ড. আশরাফ উদ্দিন আহমেদ | বৃহস্পতিবার, ০১ অক্টোবর ২০২০
(তৃতীয় অংশ) : প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাঁর কথা রেখেছেন। ইতোমধ্যে সুপ্রিম কোর্টে বিচারক রুথ ব্যাডের গিন্সবার্গ মৃত্যুর কারণে সৃষ্ট হওয়া শূন্য আসনে এমি কনি ব্যারেট (Amy Coney Barrett) কে মনোনয়নের ঘোষণা দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। অবস্থাদৃষ্টে নিশ্চিতভাবে বলা যায় সিনেটে এ মনোনয়ন অনায়াসে অনুমোদিত হবে। সিনেটের সংখ্যা গরিষ্ঠ রিপাব্লিকান দলের নেতা, একসময়ের ডেমোক্রেট মিচ ম্যাককনেল (Mitch McConnell) নিশ্চয়তা দিয়েছেন যে সিনেটে বিষয়টি আসলেই অনুমোদন প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা হবে। তবে, অক্টোবরের ১২ তারিখে সিনেট জুডিসিয়ারী কমিটির প্রায় চারদিন ব্যাপী স্থায়ী হতে পারে এমন শুনানি শুরুর পূর্বে বেশ কিছু আনুষ্ঠানিকতা, যেমন ফেডারেল ব্যুরো কতৃক অনুসন্ধান, বহিরাগত সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণ ইত্যাদি সম্পন্ন করার পর অনেক দীর্ঘ জেরা প্রক্রিয়া চলে যা প্রচুর সময় সাপেক্ষ। এমনতরো ক্ষেত্রে ২০২০ এর নভেম্বর ৩ তারিখের পূর্বেই এমি কনি ব্যারেটকে সুপ্রিম কোর্টে যোগদান করতে হলে প্রচুর তাড়াহুড়ো কোর্টে হবে। তবে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যে করেই হোক নভেম্বর মাসের ৩ তারিখের পূর্বেই ব্যারেটকে সুপ্রিম কোর্টে পাঠাবেনই। যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আদালতে ৬-৩ সংখ্যাগরিষ্ঠতা তাঁর এ সময়ে বড়ো প্রয়োজন, হারলে বা জিতলেও।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অনেকবারই ঘোষণা করেছেন যে তিনি হারলে একমাত্র কারণ হবে ভোটে ডেমোক্রেটদের কারচুপি। এ ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্ট হবে তাঁর নিশ্চিত সহায়ক কারণ সংখ্যা গরিষ্ঠের জোরে নির্বাচনের ফলাফল উল্টে দেয়ার কায়দাকানুন বের করা তেমন কঠিন হবে না, এমনকি নির্বাচন বাতিল ঘোষণা ও করা সম্ভব। পুনরায় ক্ষমতা কুক্ষিগত করার জন্য ট্রাম্প যে কোন কৌটলীয় কুট কৌশল প্রয়োগ করতে মোটেও দ্বিধা করবেন না।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও রিপাবলিকানদের জন্য ওবামাকেয়ার বা এফোরডেবলকেয়ার অ্যাক্ট নাকচ করার এ মোক্ষম সুযোগ হাতছাড়া করা যাবে না। ২০ মিলিয়ন জনসাধারণ যে হেলথ ইনসিওরেন্স হারাবে তাতে এদের কিছু যায় এসে না। ইনসিওরেন্স শিল্প ব্যক্তিগত খাতে নিয়ে আসতে পারলে মুনাফা বাণিজ্যের যে রমরমা অবস্থা হবে সে সুখচিন্তার বাইরে পুঁজিবাদের অনুসারীদের সাধারণ মানুষজনদের ভালমন্দ নিয়ে চিন্তা মানে সময় নষ্ট, প্রয়োজনের দিক থেকে খুবই গৌণ। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আর্থিক লাভ ছাড়া আর কিছু তেমন বিবেচনায় আনতে নারাজ। ২০১৬ নির্বাচনী প্রতিজ্ঞা তাঁর পূরণ হবে এ তাঁর জন্য এক ধরনের মানসিক জয় কারণ এ ক্ষেত্রে প্রতিপক্ষ জনপ্রিয় প্রেসিডেন্ট ওবামা। আরও আছে আর্থিক লাভের সম্ভাবনার উজ্জল হাতছানি। নিউ ইয়র্ক টাইমসকে বিশ্বাস করতে হলে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আর্থিক অবস্থা খুবই নাজুক। আকণ্ঠ দেনায় ডুবে আছেন। তাঁর ব্যক্তিগত অর্থ ব্যবস্থাপনায় চরম অব্যবস্থা, সীমাহীন দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি এবং অনিয়ম তাঁকে যে পর্যায়ে নিয়ে গেছে তাতে একমাত্র পক্ষপাতদুষ্ট আইনি সাহায্যই উদ্ধার করতে পারবে বলে অনেক মহলই মনে করেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দেনার পরিমাণ নাকি ৪২১ মিলিয়ন ডলারস যার বেশিরভাগই আগামী চার বছরের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে। এক্ষেত্রে ও কোর্টের/ফেডারেল জুডিসিয়ারির শরণাপন্ন তাঁকে হতে হবে হয়তো। সিনেটে সংখ্যা গরিষ্ঠ দলের নেতা হিসেবে ম্যাককনেল ইতোমধ্যেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প মনোনীত দু’জন কনজারভেটিভ প্রার্থীকে সুপ্রিম কোর্টে অধিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছেন। জাস্টিস ব্রেট কাভানু (Justice Brett Kavanaugh) যে অবস্থার মধ্য দিয়ে অনুমোদন পেয়েছেন এমি ব্যারেটের ক্ষেত্রে তা আরও কঠিন হবে বলে অনেক মহল মনে করছে। তবে, ম্যাককনেল আদাজল খেয়ে মনোনয়ন অনুমোদন করিয়ে নেবেনই বলে ঘোষণা করেছেন কারণ এর মধ্য দিয়ে সুপ্রিম কোর্টে আগামী কয়েক যুগের জন্য কনজারভেটিভদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হবে।
সর্বশেষ জনমত জরিপ অনুযায়ী (ওয়াশিংটন পোস্ট -এবিসি জরিপ) ৫৭% মনে করেন সুপ্রিম কোর্টে নমিনেশন বিষয়টি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পরে সুরাহা করা হোক। এর বিপরীতে ৩৮%র অভিমত হলো ব্যাপারটির সুরাহা এখনই হতে হবে। নির্বাচনের আগেই যাতে নভেম্বরের ৩ তারিখ ব্যারেট কোর্টে আসন গ্রহণ করতে পারেন। ওবামাকেয়ার/এফোরডেবল কেয়ার অ্যাক্ট নিয়ে একটি বিচারাধীন কেস হাইকোর্টে ফল সেশনের জন্য প্রক্রিয়াধীন আছে। এটির সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত ব্যারেটের সুপ্রিম কোর্টে আসন গ্রহণ রীতিসিদ্ধ হবে না বলে বলছেন ডেমোক্রেটরা। কারণ তারা সকলেই কেসটির বিরোধিতা করেছেন। কভিড-১৯ প্যান্ডেমিকে ২ লক্ষের ও বেশি লোক মৃত্যুবরনের প্রেক্ষাপটে তাঁকে সুপ্রিম কোর্টে দেয়া মানে অন্যূন ২০ মিলিয়নের ও অধিক লোকের স্বাস্থ্য সেবায় ছেদ পরা। এ বিরাট সংখ্যক জনগণের স্বাস্থ্য সেবা বিঘ্নিত হতে পারে এমন পদক্ষেপ কিছুতেই গ্রহণীয় হতে পারেনা। (চলবে)
Posted ৩:৫৮ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০১ অক্টোবর ২০২০
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh