মামলায় জেতার ফলে যুক্তরাষ্ট্রের গঠনতন্ত্রে গর্ভপাতের অধিকারের যে নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছিল তা ২০২২ সালে বাতিল করার সিদ্ধান্তটি রিপাবলিকান দলের জন্য কল্যাণ বয়ে আনেনি। ডেমোক্র্যাটিক পার্টি এ থেকে ফায়দা নিয়েছে এবং ২০২৪ নির্বাচনে এ ইস্যুটি কেন্দ্র করে প্রচুর সুবিধা পাবে। তবে, ইস্রায়েল-হামাস যুদ্ধ মধ্যপ্রাচ্যসহ প্রায় মুসলিম বিশ্বে যে অসন্তোষ সৃষ্টি করেছে তার প্রতিফলন ২০২৪ নির্বাচনে পড়বে, বিশেষত মিসিগানের মত অঙ্গরাজ্যে। আরব মুসলিমদের ভোট বাইডেনের না পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। ট্রাম্প ইতোমধ্যে অবৈধ ইমিগ্রেন্ট নিয়ে যে বক্তব্য রেখে জাসছেন তা তাঁকে বেকায়দায় ফেলবে। ট্রাম্পের অভিবাসন নিয়ে কথাবার্তা, পূর্বেকার মত কয়েকটি মুসলিম দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আসার ব্যপারে নিষেধজ্ঞা বা ভিসা প্রদান অতিশয় কঠিন করার ইচ্ছা এবং অবৈধ ইমিগ্রেন্টদের অন্তরীনাবদ্ধ করে রাখার ব্যক্ত অভিপ্রায় ল্যাটিন আমেরিকা এবং মুসলমান দেশগুলোতে বিরূপ প্রতিক্রিয়া ফেলবে। এ বৃহৎ সম্প্রদায়ের এ দেশে থাকা লকজন বাইডেন প্রার্থী হলে ভোট দিতে দ্বিধায় ভুগবে নিশ্চিত।
প্রেসিডেন্ট বাইডেন নির্বাচন অনুষ্ঠানের পূর্বেই তার ইসরায়েল নীতি পরিচ্ছন্ন না করতে পারলে বেশ বেকায়দার পরবেন। এমনিতেই কৃষ্ণাঙ্গ ও ল্যাটিনো ভোটারা বেশ কিছুটা নাখোশ তার প্রতি। মেক্সিকো সীমান্ত নিয়ে যে জন অসন্তোষ তার ফায়দা নেবে রিপাবলিকান দল। এমনিতেই তার বয়সের বিষয় নিয়ে ভোটাররা শঙ্কিত, তার উপর ইস্রায়েল-হামাস, রাশিয়া-ইউক্রেন, চিন-তাইওয়ান ইত্যাদি আন্তর্জাতিক ইস্যু নিয়ে তাঁকে নানান ধরনের সমালোচনার সম্মুখীন হতে হচ্ছে এবং হিমশিম খেতে হচ্ছে। অভ্যন্তরীণ সন্ত্রাসবাদ সাংঘাতিকভাবে বেড়ে গেছে। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি এবং বিভিন্ন ধরনের অর্থনৈতিক সমস্যা সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার মান মারাত্মকভাবে নিন্মমুখি করে তুলছে বিগত কয়েক বছর ধরেই। সব মিলিয়ে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সময়টা ভাল যাচ্ছে না। তার জনপ্রিয়তা লক্ষণীয়ভাবে ৪০ শতাংশে নেমে এসেছে। (চলবে)
Posted ১২:২৪ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৩
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh